চা (বৃক্ষ)
চীন চা>বাংলা চা
ইংরেজি :
Tea

Kingdom (রাজ্য): Plantae
Division (
বিভাগ) : Magnoliophyta
Class (
শ্রেণী) : Magnoliopsida
Order (
বর্গ) : Ericales
Family (
গোত্র) : Theaceae
Genus (
গণ) : Camellia
Species: (
প্রজাতি) : sinensis

ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা  {| কাষ্ঠময় উদ্ভিদ | ভাস্কুলার উদ্ভিদ | উদ্ভিদ | জীবসত্তা | জীবন্তবস্তু | দৈহিক-লক্ষ্যবস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}

Theaceae গোত্রের গ্রীষ্মণ্ডলীয় গুল্মজাতীয় চিরসবুজ উদ্ভিদ। এর পাতার নির্যাস পানীয়রূপে ব্যবহার করা হয়। এই গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বর্তমানে পৃথিবীর বহু দেশে উচ্চভূমিতে এর চাষ হয়ে থাকে। বর্তমানে চীন, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাতে এর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে।

চায়ের আসাম এবং চীনজাতীয় দুটি প্রকরণ আছে। এর ভিতরে আসাম জাতীয় চা গাছ ভারত ও শ্রীলঙ্কায় অধিক চাষ করা হয়। এ ধরনের গাছ বেশ বড় এবং বহু পাতাযুক্ত হয়। এই কারণে এটি বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করার জন্যে বিশেষ উপযোগী। এ গাছ প্রায় ৬ মিটার বা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। পাতার নাগাল পাওয়া এবং পাতা সংগ্রহের জন্য গাছগুলোকে ১.২ মিটার বা ৪ ফুটের অধিক বড় হতে দেয়া হয় না। ছেঁটে দেয়ার ফলে চা গাছগুলো ঘঝোঁপে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে চীনজাতীয় গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে পাতার সংখ্যাও অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতাসম্পন্ন হয়ে থাকে। এই গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

এদের ফুলের রঙ হলদেটে সাদা। পাতার রঙ সবুজ এবং ৪-১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতার ৪% ক্যাফিন নামক উপকরণ পাওয়া যায়।

চা ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের ফসল হলেও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলেও জন্মে। সাধারণত ঢালু জমিতে  পরিস্কার করা হয়। এই কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়ি বা উচ্চ ঢালু জমি চা চাষের জন্য সবিশেষ উপযোগী। পানি নিষ্কাশনের বন্দোবস্ত থাকলে উচ্চ সমতল ভূমিতেও চা চাষ করা সম্ভবপর। হিউমাস সারযুক্ত এবং লৌহমিশ্রিত দো-আঁশ মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন। চা চাষের জন্য ১৭৫ - ২৫০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত আবশ্যক। এজন্য মৌসুমী ও নিরক্ষীয় অঞ্চলের দেশগুলোয় চা চাষের উৎপাদন বেশী হয়ে থাকে।

চা-চাষের শুরুতে আলাদা বীজতলায় তৈরী করা হয়। এই বীজতলায় চারাগুলো ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হলে, সেগুলোকে চা-চাষের উপযোগী জমিতে সারিবদ্ধভাবে, দেড় মিটার পরপর রোপণ করা হয়ে থাকে। এরপর গাছগুলোকে বৃদ্ধির জন্য যথামাত্রায় সার প্রয়োগ ও পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। চা গাছে টানা রৌদ্র ক্ষতিকর, এই কারণে চা-বাগানে ছায়-প্রদায়ী বৃক্ষ রোপণ করা হয়।

এভাবে দুই থেকে তিন বছর পরিচর্যার পর পাতা সংগ্রহের উপযোগী করে তোলা হয়। কিন্তু গাছগুলো পাঁচ বছর না হওয়া পর্যন্ত যথাযথভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। একটি চা গাছ গড়পড়তা ৩০ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত উৎপাদনের উপযোগী থাকে।

চা শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প। তবে চা উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে আছে চীন, ভারত, কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টমে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের চা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল বছরে প্রায় সাড়ে ৬০০ মিলিয়ন কেজি।বাংলাদেশে ছোটো বড় মিলিয়ে প্রায় ১৬৩টি চা বাগান আছে। এর ভিতর সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১৪৮টি চা বাগান। বাংলাদেশের প্রায় সকল চা বাগান ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত। তবে সম্প্রতি পঞ্চগড় জেলায় কিছু নতুন চা বাগান স্থাপিত হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫টি দেশে চা রফতানি হয়।
এই দেশগুলোর ভিতরে রয়েছে- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, রাশিয়া, চেক ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্র, বুলগেরিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরী, জাপান, মিশর, সুদান, জর্ডান, গ্রীস, সাইপ্রাস, পাকিস্তান।
 

২. চা (পানীয়)
 
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | পানীয় | খাদ্য-পুষ্টি | বস্তু | দৈহিক সত্তা |  সত্তা |}

চা-গাছের প্রক্রিয়াজাত পাতা- পানিতে সিদ্ধ করে যে নির্যাস পাওয়া যায়, পানীয় হিসাবে চা নামে অভিহিত করা হয়। এই নির্যাসের সাথে দুধ, চিনি, লেবু, বা অন্যান্য মসলা সহযোগে যে বিবিধ ধরনের পানীয় তৈরি করা হয়চায়ের নির্যাসের প্রধান উপকরণ ভেদে এর বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন-
দুধ-চা= দুধ মেশানো চা।
রঙ-চা=দুধ ছাড়া সাধারণ চা।
লেবু চা= দুধের পরিবর্তে লেবুর রস দিয়ে প্রস্তুতকৃত চা।
আদা-চা= ঠাণ্ডা লাগা, গলার খুসখুসানি দূর করাৱ জন্য আদার রসযুক্ত চা।

নিয়মিত চা ও কফি পানে কমে হৃদরোগের ঝুঁকি। দেখা গেছে চা বা কফি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ কমিয়ে দেয়। দিনে ৬ কাপ চা পানে করোনারি সমস্যার ঝুঁকি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমে যায়।
গবেষকদের মতে চা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ ক্লান্তি দূরীকরণে চা একটি উত্তম পানীয় হিসাবে স্বীকৃত।