Kingdom
(রাজ্য): Plantae
Division (বিভাগ)
: Magnoliophyta
Class (শ্রেণী)
: Magnoliopsida
Order (বর্গ)
: Solanales
Family (গোত্র)
: Solanaceae
Genus (গণ)
: Solanum |
আলু
স্প্যানিশ
patata> ইংরেজি :
potato।
প্রাকৃত আর>বাংলা আলু।
মাটির নিচে শর্করা সঞ্চিত স্ফীতকন্দ হিসাবে
পাওয়া যায়, এমন কিছু উদ্ভিদের সাধারণ নাম হলো আলু।
Solanaceae
গোত্রের Solanum
গণের কিছু উদ্ভিদকে আলু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে সাধারণভাবে গোল আলুকেই আলু
হিসাবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। আলুর স্বাদ এবং অন্যান্য প্রকৃতির বিচারে নানা নামে অভিহিত
করা হয়। যেমন বাংলাদেশে মিষ্টি স্বাদযুক্ত আলুকে বলা হয় 'মিষ্টি আলু', মুখে কাঁচা
খাওয়ার উপযোগী আলু শাঁখালু বলা হয়। আবার রঙের বিচারে বলা হয় লাল আলু।
চামড়া-সহ কাঁচা আলুর পুষ্টিগুণ
প্রতি ১০০ গ্রামে পুষ্টিগুণ
|
শক্তি
|
৩২১ কিলোজুল |
শর্করা
|
১৭.৪৭ গ্রাম |
-
স্টার্চ
|
১৫.৪৪ গ্রাম
|
-
আঁশ
|
২.২
গ্রাম |
চর্বি
|
০.১
গ্রাম |
আমিষ
|
২
গ্রাম |
পানি |
৭৫ গ্রাম |
থায়ামিন (ভিটামিন
বি১) |
০.৮
মিলিগ্রাম (৭%) |
রিবোফ্লেভিন
(ভিটামিন
বি২) |
০.০৩
মিলিগ্রাম
(৩%) |
নিয়াসিন
(ভিটামিন
বি৩) |
১.০৫
মিলিগ্রাম
(৭%) |
প্যান্টোথেনিক এ্যাসিড বি৫ |
০.২৯৬
মিলিগ্রাম
(৬%) |
ভিটামিন
বি৬ |
০.২৯৫
মিলিগ্রাম
(২৩%) |
ফোলেট
(ভিটামিন
বি৯) |
১৬
μg
(৪%) |
ভিটামিন
সি |
১৯.৭
মিলিগ্রাম
(২৪%) |
ভিটামিন
ই |
০.০১ মিলিগ্রাম
(২৪%) |
ভিটামিন
কে |
১.৯
μg
(২%) |
ক্যালসিয়াম |
১২ মিলিগ্রাম
(১%) |
লৌহ |
০.৭৮ মিলিগ্রাম
(৬%) |
ম্যাগ্নেশিয়াম
|
২৩ মিলিগ্রাম
(৬%) |
ম্যাঙ্গানিজ |
০.১৫৩ মিলিগ্রাম
(৭%) |
ফসফরাস |
৫৭ মিলিগ্রাম
(৮%) |
পটাশিয়াম |
৪২১ মিলিগ্রাম
(৯%) |
সোডিয়াম |
৬ মিলিগ্রাম
(০%) |
দস্তা |
০.২৯ মিলিগ্রাম
(৩%) |
|
আলু মূলত দক্ষিণ আমেরিকা অন্দিজ পার্বত্য এলাকার গাছ। ১৬শ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে
স্পেনিশরা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ইউরোপে আলু নিয়ে আসে। ১৭শ শতকে ইউরোপের
আয়ারল্যান্ডে প্রথম আলুর চাষ শুরু হয়। পরে তা আয়ারল্যান্ডের প্রধান ফসলে পরিণত হয়।
হিসাবে ১৮শ শতকে আলু ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত জার্মানী, পশ্চিম
ইংল্যান্ডে এর ব্যাপক চাষ হতে থাকে। ১৯শ শতকের দিকে ভারতে আলুর চাষ শুরু হয়।
ব্রিটিশ ভারতে গোলআলু এসেছিল ইউরোপ থেকে। কিন্তু অন্যান্য কিছু ভারতবর্ষে আগে থেকেই
ছিল। কারণ, ভারতীয় প্রকৃত শব্দে আরু শব্দটি পাওয়া যায়। এবং এই আরু শব্দ থেকেই আলু
শব্দটি বাংলা ভাষায় প্রচলিত হয়েছে।
