দরজা
ইংরেজি :
door
সমার্থক শব্দাবলি : দ্বার, ফটক।


কোনো বেড়া বা দেয়াল দ্বারা বিভাজিত স্থানের এক পার্শ্ব থেকে অন্য পার্শ্বে চলাচলের উপযোগী এমন ক্ষুদ্র পথকে সাধারণত দরজা বা ফটক বলা হয়। দরজা দিয়ে চলাচলের জন্য কোনো প্রতিবন্ধক উপকরণ থাকতে পারে বা নাও থাকতে পারে। কোন দরজাতে যখন কোনো চলাচল নিয়ন্ত্রক উপকরণ থাকে না, তখন তাকে উন্মুক্ত দ্বার বলা হয়। তবে সাধারণত দরজায় খোলা বা বন্ধ করার জন্য প্রতিবন্ধক উপকরণ থাকে। এই উপকরণকে সাধারণ ভাবে পাল্লা বলা হয়। আর দরজার পাল্লা যে কাঠামোর সাথে যুক্ত থাকে, তাকে চৌকাঠ বলা হয়। দরজার প্রকৃতি অনুসারে পাল্লা এক বা একাধিক প্রতিবন্ধক থাকতে পারে। সাধারণত ঘরের দরজায় এক বা দুই পাল্লা থাকতে পারে। কিন্তু বাড়ির প্রধান ফটকে একাধিক পাল্লা দেখা যায়। বড় বাড়ির প্রধান ফটকে গাড়ি চলাচলের জন্য একটি বা দুটি পাল্লা থাকে। কিন্তু এর সাথে মানুষ চলাচলের জন্য ক্ষুদ্র অপর একটি পাল্লা যুক্ত থাকতে পারে।

দরজার পাল্লা দরজার একটি স্থায়ী কাঠামোর সাথে যুক্ত থাকে। পাল্লা যাতে সহজে খোলা বা বন্ধ করা যায়, এই কারণে কাঠামোর সাথে পাল্লা সংযোগ নানা রকমের হয়তে পারে। যেমন
১. কব্জাযুক্ত পাল্লা : এক্ষেত্রে দরজার কাঠামোর সাথে পাল্লা চলাচল উপযোগী কব্জার ব্যবস্থা থাকে। এক পাল্লা বিশিষ্ট দরজার কাঠামোর একদিকে এই কব্জা ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দুই পাল্লা বিশিষ্ট দরজায় বিপরীত দিক নির্দেশে উভয় পাল্লার সাথে কব্জা ব্যবহার করা হয়। অনেক সময় কব্জার পরিবর্তে কোন ধাতব দণ্ড, রজ্জু শিথিল করে বেঁধে পাল্লা চলচলের ব্যবস্থা করা হয়।

সাধারণত কব্জা পাল্লা দরজার কাঠামোর সাথে উলম্বভাবে যুক্ত থাকে। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে দরজার উপরের দিকে আনুভূমিক অবস্থানে পাল্লা থাকতে পারে। সাধারণত ছোটো ছোটো দোকানে এই জাতীয় পাল্লা দেখা যায়। তবে একে ঝাঁপ বলা হয়।

২. গড়ানো পাল্লা : এই জাতীয় দরজার কাঠমোর উপর পাল্লাকে পার্শ্ব বরাবর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে চলচলের উপযোগী ব্যবস্থা রাখা হয়।  বাড়ির প্রধান ফটক, অফিস বা বাড়ির ভিতরের কক্ষে এই জাতীয় পাল্লা ব্যবহার কর হয়। গড়ানো দরজার প্রকৃতি অনুসারে একটি বা দুটি পাল্লা থাকতে পারে। যেমন- গাড়ি রাখার ঘরের পাল্লা একটি হতে পারে। আবার লিফটের দরজা দুই পাল্লার হতে পারে।

