আম (বৃক্ষ ও ফল)
আম নামক ফলের গাছ

ম্যাঞ্জিফেরা গণের চিরহরিৎ বহুবর্ষজীবী সপুষ্পক বৃক্ষ। ৫.৬ থেকে ৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে বিবর্তনের ধারায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই বৃক্ষের উদ্ভব হয়েছিল।

প্রজাতি ভেদে এই গাছ বিভিন্ন উচ্চতার হয়ে থাকে। এই উচ্চতার পার্থক্য ১৫ থেকে ৫০ ফুট-এর ভিতরে হয়ে থাকে।

কাণ্ড: এদের কাণ্ড শক্ত, কাষ্ঠালো, ধূসর-বাদামী রঙের এবং অমসৃণ। কাণ্ড কাটলে এক ধরনের সাদাটে বা স্বচ্ছ আঠালো কষ  বের হয়।

পাতা: এই গাছের পাতাগুলো সরল, একান্তর এবং ল্যান্সের মতো লম্বাটে।  কচি পাতাগুলো তামাটে বা লালচে রঙের হলেও পরিপক্ক পাতা গাঢ় সবুজ হয়।

পুষ্পমঞ্জরী ও ফুল (মুকুল): আমের ফুলগুলো শাখার অগ্রভাগে থোকা থোকা পুষ্পমঞ্জরী বা প্যানিকল হিসেবে দেখা দেয়। একে 'আমের মুকুল' বলা হয়। এক একটি মুকুলে কয়েক হাজার ছোট ফুল থাকে। এর মধ্যে কিছু ফুল পুরুষ এবং কিছু উভয়লিঙ্গী হয়। এদের পরাগায়ন সাধারণত মৌমাছি, মাছি বা বাতাসের মাধ্যমে ঘটে।

ফুল গুলো পীতবর্ণ, গন্ধযুক্ত হয়। ফুলে পাঁচটি পাপড়ি আছে। পাঁচটি পুংকেশরের একটি বড়, অপর চারটি ছোট। বাংলাদেশে চৈত্র মাসের শেষের দিকে আমের গুঁটি দেখা যায়।

ফলের গঠন ফলের বাইরের পাতলা আবরণ থাকে। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ এবং পাকলে জাতভেদে হলুদ, লাল বা কমলা হয়। ফলের মধ্যবর্তী অংশ কাঁচা অবস্থায় শক্ত থাকে। পাক ফলের মধ্যবর্তী রসালো, নরম এবং মিষ্টি স্বদের হয়। এর ভিতরের অংশে থাকে বীজ।

বীজ:
আম ফলের ভেতরের শক্ত ও তন্তুময় অংশ। এই অংশের ভিতরে বীজ থাকে। একে বাংলায় আঁটি বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে আঁটি থেকে নতুন চারা জন্মে। 

প্রাপ্তিস্থান বাংলাদেশ, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ, মিশর, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানে আম প্রচুর পরিমাণ জন্মে। বাংলাদেশে রাজশাহী এবং তদ্‌সংলগ্ন এলাকায় সবচেয়ে বেশি জন্মে। বাংলাদেশে আম একটি সর্বাধিক জনপ্রিয় ফল।

আমের পুষ্টিগুণ
ভিটামিন-এ (বিটা ক্যারোটিন), ভিটামিন-সি এবং পটাশিয়ামের চমৎকার উৎস। এতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য আঁশএবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (যেমন: কুয়ারসেটিন ও ম্যাঞ্জিফেরিন) থাকে।

খাদ্য প্রকৃতি:
আম থেকে বিভিন্ন জাতীয় খাবার প্রস্তুত করা হয়। যেমন আমের বিভিন্ন ধরনের আচার, আমের জুস, আমসত্ত, আমচুর ইত্যাদি। কাঁচা আম রান্নাতে বিশেষ করে ডালের সাথে ব্যবহার করার রীতি আছে। পাকা ও সুমিষ্ট আমের রসের সাথে দুধভাত খাওয়ার রীতি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত। বাংলাদেশে বহু প্রজাতির আম প্রচলিত আছে। এসকল আম আঞ্চলিক নাম নিয়ে খ্যাতি লাভ করেছে। যেমন- ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, সিন্দুরি ইত্যাদি।

আম সাধারণত কাঁচা অবস্থায় শক্ত ও অম্লযুক্ত হয়ে থাকে। কিন্তু পাকলে তা অত্যন্ত রসালো ও মিষ্টযুক্ত হয়ে থাকে। কোন কোন আম কাঁচা অবস্থাতেই মিষ্ট হয়ে থাকে। এই জাতীয় আমকে কাঁচামিঠা আম বলে।

কাঠের ব্যবহার: আম গাছের কাঠ তেমন মূল্যবান আসবাবপত্রে ব্যবহার হয় না। ছোট ছোট গাছের কাঠ সাধারণত জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বহু পুরানো গাছ থেকে অনেক ক্ষেত্রে স্বল্প মূল্যের চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে।

আমের জাত
বাংলাদেশে আকার, স্বাদ , গন্ধ ইত্যাদির বিচারে আমকে নানা ন ামে অভিহিত করা হয়। যেমন-