গোল আলু
তার সাধারণ নাম গোল আলু নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম
Solanum tuberosum
। নামে গোল আলু হলেও- এর অধিকাংশ প্রজাতির আলু
যথেষ্ঠ গোল নয়। এর দু একটি প্রজাতি বিষাক্ত। তবে এই সকল প্রজাতির আলু চাষ করা যায়
না। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০০ রকমের গোল আলু রয়েছে।
আলু গাছগুলির প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার (২৪
ইঞ্চি) লম্বা হয়। গাছটি শাখা-প্রশাখাযুক্ত।
এর পাতা সর্পিলাকারে সজ্জিত থাকে। এর ডাঁটায়
নরম কাঁটা থাকে। পাতাগুলি ২০-৩০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে। পাতার নিচের দিকের রঙ
সাদা। পাতাগুলোর অগ্রভাগ সরু এবং বোঁটা ছোটো।
আলু গাছের ব্যাস ১/১৬ ইঞ্চি। এর পুংদণ্ডের
দৈর্ঘ্য ০.৫-১ ইঞ্চি। এর বীজকোষ প্রায় ১ ইঞ্চি লম্বা হয়।
এর কাণ্ড কন্দ আকারে মাটির নিচে বৃদ্ধি পায়।
একটি গাছ থেকে ৩টি থেকে ৫টি পর্যন্ত আলু পাওয়া যায়। আলু সাধারণত অনেকদিন ঘরে
সংরক্ষণ করা যায়। তবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য হিমঘরে রাখা হয়।
দুই বা তিন চোখ বিশিষ্ট কন্দের খণ্ড রোপণ
করে গাছের বংশ বৃদ্ধি করা হয়। এই সকল চোখ থেকে, চারা গাছ বের হয়। এই চোখযুক্ত আলুর
কন্দগুলো সাধারণভাবে আলুর বীজ বলা হয়।
আলু চাষ করার জন্য বিশেষ ভাবে জমি চাষ করে
সারিবদ্ধভাবে চারযুক্ত কন্দাংশ রোপণ করা হয়।
আলু চাষের জন্য বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে
উপযোগী। আলুর চাষের জন্য নরম ও ঝুরঝুরা মাটি প্রয়োজন। আলুর জমিতে ঢেলা থাকা উচিত
নয়। মই ও মুগুর দিয়ে ঢেলা ভেঙ্গে ফেলে জমি ৪-৫ বার গভীরভাবে চাষ করতে হয়। জমির
উর্বরতা, সেচের সুবিধা ও জাতের উপর সারি থেকে সারির দূরত্ব নির্ভর করে। সারি থেকে
সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি (৬০ সে.মি.) এবং সারিতে ১০ ইঞ্চি (২৫ সে.মি.) দূরে দূরে বীজ
বপন করতে হবে।ভালোভাবে জমি তৈরি করার পর সারির প্রয়োজনীয় দূরত্বে লাঙ্গল টেনে
ক্ষেতের একমাথা থেকে অন্যমাথা পর্যন্ত নালা কাটতে হবে। প্রত্যেকটি নালা ৪-৫ ইঞ্চি
(১০-১২ সে.মি.) গভীর করতে হবে। ৪-৫ সে.মি. মাটির গভীরে বীজ বপন করতে হবে। আলু
শীতকালীন ফসল। আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আলুর বীজ
লাগানোর উপযু্ক্ত সময়। তবে আগাম ফসল পাওয়ার জন্য ভাদ্র মাসে আলুর বীজ লাগানো হয়।
বীজ আলু বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে (স্টোলন
বের হওয়ার সময়) প্রথম সেচ দিতে হয়, দ্বিতীয় সেচ বীজ আলু বপনের ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে
