চিত্রকর্ম
ইংরেজি :
painting, picture
চিত্রকলার একটি অন্যতম শাখা হলো চিত্রকর্ম। সাধারণভাবে
অক্ষর চিত্রণ, নকশা, ডায়াগ্রাম (কোনো কিছু ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত চিত্র)
ইত্যাদিকে চিত্রলেখ (graphic)
বলা হয়।
অঙ্কন, চিত্রকর্ম, ছাপচিত্র-কে চিত্রলেখ-শিল্প (graphic
art)
-এর অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এর ভিতরে কোনো মাধ্যমের উপরিতলে অঙ্কিত ছবিতে যদি রঙ বা আলো-ছায়ার বৈশিষ্ট্য
শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়, তখন তাকে চিত্রকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
চিত্রকর্মের জন্য তৈরিকৃত বিশেষ ধরনের রঙ, রঞ্জক বা এই জাতীয় পদার্থ দিয়ে কোনো তলের উপর চিত্রকর্ম তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে তুলি, চামচ, চাকু, স্পঞ্জ ইত্যাদি ব্যহার করা হয়। চিত্রকর্ম তৈরির প্রক্রিয়াকে চিত্রায়ণ এবং এর মাধ্যমে সৃষ্ট ছবিকে চিত্রকর্ম বলা হয়। চিত্রকর্ম দেয়াল, কাগজ, ক্যানভাস, কাঠ, কাঁচ, মাটি, ধাতু, কংক্রিটের উপরিতল ব্যবহার করা হয়।
চিত্রকর্মের ক্ষেত্রে কতকগুলো বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এগুলোকে চিত্রকর্মের উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই উপাদানগুলো হলো−
বর্ণ এবং বর্ণ ক্রম (Color
and tone)
বিভিন্ন বর্ণ এবং বর্ণক্রম হল ছবির মূল সত্তা
। বর্ণ মূলত বিষয়-নির্ভর।
কিন্তু এর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব রয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি তা সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন
ভিন্ন
হতে পারে। যেমন− কালো
বর্ণকে পশ্চিমা দেশসমূহে শোকের বর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আর সাদাকে উপস্থাপন করা
হয় শুভ্রতার প্রতীক হিসেবে। কিছু চিত্রশিল্পী, তাত্ত্বিক, লেখক, বিজ্ঞানী তাঁদের
নিজেদের মতো করে নিজস্ব বর্ণ তত্ত্ব দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে আছেন গোটে, কান্দিস্কি, এবং নিউটন।
রং
ও রঞ্জক
(Color
and
pigment)
বাংলাতে
যে কোনো বর্ণের বর্ণালী অনুসারে যে সকল স্বতন্ত্র অনুভূতি দর্শনেন্দ্রিয়কে
উজ্জীবিত করে, তাদের সাধারণ নাম রং বলা হয়। যেমন কাপড়টির রঙ লাল। এখানে লাল হলো
রঙের নাম। আবার ছবি আঁকার জন্য রঙ অনুসারের যে সকল ব্যবহারোপযোগী উপকরণ
ব্যবহার করা হয়, তাকেও রং বলা হয়। যেমন- এখানে এক কৌটা লাল রঙ আছে।
ছবি আঁকর জন্য রং তৈরির সময় প্রধানত
তিনটি উপাদান ব্যবহার করা হয়। এই উপাদান তিনটি হলো
১. রঞ্জক (pigment)
: কোনো বিশেষ ধরনের রং তৈরির জন্য সুনির্দিষ্ট মৌলিক উপাদান ব্যবহার করা
হয়। এই উপাদানকে রঞ্জক বলে।
রঞ্জক হিসেব কোনো রঙের জন্য কি উপাদান ব্যবহার করা হয়, তার তালিকা
রাসায়নিক বা প্রাকৃতিক
নাম।
২. আঠা (binder) : রঞ্জকের কণাসমূহকে একত্রে আবদ্ধ করে রাখার জন্য এক ধরনের আঠা জাতীয় উপাদান ব্যবহার করা হয়। এদেরকে আঠা বলা হয়।
৩.
