জরায়ু'র নিচের দিকে ভালভা পর্যন্ত বিস্তৃত নালী। স্বাভাবিক অবস্থায় সামনের দিকে ৬-৬.৫ সেন্টিমিটার এবং ভিতরে দিকে এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮-১০ সেন্টিমিটার। তবে যৌন উত্তেজনা, সন্তান প্রসবের সময় এর দৈর্ঘ্য প্রস্থ প্রয়োজনানুসারে বৃদ্ধি পায়। অসম্ভব একটি নমনীয় গুণের কারণে যৌনমিলনের সময় এবং সন্তান প্রসবের সময় প্রচুর পরিমাণে সম্প্রসারিত হতে পারে। দাঁড়ান অবস্থায় যোনির শেষপ্রান্ত সামনে-পেছনে জরায়ুর সাথে ৪৫ ডিগ্রীর বেশী কোণ উৎপন্ন করে।
যোনির ব্যাপ্তীর বিচারে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো-
-
অন্তস্থিত যোনি : এই অংশ বাইরে থেকে দেখা যায় না। এমনকি সজোরে প্রসারিত করলেও বাইরে থেকে এই রন্ধ্রটি স্পস্ট দৃষ্ট হয়। এর নমনীয় মাংশপেশী গায়ে গায়ে লেগে থাকে বলে, বাইরে থেকে অবরুদ্ধ পথ মনে হয়। এর উপরে অংশ জরায়ুমুখের সাথে যুক্ত থাকে। অবস্থানের বিচারে যোনি মুত্রনালীর পিছনে এবং মলদ্বারের সামনে অবস্থিত।
যোনির উপরের এক চতুর্থাংশ রেকটোউটেরিন পাউচ দ্বারা মলাধার থেকে পৃথক থাকে। যোনিদ্বারের ভিতরের অংশের রং হাল্কা গোলাপী। এর ভিতরের পুরোটাই মিউকাস ঝিল্লী দ্বারা গঠিত। যোনির অভ্যন্তরের তিন চতুর্থাংশ অঞ্চল উঁচু-নিচু ভাঁজে পরিপূর্ণ, এই ভাঁজকে রুগি (rugae) বলে।
যোনির পিচ্ছিলতা বার্থোলিনের গ্রন্থি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই গ্রন্থি যোনির প্রবেশ মুখে এবং জরায়ু-মুখের কাছে অবস্থিত। যৌনমিলনের সময় প্রয়োজনীয় পিচ্ছিলকারক তরল ক্ষরিত করার মাধ্যমে এটি লিঙ্গপ্রবেশ জ্বনিত ঘর্ষণ হ্রাসে ভূমিকা রাখে এবং একই যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। প্রতি মাসে ডিম্বক্ষরণের সময় জরায়ুমুখের মিউকাস গ্রন্থিগুলো বিভিন্ন রকম মিউকাস ক্ষরণ করে। এর ফলে যোনীয় নালিতে ক্ষারধর্মী অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয় এবং এটি যৌনমিলনের মাধ্যমে প্রবিষ্ট পুরুষোর শুক্রাণুর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
যোনিমুখ জন্মগত ভাবে যোজক কলার একটি পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। এই পর্দাকে বলা হয় যোনিচ্ছদ বা সতীচ্ছদ। একসময় ধারণা ছিল পুরুষের সাথে সঙ্গম ছাড়া বা কোনো অপদ্রব্য প্রবেশ ছাড়া এই পর্দা ছিঁড়ে যায় না। এই পর্দা অক্ষুণ্ণ থাকাটা সতী নারীর লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বাস্তবে নানা কারণে এই পর্দা ছিন্ন হতে পারে। ঘোড়ায় চড়া, সাইকেল চালনা, ব্যায়াম চর্চা ইত্যাদির কারণে এই পর্দা ছিড়ে যেতে পারে।
-
বহিঃস্থ যোনি : যোনি দ্বার থেকে শুরু হয়ে যোনি নালীর বাইরে বিস্তৃত অংশকে বহিঃস্থ যোনির ভিতরে ধরা হয়। এই অংশটিকে বলা হয় ভালভা (valva) বলে। ভালভা অনেকগুলো ছোটো অংশ নিয়ে তৈরি। এই অংশগুলো হলো
- যোনিমণ্ডপ : মন্স পিউবিস বা যোনীমণ্ডপ নারীদেহের নিম্নাঙ্গের একটি নির্দ্দিষ্ট এলাকা মানব অঙ্গসংস্থানবিদ্যায় এবং সাধারণ স্তন্যপায়ী প্রাণীতে পিউবিক অস্থির, পিউবিক সিমফাইসিস সংযোগের উপর মেদ কলা জমে থাকা উঁচু ঢিপির
মন্স পিউবিসে আকার সাধারণত শরীরের হরমোন ক্ষরণ ও মেদের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে। বয়ঃসন্ধির পর এটি প্রসারিত হয়, এর ওপরভাগে অংশ চুলে ঢেকে যায়, যা যৌনকেশ নামে পরিচিত। মানুষের দেহে এই উঁচু অংশটি মেদ কলা দিয়ে গঠিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে বড়। যৌনমিলনের সময় এটি পিউবিক অস্থিকে রক্ষা করে।