(শুটি বের হওয়া পর্যন্ত) এবং তৃতীয় সেচ আলুর বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে (শুটির
বৃদ্ধি পর্যন্ত) দিতে হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বেশি ফলন পাওয়ার জন্য ৮-১০ দিন পর
পর সেচ দেওয়া হয়ে থাকে।
আলু গাছের রোগ
- ১. আলুর মড়ক বা নাবি ধ্বসা (লেইট
ব্লাইট) রোগ : ফাইটপথোরা ইনফেসটেনস নামক ছত্রাকের আক্রমণে আলুর মড়ক বা নাবি
ধ্বসা (লেইট ব্লাইট) রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতা, ডগা ও কান্ডে ছোট ভিজা দাগ
পড়ে। ক্রমে দাগ বড় হয় ও সমগ্র পাতা, ডগা ও কাণ্ডের কিছু অংশ ঘিরে ফেলে। বাতাসের
আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকলে ২-৩ দিনের মধ্যেই জমির অধিকাংশ ফসল আক্রান্ত হয়ে
পড়ে। ভোরের দিকে আক্রান্ত পাতার নীচে সাদা পাউডারের মত ছত্রাক চোখে পড়ে।
আক্রান্ত ক্ষেতে পোড়া পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় এবং মনে হয় যেন জমির ফসল পুড়ে গেছে।
- ২. আলুর আগাম ধ্বসা বা আর্লি ব্লাইট
রোগ : আলটারনারিয়া সোলানাই নামক ছত্রাকের আক্রমণে আলুর আগাম ধ্বসা বা আর্লি
ব্লাইট রোগ হয়ে থাকে। নিচের পাতা ছোট ছোট বাদামী রংয়ের অল্প বসে-যাওয়া কৌণিক
দাগ পড়ে। আক্রান্ত অংশে সামান্য বাদামী এলাকার সাথে পর্যায়ক্রমে কালচে রংয়ের
চক্রাকার দাগ পড়ে। পাতার বোঁটা ও কান্ডের দাগ অপেক্ষাকৃত লম্বা ধরণের হয়। গাছ
হলদে হওয়া, পাতা ঝরে পড়া এবং অকালে গাছ মরে যাওয়া এ রোগের লক্ষণীয় উপসর্গ।
আক্রান্ত টিউবারের গায়ে গাঢ় বাদামী থেকে কালচে বসে যাওয়া দাগ পড়ে।
- ৩. কাণ্ড ও আলু পচা রোগ :
স্কেলারোসিয়াম রল্ফসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে কাণ্ড ও আলু পচা রোগ হয়ে থাকে। এ
রোগের আক্রমণের ফলে বাদামী দাগ কাণ্ডের গোড়া খেয়ে ফেলে। গাছ ঢলে পড়ে এবং পাতা
বিশেষ করে নীচের পাতা হলদে হয়ে যায়। আক্রান্ত অংশে বা আশেপাশের মাটিতে ছত্রাকের
সাদা সাদা জালিকা দেখা যায়। কিছু দিন পর সরিষার দানার মত রোগ জীবাণুর গুটি বা
স্কেলারোসিয়া সৃষ্টি হয়। আলুর গা থেকে পানি বের হয় এবং পচন ধরে। ক্রমে আলু পচে
নষ্ট হয়ে যায়।
- ৪. আলুর স্টেম ক্যাঙ্কার স্কার্ফ
রোগ : রাইজকটোনিয়া সোলানাই নামক ছত্রাকের আক্রমণে আলুর স্টেম ক্যাঙ্কার
স্কার্ফ রোগ হয়ে থাকে। গজানো অঙ্কুরের মাথায় এবং স্টেলনে আক্রমণের দাগ দেখা
যায়। বড় গাছের গোড়ার দিকে লম্বা লালচে বর্ণের দাগ বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কান্ডের
সাথে ছোট ছোট টিউবার দেখা যায়। আক্রান্ত টিউবারের গায়ে শক্ত কালচে এবং সুপ্ত
রোগ জীবাণুর গুটি দেখা যায়।
- ৫. ঢলে পড়া এবং বাদামী পচন রোগ :
