অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা ইবোলা ভাইরাস

ইবোলা ভাইরাস
এক প্রকার আরএনএ ভাইরাসের সাধারণ নাম। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সুদানের জায়ার (
Nzara) এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ইয়াম্বুকু-তে (Yambuku), এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত রোগী, প্রথম শনাক্ত করা হয়। পরে এই রোগ কম্বোর ইবোলা (Ebola) নদীর তীরবর্তী গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় ইবোলা নদীর নামানুসারে এই রোগের নামকরণ করা হয়, Ebola hemorrhagic fever (EHF)। বর্তমানে এর নাম Ebola virus disease (EVD)। অবশ্য সংক্ষেপে এই রোগের নাম ইবোলা বা এবোলা বলা হয়।

এই সময় এই রোগের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে গবেষকরা ইবোলা ভাইরাসের সন্ধান পান। এই কারণে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দকে এই ভাইরাসের আবিষ্কার-বৎসর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর প্রায় প্রতি বৎসরই আফ্রিকায় এই রোগে কিছু না কিছু মানুষ মারা যায়। তবে বড় আকারের মহামারী সৃষ্টি করে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই বৎসরে মার্চ মাসে গায়নাতে প্রথম এই রোগ আত্মপ্রকাশ করে। এরপর স্থলসীমানা পেরিয়ে এই রোগ সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। জনৈক বিমানযাত্রীর মাধ্যম এই রোগ নাইজেরিয়ায় এবং স্থলযাত্রীর মাধ্যমে সেনেগালে দেখা দেয়। তবে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে
গায়না, সিয়েরা লিওন এবং লাইবেরিয়াতে মারাত্মক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ আগষ্ট, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), ওই সকল দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে।

ভাইরাস পরিচিতি
এর গোত্রগত নাম
Filoviridae। এই গোত্রের মোট তিনটি গণ রয়েছে। এই গণ তিনটি হলো Cuevavirus, Marburgvirus এবং Ebolavirus। ইলোবা রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসগুলো মূলত Ebolavirus গণের প্রজাতিগুলো। এখন পর্যন্ত এই গণের পাঁচটি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।  এই প্রজাতিগুলোর নাম

উল্লেখ্য প্রজাতিগত নামগুলো গৃহীত হয়েছে আফ্রিকা মহাদেশের স্থানের নামানুসারে। এই পাঁচটি প্রজাতির ভিতরে Bundibugyo Ebolavirus, Zaire Ebolavirus এবং Sudan Ebolavirus  মানুষের শরীরের গুরুতর রোগ সৃষ্টি করে। বাকি ২টি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারী সৃষ্টি করে Zaire Ebolavirus

ভাইরাসের সংক্রমণের উৎস:
গবেষকদের মতে এই ভাইরাস প্রাথমিক বাহক হিসেবে,
Pteropodidae গোত্রের ফলভক্ষক পাখিদেরকে। এই সকল পাখির আংশিক ভক্ষিত ফল খেয়ে অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী আক্রান্ত হয়। পরে আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত, লালা, কাশি, ঘাম, চোখের পানি, বীর্য, বমি ও মল-মূত্রের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। মানুষ ছাড়া অন্যান্য যে সকল স্তন্যপায়ী প্রাণী এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে, সেগুলো হলো শিম্পাঞ্জি, গরিলা, ফলভক্ষক বাদুর, বানর, বন্য এন্টিলোপ। যে সকল এলাকায় মানুষের ভিতর এই রোগ দেখা গেছে, সে সব এলাকায়, এই সব স্তন্যপায়ীরাও এই রোগে মারা গেছে বা রোগাক্রান্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

পাখির আংশিক খাওয়া ফল, ইলোবা আক্রান্ত পশুর মাংস ভালোভাবে রান্না না করে খেলে, এই রোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। একটি এলাকায় একজন আক্রান্ত হলে, ক্রমে ক্রমে তা মহামারীরূপে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাইরাস শরীরের ঘা, চোখ, নাসারন্ধ্র, মুখ, গলা ও প্রজননতন্ত্রের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সরাসরিও রোগ ছড়ায়। এই ভাইরাস  শুস্ক আবহাওয়ায় আসবাবপত্র, রোগীর পোশাকের সাথে লেপ্টে থেকে বেশ কয়েক ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে। ফলে, প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না এলেও রোগীর ঘর এবং ব্যবহৃত সামগ্রী থেকে এই রোগ ছড়াতে পারে। এই কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাকাদি পুড়িয়ে ফেলা হয়।

 ইলোবা আক্রান্ত রোগী

এই রোগের উপসর্গ: 
এই ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের দেহে প্রাথমিকভাবে জ্বর সৃষ্টি হয়। সেই সাথে থাকে পেশীতে ব্যথা, মাথাধরা, গলদেশের প্রদাহ। পরে সর্দি কাশি, বমি বমি ভাব এবং ডায়েরিয়া দেখা দেয়। এক সময় শরীরে গোটা বের হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে বৃক্ক্ এবং  প্লীহায় সমস্যা দেখা দেয়। রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করলে, দেহের বাইরের গোটা থেকে এবং দেহাভ্যন্তরে রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে। এই সময় মল-মূত্র, কাশির সাথে রক্ত দেখা যায়।

আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে উপসর্গ দেখা দিতে ০২-২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। তবে গড়ে ০৮-১০ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে রোগের লক্ষণগুলো ফুটে উঠে। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ে।

চিকিৎসা:
এখন পর্যন্ত (নভেম্বর ২০১৪ ) এই রোগের কোনো কার্যকরী ঔষধ আবিষ্কৃত হয় নি। তবে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে মুখে এবং রক্তে প্রচার স্যালাইন প্রদান করে, টিকিয়ে রাখতে পারলে রোগী এক সময় আরোগ্য লাভ করতে পারে।

সতর্কতা:
এই রোগ কোনো এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে, প্রাথমিকভাবে যে সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে, তা হলো

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করতে হলে, যে সাবধনতা গ্রহণ করতে হবে, তা হলো


তথ্যসূত্র:
http://www.who.int/mediacentre/factsheets/fs103/en/
http://en.wikipedia.org/wiki/Ebola_virus_disease
http://www.nairaland.com/1848781/scary-pictures-ebola-virus-victims