রক্তের গ্রুপ   [দেখুন : রক্ত (মানবদেহ)]

প্রতিটি জীবিত মানুষ জন্মগত সূত্রে শরীরে রক্ত নিয়ে জন্মায়। কিন্তু প্রতিটি মানুষের শরীরের ধরন সর্বার্থে এক হয় না। বিজ্ঞানীরা রক্তের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের বিচারে রক্তকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। রক্তের এই শ্রেণিবিন্যাসকে ব্লাড গ্রুপ (Blood Group) বলা হয়। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার প্রথম মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করেন। এই শ্রেণীবিন্যাসকে সংক্ষেপে ABO ব্লাড গ্রুপ বা সংক্ষেপে ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।

রক্তের লোহিত কণিকার প্লাজমা মেমব্রেনে এ্যান্টিজেনের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে রক্তের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়ে থাকে। এই এ্যান্টিজোন হতে পারে- প্রোটিন, শর্করা, গ্লাকোপ্রোটিন বা গ্লাকোলিপিড। বিষয়টি নির্ভর করে রক্তের গ্রুপের উপর। এ্যান্টিজোন রক্তের লোহিত কণিকার উপরিতলে বা কোনো বিশেষ কলার কোষসমূহের উপর। রক্তের লোহিত কণিকার উপরিতলে ৩০ সেট উপাদান থাকতে পারে। এই ৩০ সেট উপাদানের বিচারে ৩০টি রক্তের গ্রুপ হতে পারে। আর এই গ্রুপগুলোতে থাকতে পারে ৬০০ রকমের এ্যান্টিজোন (blood-group antigens)। রক্তের এই প্রকৃতি অনুসারে বা তারতম্যের বিচারে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সুবিধা অসুবিধা ভোগ করে থাকে। 

রক্তের গ্রুপ বিচারের ক্ষেত্রে এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজোন বিশেষ ভূমিকা রাখে।

  এ্যান্টিজেন (antigen) :  সাধারণত রক্তের লোহিত কণিকার প্লাজমা মেমব্রেনে দেখা যায়। কখনো কখনো কোনো বিশেষ কলার কোষসমূহের উপর এ্যান্টিজোন থাকতে পারে। মানুষের রক্তে দুই ধরনের এ্যান্টিজেন দেখা যায়। এগুলো হল, anti-A anti-B A B এ্যান্টিজেনের মধ্যে রক্তরসের কতকগুলো স্বতঃস্ফূর্ত এ্যান্টিবডি রয়েছে।

এ্যান্টিবডি (antibody) :  দেহের বহিরাগত পদার্থের প্রতি সাড়া দিয়ে প্লাজমা কোষ থেকে উৎপন্ন প্রোটিনধর্মী পদার্থ যা এ্যান্টিজেনের সুনির্দিষ্ট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়তা করে। একে ইম্যুনোগ্লোবিউলিন (immunoglobulin) নামেও অভিহিত করা হয়। এর আকার ইংরেজি ওয়াই বর্ণের মতো। এটি তৈরি করে বি-কোষসমূহ।

সাধরাণভাবে এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজোনের ভিত্তিতে মানুষের রক্তকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা: 
A, B, AB O

যে নির্দিষ্ট রক্তে যে এ্যান্টিজেন নেই, শুধু সেই এ্যান্টিবডি সেখানে পাওয়া যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, A ব্লাড গ্রুপ A এ্যান্টিজেন, B ব্লাড গ্রুপে B এ্যান্টিজেন বিদ্যমান। আবার, AB ব্লাড গ্রুপে A B উভয় ধরনের এ্যান্টিজেন থাকে। O ব্লাড গ্রুপে রক্তের কণিকাঝিল্লিতে কোনো এ্যান্টিজেন নেই। তবে anti -Aanti-B দু’রকমের এ্যান্টিজেনই থাকে।

A গ্রুপের রক্তে থাকা এ্যান্টিবডি B গ্রুপের রক্তে মিশে গেলে, লোহিত রক্তকণিকা জমাট বেধে যায়। একইভাবে B গ্রুপের রক্তের এ্যান্টিবডি A গ্রুপের রক্তের লোহিত রক্তকণিকাকে জমিয়ে ফেলে। তএব, A রক্তের গ্রুপের গ্রহীতা কোনওভাবেই B রক্তের গ্রুপের দাতার রক্ত নিতে পারবে না। একইভাবে B রক্তের গ্রুপের গ্রহীতাও A রক্তের গ্রুপের দাতার রক্ত নিতে পারবে না।

আবার,
AB গ্রুপের রক্তে কোন এ্যান্টিবডি পাওয়া যায় না। অতএব, এরা অন্য গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকাকে জমিয়ে দিতে পারে না। তাই AB রক্তের গ্রুপের গ্রহীতা চারটি রক্তের গ্রুপের প্রত্যেকেরই( A, B, AB  O) রক্ত গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য এ গ্রুপের গ্রহীতাকে সার্বজনীন গ্রহীতা বলে। তবে, দাতা হিসেবে এরা নিজ গ্রুপ ব্যতীত অন্য কোন গ্রুপকে রক্ত দিতে পারবে না।

অপরদিকে,
O রক্তের গ্রুপে কোন এ্যান্টিজেন থাকে না। তাই এরা একমাত্র নিজ গ্রুপ ছাড়া অন্য সকল গ্রুপের রক্তের লোহিত রক্তকণিকাকে জমিয়ে ফেলে। তাই রক্ত গ্রহনকালে O রক্তের গ্রুপের গ্রহীতা কেবল নিজ গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে, দাতা হিসেবে এরা প্রত্যেক গ্রুপকে (A, B, AB  O) রক্ত দিতে পারে। তাই, এই গ্রুপের দাতাকে বলা হয় সার্বজনীন দাতা।

নিচের ছকে রক্ত দাতা ও গ্রহিতার সমন্বয় দেখানো হলো।

গ্রহিতা দাতা
O- O+ A− A+ B− B+ AB− AB+
O− হ্যাঁ না না না না না না না
O+ হ্যাঁ হ্যাঁ না না না না না না
A− হ্যাঁ না হ্যাঁ না না না না না
A+ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ না না না না
B− হ্যাঁ না না না হ্যাঁ না না না
B+ হ্যাঁ হ্যাঁ না না হ্যাঁ হ্যাঁ না না
AB− হ্যাঁ না হ্যাঁ না হ্যাঁ না হ্যাঁ না
AB+ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ

রক্তের প্লাজমা গ্রহণ ও প্রদানের ক্ষেত্রে এরূপ বাধ্যবাধকতা আছে। নিচের তালিকায় এই বাধ্যবাধকতা দেখানো হলো।

গ্রহিতা দাতা
O A B AB
O হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ
A না হ্যাঁ না হ্যাঁ
B না না হ্যাঁ হ্যাঁ
AB না না না হ্যাঁ