সিউডোমোনাস সোলানেসিয়ারাম নামক ছত্রাকের আক্রমণে ঢলে পড়া এবং বাদামী পচন রোগ
হয়ে থাকে। গাছের একটি শাখা বা এক অংশ ঢলে পড়তে পারে। পাতা সাধারণত হলুদ হয় না
এবং সবুজ অবস্থায়ই চুপসে ঢলে পড়ে। গোড়ার দিকে গাছের কান্ড ফেলে দেখলে বাদামী
আক্রান্ত এলাকা দেখা যায়। ঢলে পড়া গাছ খুব দ্রুত চুপসে যায়। আক্রান্ত আলু কাটলে
ভিতরে বাদামী দাগ দেখা যায়। আলুর চোখ সাদা পুঁজের মত দেখা যায় এবং আলু অল্প
দিনের মধ্যেই পচে যায়।
- ৬. আলুর মোজাইক রোগ : আলুর
মোজাইক রোগে পাতায় বিভিন্ন ধরনের ছিটে দাগ পড়ে, পাতা বিকৃত ও ছোট হয়। ভাইরাস
এবং আলুর জাতের উপর নির্ভর করে লক্ষণ ভিন্নতর হয়। লতা ঝুলে পড়ে এবং পরবর্তীতে
গাছ মারা যায়।
- ৭. আলুর হলদে রোগ : স্থানীয়
জাতের আলুতে আলুর হলদে রোগ বেশি হয়। পাতা কুঁচকে যায় ও ছিটা দাগ দেখা যায়। দূর
থেকে আক্রান্ত গাছ সহজেই চোখে পড়ে। আলু ছোট হয় বা একেবারেই হয় না।
- ৮. আলুর শুকনো পচা রোগ :
ফিউজেরিয়াম প্রজাতির ছত্রাকের আক্রমণে আলুর শুকনো পচা রোগ হয়ে থাকে। আলুর গায়ে
গভীর কালো দাগ পড়ে। আলুর ভিতরে গর্ত হয়ে যায়। প্রথম পচন যদিও ভিজা থাকে পরে তা
শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। আক্রান্ত অংশে গোলাকার ভাঁজ এবং কখনো কখনো ঘোলাটে সাদা
ছত্রাক জালিকা দেখা যায়।
- ৯. আলুর নরম পচা রোগ : আরউইনা
কেরোটোফোরা ছত্রাকের আক্রমণে আলুর নরম পচা রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত অংশের কোষ
পচে যায়। পচা আলুতে এক ধরনের উগ্র গন্ধের সৃষ্টি হয়। চাপ দিলে আলু থেকে এক
প্রকার দূষিত পানি বেরিয়ে আসে। আক্রান্ত অংশ ঘিয়ে রংয়ের ও নরম হয় যা সহজেই
সুস্থ অংশ থেকে আলাদা করা যায়।
- ১০. আলুর কাটুই পোকা : কাটুই
পোকার কীড়া বেশ শক্তিশালী, ৪০-৫০ মি.মি. লম্বা। পোকার উপর পিঠ কালচে বাদামী
বর্ণের, পার্শ্বদেশ কালো রেখাযুক্ত এবং বর্ণ ধূসর সবুজ। শরীর নরম ও তৈলাক্ত।
কাটুই পোকার কীড়া চারা গাছ কেটে দেয় এবং আলুতে ছিদ্র করে আলু ফসলের ক্ষতি করে
থাকে। পোকার কীড়া দিনের বেলা মাটির নীচে লুকিয়ে থাকে। আলু কাটা গাছ অনেক সময়
কাটা গোড়ার পাশেই পড়ে থাকতে দেখা যায়।
- ১১. আলুর সুতলি পোকা : আলুর
সুতলি পোকার মথ আকারে ছোট, ঝালরযুক্ত, সরু ডানাবিশিষ্ট ধূসর বাদামী হয়।
পূর্ণাঙ্গ কীড়া সাদাটে বা হাল্কা গোলাপী বর্ণের এবং ১৫-২০ মি.মি. লম্বা হয়ে
থাকে। কীড়া আলুর মধ্যে লম্বা সুড়ঙ্গ করে আলুর ক্ষতি করে থাকে। বাংলাদেশে
বসতবাড়িতে সংরক্ষিত আলু এ পোকার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সূত্র :
ভারতীয় বনৌষধি। দ্বিতীয় খণ্ড। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০২।