মৎস
ইংরেজি
: fish।
বাংলায় সাধারণভাবে মাছ শব্দ ব্যবহার করা হয়। বাঙালি প্রিয় আমিষ জাতীয় খাদ্য।
মৎস মেরুদণ্ডী প্রাণীর একটি শ্রেণি। এই শ্রেণির সকল প্রাণী পানিতে বসবাস করে। জলাশয়ের তলদেশ খনন করতে পারে এমন কোন বিশেষ প্রত্যঙ্গ (হাত বা পায়ের মতো) নেই। অধিকাংশ মাছের রক্ত শীতল। এরা ফুলকার সাহায্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে এবং দেহ আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। হাঙর বা টুনা মাছের মতো সার্বক্ষণিক সাঁতারু মাছের রক্ত উষ্ণ হয়।
দৈহিক গঠন :
মাছের দেহকাণ্ডকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই ভাগ দুটি হলো মাথা ও
দেহকাণ্ড।
মাথা
: মাছের অগ্রভাগে থাকে মুখ এবং
উপরের দিকে বা পার্শ্ব বরাবর দুটি পত্রবিহীন চোখ থাকে। শ্বাস গ্রহণের জন্য
চোয়ালের প্রান্তভাগ জুড়ে থাকে ফুলকা। মাছের উর্ধ্ব চোয়ালের অগ্রঅস্থিকে বলা হয়
প্রিম্যাক্সিলা (Premaxillae),
পশ্চাৎ অস্থিকে বলে ম্যাক্সিলা
(Maxillae) এবং নিম্ন চোয়ালকে
ম্যান্ডিবল (Mandible)
বলে।
―
শীর্ষমুখ
(Terminal Openning)
: কিছু মাছের মুখছিদ্র সোজা এবং থুতনি
সামনের দিকে অভিক্ষিপ্ত অবস্থায় থাকে। এই জাতীয় মুখকে বলা হয়
শীর্ষমুখ।
দেহকাণ্ড : মাছের
দৈহিক আকার হতে পারে―
চাপা, প্রলম্বিত, গোলাকার পেট বিশিষ্ট, চ্যাপ্টা, সর্পাকার ইত্যাদি। পার্চ
(Perch)
এবং বাস (Bass)
মাছের দেহ দেখতে চাপা এবং উভয় পার্শ্ব সমতল। অপরদিকে কিন্তু কার্প
(carp)
জাতীয় মাছের দেহ প্রলম্বিত এবং সাধারণত এদের গোলাকার পেটযুক্ত। কিছু মাছ রয়েছে
চ্যাপ্টা। যেমন চিতল। সর্পাকার মাছের মতো রয়েছে বাইন মাছ।
আঁইশ : মাছের দেহ আঁইশ নামক একটি উপাদান দ্বারা আবৃত থেকে। আঁইশের প্রকৃতি
অনুসারে এদেররকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন―
টিনয়েড
(ctenoid)
: অস্থিযুক্ত মাছের
পশ্চাৎভাগের কিনারা বরাবার চিরুনি বা করাতের দাঁতযুক্ত শক্ত, নূড়ির মতো আঁইশ
রয়েছে। একে বলা হয় টিনয়েড
আঁইশ বলে।
যেমন―
যেমন পার্চ
(Perch),
বাসেস (Basses)
ইত্যাদি।
সাইক্লয়েড (Cycloid) : মসৃণ কিনারাযুক্ত গোলাকার আঁইশ এবং একে সাইক্লয়েড আঁইশ বলে। যেমন― কার্প (Carp, বার্ব (Barb) মিনো (Minnow) ।
গ্যানোইড (Ganoid) : শক্ত ও প্রায় অস্থিময় আঁইশগুলো এবং একটি অপরটির বিপরীতে সেঁটে থাকে যে, দেখতে দেয়ালের ইটের মতো দেখায়। এই আঁইশগুলোকে গ্যানোইড আঁইশ বলে। যেমন যেমন গার (Gars)