মানুষের মন্স পিউবিস যে কয়েকটি অংশে বিভক্ত তার নিম্নভাগে আছে বৃহদষ্ট, এবং অন্য পাশে হলরেখার (লাঙ্গল ফলার দাগ) মতো অংশ, যা যোনীচিরল নামে পরিচিত। ক্লেফট অফ ভেনাস যে সকল অংশ পরিবেষ্টন করে রেখেছে সেগুলো হলো: নিম্নোষ্ঠ, ভগাঙ্কুর, যোনির প্রবেশদ্বার, এবং ভালভাল ভেস্টিবিউলের অন্যান্য অংশ। মন্স ভেনেরিস-এর মেদ কলা ইস্ট্রোজেন ক্ষরণে প্রতিক্রিয়াশীল, যা বয়ঃসন্ধি শুরুর সময় একটি স্বতন্ত্র উঁচু অংশের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এটি লেবিয়া মেজরার সামনের অংশে, পিউবিক অস্থি থেকে সরে যায়।
-
যোনিওষ্ঠ
(Labia)
দুইটি মাংসল ভাঁজ যোনিপথকে আবৃত করে রাখে। এর বড় ভাঁজটিকে বলা হয় বৃহদোষ্ঠ (Labia majora)। বৃহদোষ্ঠের ভিতরের দিকে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র মাংসল ভাঁজকে বলা হয় ক্ষুদ্রোষ্ঠ (Labia minora)। বৃহদোষ্ঠ বহিঃস্থ অংশ, রঙিন এবং চুল বিশিষ্ট; এবং অন্যটি ভেতরের অংশ, যা কোমল ও সেবাসিওয়াস ফলিকল সমৃদ্ধ। এই বৃদোষ্ঠের ভিতরের দিকে থাকে
- ভগাঙ্কুর :
(clitoris):
যোনিওষ্ঠের উপরের দিকে ছোটো বোতামের মতো একটি অংশ
থাকে। একে বলা হয় ভগাঙ্কুর। এই অংশটি যোনিমুখ ও মূত্রনালীর প্রবেশমুখের
উপরাংশে অবস্থিত। এটি যৌন মিলনকালে তৃপ্তি প্রদান
করা। যেহেতু এটি একটি অভ্যন্তরীণ অঙ্গ তাই এর বর্ণ
চর্মের ন্যায় না হয়ে ঝিল্লীর ন্যায় হয়। এটির উচ্চতা
সিকি ইঞ্চি থেকে ১ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। তবে যৌন
উত্তেজনা বাড়তে থাকলে এটি শক্ত ও দীর্ঘ হতে থাকে।
-
যোনিচ্ছদ :
যোনিচ্ছদ বা সতীচ্ছদ
(Hymen)
: এটি মিউকাস
মেমব্রেন দ্বারা সৃষ্ট একটি পর্দা। এই পর্দা যা যোনির
প্রবেশমুখ আংশিক বা সম্পূর্ণ আবরিত করে রাখে।
-
ভালভাল ভেস্টিবিউল
(Vulval vestibule)
বা যা
ভালভার ভেস্টিবিউল
(Vulvar vestibule)। এটি লেবিয়া মাইনরার মধ্যবর্তীস্থানে অবস্থিত ভালভার
একটি অংশ, যেখানে ইউরেথ্রাল ও যোনির প্রবেশমুখ
উন্মুক্ত। এর প্রান্ত হার্ট-এর লাইন দ্বারা চিহ্নিত।
যোনির সম্মুখে, গ্ল্যান্স ক্লিটোরিসের ২.৫ সেন্টিমিটার ভেতরে বহিঃস্থ ইউরেথ্রাল অরফিস অবস্থিত। সাধারণত এটিকে স্কিনির ডাক্টের প্রবেশমুখের নিকটে ছোট, হালকা স্পষ্ট দাগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আর ভ্যাজাইনাল অরফিস হচ্ছে মূত্রনালির নিচে ও পেছনে অবস্থিত একপ্রকার মধ্যম আকৃতিবিশিষ্ট চির; এর আকার সতীচ্ছদের আকৃতির সাথে ব্যাস্তানুপাতিক হারে পরিবর্তিত হয়।
- বার্থোলিনের গ্রন্থি
(Bartholin’s glands)।
একে অনেক সময় বৃহৎ
ভেসটিবিউলার গ্রন্থি
(greater vestibular glands)
বলা হয়। দুটি গ্রন্থি নারীর যোনির
প্রবেশদ্বারের কাছে একটু নিচে ডানে ও বামে থাকে।
খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতকে এই গ্রন্থি দুটি সম্পর্কে প্রথম
দেন,
ড্যানিশ শরীরবিদ ক্যাসপার বার্থোলিন দ্য ইয়াঙ্গার
(১৬৫৫-১৭৩৮) এদের বর্ণনা দেন। এই বিজ্ঞানীর নামে এই
গ্রন্থদ্বয়ের নামকরণ করা হয়।
- গ্রাফেনবার্গ স্পট বা জি-স্পট : হচ্ছে
যোনিপথের একটি ক্ষুদ্র অংশবিশেষ। এই অংশটি মূত্রথলির নিচে অবস্থিত। এর
নামকরণ করা হয়েছে জার্মান স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
আর্নেস্ট গ্রাফেনবার্গ-এর নামানুসারে। যোনিপথের শুরু
হতে ১-৩ ইঞ্চির মাঝেই এর অবস্থান। সঙ্গমকালে যোনিমুখের
১-৩ ইঞ্চির ভিতরে নারী সবচেয়ে বেশি পুলক অনুভব করে। এই
অধিক সংবেদনশীল অংশকেই জি-স্পট বলা হয়।