৩. গুটানো পাল্লা : কোনো কোনো পাল্লা গুটিয়ে রেখে বা গুটানি পাল্লা খুলে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। দোকানের দরজায় অনেক সময় এই জাতীয় পাল্লা দেখা যায়।

৪. ঘূর্ণায়মান পাল্লা : দরজার কাঠমোর কেন্দ্রস্থলে একটি ঘূর্ণায়মান পাল্লার ব্যবস্থা করে এই দরজা তৈরি করা হয়। এই জাতীয় দরজার পাল্লায় শুধু পাল্লা অনেক সময় শুধু এর কাঠমোটা থাকে। এই জাতীয় পাল্লায় কোনো নিরেট কাঠ, ধাতু, প্লাস্টিক ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় না। মূলত অনেক লোক যাতে এক সাথে কোনো স্থানে ঢুকতে বা বের হতে না পারে, তার নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পাল্লা ব্যবহার করা হয়।

দরজার উপকরণ:
এমন কোনো কঠিন বস্তু নেই যার দ্বারা দরজা তৈরি করা যায় না। মানব সভ্যতার ঊষা লগ্নে, যখন মানুষ আশ্রয়ের জন্য গুহায় বসবাস শুরু করে, তখনই সে চলাচলের মুখে আবরণ তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব  করেছিল। সে সময় মানুষ মূলত গুহার মুখে আবরণ হিসাবে ব্যবহার করতো পাথরের টুকরো। হিংস্র পশুর আক্রমণ থেকে গুহাবাসীরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য ভারী এবং অপরিশিধিত পাথর ব্যবহার করতো। শীত প্রধান দেশের আদি মানুষেরা শীতল বাতাস বা তুষারপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাথর ব্যবহার করতো।

সমতলভূমিতে বা অরণ্যপ্রধান এলাকায় মানুষ যখন ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করে, তখন তারা কাঠ, গোলাপাতা ধরনের বড় বড় পাতা, নলখাগড়া বা বাঁশ জাতীয় উপকরণ দরজায় ব্যবহার করতো। বরফাচ্ছাদিত এলাকার মানুষ ব্যবহার করতো বিশেষ ধরনের বরফের দরজা। যা এখনো এক্সিমোরা ব্যবহার করে থাকে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মানুষ ক্রমে ক্রমে দরজায়, উন্নতমানের কাঠ, ধাতু, কাঁচ ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। নান্দনিক ভাবনা থেকে মানুষ দরজার পাল্লাকে নানা রকম নকশা, মূল্যবান পাথর, চিত্র ইত্যাদি দ্বারা সুশোভিত করে থাকে।

দরজার আকার :
আধুনিক কালের দরজার মূল আকৃতি হয়ে থাকে আয়াতাকার। তবে সব সময় আয়তকার হয় না। অনেক সময় দেখা যায়, আয়তাকারে দরজার উপরের দিক অর্ধ-গোলাকার বা  গুম্বুজাকৃতির করা হয় এবং একই ভাবে এর পা্ল্লার আকারও দরজার চৌকাঠের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয়। দরজার দৈর্ঘ্য প্রস্থের কোনো সুনির্দিষ্ট মাপ নেই। প্রয়োজনানুসরে দরজা অনেক বড় বা ছোটো হতে পারে। সাধারণ বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বার তুলনামূলকভাবে অনেক বড় হয়ে থাকে। এক সময় রাজবাড়ির দরজা এত বড় করে তৈরি করা হতো, যার ভিতর দিয়ে হাতি প্রবেশ করতে পারতো। আবার চোরা কুঠুরির দরজা এ্তই ছোটো হতো যে, তার ভিতর দিয়ে একজন মানুষ কোনো মতো ঢুকতে পারতো। সাধারণভাবে বাসায় বা অফিসে ৭ ফুট উচ্চতার দরজাকে আদর্শ ধরা হয়। তবে প্রস্থে কম-বেশ হতে পারে।