প্ল্যাকয়েড (Plocoid) : এই জাতীয় আঁইশ একটা শক্ত ভিত্তি দিয়ে গঠিত যা কাসপ (Cusp) সদৃশ কণ্টক দিয়ে ত্বকে গাঁথা থাকে। হাঙ্গর মাছের গায়ে এই আঁইশ দেখা যায়।
কিছু মাছ আছে যাদের কোন আঁইশ নেই, যেমন― ক্যাটফিস (Catfishes)। বাইনন জাতীয় মাছের অধিকাংশ আঁইশই পৃথক এবং তা ত্বকের গভীরে প্রোথিত থাকে।
মাছের পাখনা (
fin):
মাছের পিঠে, পেটের নিচের দিকে দেহকাণ্ডের
উপরের দিকের নিচের অংশে পাখার মতো যে অংশ থাকে, তাকে পাখনা বলা হয়। পাখনা
দ্বারা মাছ চলাচল করে এবং পানিতে দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রজাতি ভেদে
পাখনার আকার বা গঠন নানা রকমের হয়ে থাকে। মাছের দেহকাণ্ডে পাখনার অবস্থান
অনুসারে যে সকল ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলো হলো―
দৈহিক গঠনের বিচারে মাছকে প্রাথমিকভাবে ৫টি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়ে থাকে। এর ভিতরে প্রতিটি শ্রেণি আবার দুটি করে উপশ্রেণিতে বিভক্ত। বাকি দুটি শ্রেণির কোনো উপবিভাগ নেই। নিচের এর শ্রেণি এবং উপশ্রেণিগুলোর তালিকা দেওয়া হলো।
শ্রেণি : অগ্নথা (Agnatha) চোয়ালবিহীন মাছ | |
উপশ্রেণি :
সাইক্লোস্টোমাটা (Cyclostomata) অস্ট্রাকোডেরমি (Ostracodermi ) |
|
শ্রেণি : কণ্ড্রিক্থিস্ (Chondrichthyes)। চোয়ালযুক্ত তরুণাস্থিযুক্ত মাছ। | |
উপশ্রেণি : এলাস্মোব্রাঙ্কি (Elasmobranchii)। | |
হোলোসেফালি (Holocephali ) | |
শ্রেণি : প্লাকোডের্মি (Placodermi)। বর্মযুক্ত মাছ | |
শ্রেণি : এ্যাকান্থোডি (Acanthodii)। কণ্টকযুক্ত হাঙর জাতীয় মাছ। | |
শ্রেণি : অস্টিক্থিস্ (Osteichthyes)। অস্থিযুক্ত মাছ। | |
উপশ্রেণি : এক্টিনোপ্টেরাইগি (Actinopterygii)। | |
সার্কোপ্টেরাইগি (Sarcopterygii)। |
তবে উপরের এই শ্রেণিবিভাজনকে অনেক বিজ্ঞানী
যথাযথ মনে করেন না। সকল প্রকার মাছকে যথাযথভাবে শ্রেণীকরণের ক্ষেত্রে শ্রেণিগত
সংখ্যাকে কেউ কেউ বর্ধিত তালিকায় প্রকাশ করেছেন।
মাছের খাদ্য তালিকায় নানাবিধ উপকরণ রয়েছে। প্রজাতিভেদে এই খাদ্য-উপকরণ একরকম নয়।
এরা জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী, মাটি, স্থলজ প্রাণী আহার করে। অজস্র মাছ অন্যের খাদ্যে
পরিণত হয়। বড় মাছগুলো নির্বিবাদে ছোটো মাছ আহার করে। ডাঙার স্তন্যপায়ী, আকাশচারী
পক্ষী, সকল প্রকার সরীসৃপ মাছ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ। মাছ মানুষের খাদ্য তালিকায়
অন্যতম আমিষ হিসাবে বিবেচিত হয়।