সঞ্চালক
(vehicle)
: রঞ্জক এবং আঠার সমন্বয়ে মিশ্রিত করে রঙের প্রাথমিক রূপ দেওয়া হয়। এই রঙকে
যথাযথভাবে সঞ্চালিত করে ছবি আঁকার উপযোগী করা হয়। এক্ষেত্রে রঙের সঞ্চালনের
জন্য যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, তাকে, সঞ্চালক বলা হয়। সঞ্চালকের নামানুসারে
রঙের নামকরণ করা হয়। যেমন-
তেল রঙ: সঞ্চালক হিসেবে তেল ব্যবহার করা হয়।
জল : সঞ্চালক হিসেবে পানি ব্যবহার করা হয়।
এ্যাক্রোলিক : সঞ্চালক হিসেবে এ্যাlক্রোলিক ব্যবহার করা হয়।
চিত্রায়ণের জন্য রঙ ব্যবহারের সময় রঙের
স্বচ্ছতা বা অনচ্ছতার বিচার করা হয়।
একটি রঙিন তলের উপর কোনো রঙের প্রলেপ দেওয়া
হলে, যদি নিচের বর্ণটি দেখা যায় তবে এই রংটিকে স্বচ্ছ রং
(transparent color) বলে।
পক্ষান্তরে একটি রঙিন তলের উপর কোনো
রঙের প্রলেপ দেওয়া
হলে, যদি উপরের রঙের প্জরলেপের
কারণে নিচের রঙটি না দেখা যায়
তবে
তাকে অনচ্ছ রং(opaque color)
বলে।
রং এর স্বচ্ছতা এবং অনচ্ছতা(Color Transparency and Opaqueness)-
রং এর উষ্ঞতা ও শীতলতা-
বর্ণ চক্র(Color Wheel)-
বিভিন্ন প্রকার রং এর পারস্পরিক সম্পর্ক রেখে যে চক্র তৈরি করা হয় তাকে বর্ণ চক্র বা(color wheel) বলে। বর্ন চক্রের প্রথম স্তরের রং গুলোকে প্রাথমিক রং বা মৌলিক রং (primary color) বলে। মৌলিক রং তিনটি, এগুলো হল- হলুদ, লাল, নীল। বর্ন চক্রের দ্বিতীয় স্তরের রং গুলোকে মাধ্যমিক রং (secondary color) বলে। মাধ্যমিক রং তিনটি, এগুলো হল- কমলা, বেগুনী, সবুজ।আর বর্ন চক্রের পরবর্তী পর্যায়ের রং গুলোকে তৃতীয় স্তরের রং (tertiary color)বলে। এগুলো হল- হলদে সবুজ, নীলাভ বেগুনী, লালচে বেগুনী, লালচে কমলা, হলদে কমলা।
বর্ণালী(Sepectrum)-
বর্ণচক্রে অবস্হানকারী বেগুনী থেকে লাল পর্যন্ত রং গুলোকে পরস্পর পাশাপাশি সাজালে একটি বর্নালী সৃষ্টি হয়।
সম্পূরক রং(Complementary Color)-
বর্ণ চক্রে ঠিক বিপরীত দিকে অবস্হানকারী রং গুলোকে পরস্পরের সম্পূরক রং বলে। যেমন- লাল এবং সবুজ পরস্পরের সম্পূরক রং।
কালার প্যলেট ও আলোর মধ্যে সম্পর্ক-
কালার প্যলেট ও আলোর রং পরস্পর বিপরীত মূখী আচরন করে। কালার প্যালেটের প্রাথমিক রংগুলি আলোর ক্ষেত্রে মাধ্যমিক রং এবং আলোর প্রাথমিক রং গুলি কালার প্যালেটের মাধ্যমিক রং হিসেবে কাজ করে।
কালার প্যালেটের প্রাথমিক রং গুলির মিশ্রনের ফলে ধূসর বা কালো বর্ণ তৈরী করে। আলোর প্রাথমিক রংগুলির মিশ্রনের ফলে সাদা আলোর তৈরী করে।