বাদামী বামন
ইংরেজি : Brown
dwarf
নক্ষত্র-সদৃশ
মহাকাশীয়
লক্ষ্যবস্তু বিশেষ। এদের ভর হয়ে থাকে বৃহস্পতির মতো বৃহত্তম গ্রহ ও ক্ষুদ্রাকার
প্রজ্জ্বলিত নক্ষত্রের মাঝামাঝি। এদের ভরের সীমা বৃহস্পতির ১৩ থেকে ৯০গুণ, আর
সূর্যের ভরের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ কম।
সাধারণত মহাকাশীয় মেঘ কোনো ভাবে সঙ্কুচিত হয়ে নক্ষত্রের জন্ম দেয়। এক্ষেত্রে
সঙ্কুচিত গ্যাস একটি গোলকের আকার ধারণ করে এবং একটি মাধ্যকর্ষণ শক্তির সৃষ্টি
করে। বস্তুকণার সঙ্কোচনের ফলে যখন তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি কেলভিনে উন্নীত হয়, তখন
এর অভ্যন্তরে হাইড্রোজেন বিক্রিয়া করে হিলিয়াম উৎপন্ন করে এবং সেই সাথে শক্তি (তাপ
ও আলো) উৎপন্ন করে। শিশু নক্ষত্রের কেন্দ্রে একটি হাইড্রোজেন-চুল্লী জ্বলে উঠার
জন্য যে তাপমাত্রার প্রয়োজন, তার জন্য প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় অংশের প্রয়োজন হয়।
বাদামী বামনদের আকার হয়ে
থাকে বৃহস্পতি ও প্রজ্জ্বলিত ছোটো নক্ষত্রের মাঝামাঝি। এদের ভর থাকে
সূর্যের ভরের ০.০৮ ভাগ
পরিমণা। এত অল্প ভরবিশিষ্ট আণবিক গোলক সঙ্কোচনের ফলে যে তাপ মাত্রার
সৃষ্টি করে, তার দ্বারা প্রাথমিক অবস্থায় হাইড্রোজেন-চুল্লী প্রজ্জ্বলিত হয় বটে।
কিন্তু কিছুদিন পর এই চুল্লী থেমে যায়। এই জাতীয় বিপুলাকার মহাকাশীয় বস্তু বাদামী বামন
নামে অভিহিত
হয়ে থাকে।
প্রতিটি নক্ষত্রের ভিতরে হাইড্রোজেন প্রজ্জ্বলিত হওয়ার জন্য যে তাপমাত্রার প্রয়োজন
হয়, তার সামান্য কিছু কম তাপমাত্রায় পৌঁছার সাথে সাথে, লিথিয়াম-৭ এর সাথে একটি
প্রোটোনের সংঘর্ষ হয় এবং হিলিয়াম-৪ নিউক্লেই-তে পরিণত হয়। কিন্তু বাদামী
বামনগুলোতে লিথিয়াম ভাঙার মতো অত তাপমাত্রায় কখনই পৌঁছায় না, ফলে লিথিয়াম অব্যবহৃত
অবস্থায় বাদামী বামনে রয়ে যায়। এই কারণেই দূরাকাশে
বাদামী বামনগুলো থেকে লিথিয়ামের বর্ণালী রেখা দেখা যায়।
প্রাচীনতম বাদামী বামনগুলো যখন অত্যন্ত শীতল
হয়ে পড়ে, তখন এদের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস জমে। এছাড়া বাদামী বামনদের ঔজ্জ্বল্য
থাকে না বললেই চলে। নিষ্প্রভ হতে হতে এগুলো প্রায়ই ধূসর বর্ণ ধারণ করে। এ কারণে
অনেক সময় এগুলোকে ধূসর বামনও বলা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাদামী বামনদের
পৃষ্ঠদেশে লৌহ বৃষ্টি পড়ে। ফলে এগুলো লালচে বা বাদামী বর্ণ ধারণ করে।
বর্ণালীর ধরন অনুসারে বাদামী বামনগুলোকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এম শ্রেণি : সাধারণত এম৬.৫ বা এর বেশি মানের বর্ণালীযুক্ত বাদামী বামনগুলোকে
এই শ্রেণিতে ফেলা হয়েছে। এই শ্রেণির বাদামী বামনগুলোর উপরিতলের তাপমাত্রা থাকে
প্রায় ২,২০০ কেলভিন। এদের উপরিভাগে থাকে বিভিন্ন ধরনের অক্সাইড। ফলে এদেরকে বেশ
লালচে মনে হয়।
এল শ্রেণি : এই শ্রেণির বাদামী বামনগুলোর উপরিতলের তাপমাত্রা থাকে প্রায়
১,৫০০-২,২০০ কেলভিন। এতে বেশ শক্তিশালী ধাতব ও জলীয় বর্ণালী দেখা যায়।
টি শ্রেণি : এই শ্রেণির বাদামী বামনগুলোর উপরিতলের তাপমাত্রা থাকে প্রায়
১০০০-১,৫০০ কেলভিন। এতে মিথেন ও জলজাত বর্ণালী দেখা যায়।
ওয়াই শ্রেণি : এই শ্রেণির বাদামী বামনগুলোর উপরিতলের তাপমাত্রা থাকে
১০০০-৫০০ কেলভিন বা তার চেয়ে কম। এতে বেশ মিথেন ও জলজাত বর্ণালী দেখা যায়।
উচ্চতাপমাত্রাযুক্ত বাদামী বামনগুলো ডিউটেরিয়াম
থেকে শক্তির যোগান পায়। কিন্তু ১,০০,০০,০০০ বৎসরের ভিতরে লালচে বর্ণ থেকে কালো
বর্ণে পরিণত হয়।
সূত্র :
- তারা পরিচিত। মোহাম্মদ আব্দুল
জব্বার। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশান। ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪
- বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। ১-৫ খণ্ড।
-
http://en.wikipedia.org/wiki/
- contemporary Astronomy/ Jay M. Pasachoff।
2nd edition
- A
Brief history of time /
Stephen Hawking
- Essays about Univesre/Boris A. Vorontrov-Vel'Yaminov/Mir
Pulishers Moscow/1985