ধান
বানান বিশ্লেষণ : ++ন্+অ।
উচ্চারণ:
ʰan (
ধান্)
শব্দ-উৎস: সংস্কৃত धान्य (ধান্য)>প্রাকৃত ধন্ন>বাংলা ধান।
পদ: বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {
খাদ্যশস্য| খাদ্যদ্রব্য | খাদ্য-পুষ্টি | বস্তু | দৈহিক সত্তা | সত্তা |}
অর্থ: Poaceae গোত্রের এক প্রকার উদ্ভিদ।
সমার্থক শব্দাবলি: ধান, ধান্য।

ইংরেজি: Rice

বিস্তারিত:
Poaceae গোত্রের এক প্রকার উদ্ভিদ। এর প্রধান পরিচয় খাদ্য শস্য। এটি একবীজপত্রী তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ। মূলত গ্রীষ্মপ্রধান এবং অবগ্রীষ্মমণ্ডলে ধানের চাষ হয়। প্রজাতি ভেদে ধান গাছ লম্বায় দুই থেকে দশ-বার ফুট দীর্ঘ হয়। এর কাণ্ড নলাকৃতির এবং গ্রন্থিযুক্ত। এর পাতা দীর্ঘ এবং অগ্রভাগ সুচালো। এই গাছ সমতলভূমিতে ভাল জন্মে। তবে পাহাড়ের ঢালে, জলাভূমিতেও এর চাষ করা হয়।

ধারণা করা ভারত ও চীনে ধান চাষ হয়ে আসছে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে থেকে। ধানের প্রধান দুটি প্রজাতি হলো
Oryza sativa এবং Oryza glaberrima। এর ভিতরে Oryza sativa হলো এশিয়ার ধান। পক্ষান্তরে Oryza glaberrima আফ্রিকার ধান হিসাবে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় ১১৪টি দেশে ধানের চাষ হয়ে থাকে। প্রজাতি বা উপ-প্রজাতিভেদ ধান গাছের যে নামই থাক না কেন, স্থানীয়ভাবে এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে।

আবাদ ও জাতির উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের ধানকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই প্রধান তিনটি ভাগ হলো আমন আউশ ও বোরো।

আমন ধান
শীতকালীন ধানকে বাংলাদেশে আমন ধান বলা হয়। এর অপর নাম আগুনী ও হৈমন্তিক। উল্লেখ্য সংস্কৃত হৈমন' বা হৈমন্তিক' শব্দের অপভ্রংশ। আমন ধান তিন প্রকার। যথা

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে। এবং প্রতিটি প্রজাতির ধানের স্থানীয় নাম রয়েছে। যেমন ইন্দ্রশাইল, কাতিবাগদার, ক্ষীরাইজালি, গদালাকি, গাবুরা, চিংড়িখুশি, চিটবাজ, জেশোবালাম, ঝিঙ্গাশাইল, ঢেপি, তিলককাচারী, দাউদিন, দাদখানি, দুদলাকি, দুধসর, ধলা আমন, নাগরা, নাজিরশাইল, পাটনাই, বাঁশফুল, বাইশ বিশ, বাদশাভোগ, ভাসা মানিক, মালিয়াডাক্র, রাজাশাইল, রূপশাইল, লাটশাইল, হাতিশাইল ইত্যাদি।

আউশ ধান
আশু (দ্রুত) ফসল উৎপন্ন হওয়ার বিচারে এই ধানের নাম করা হয়েছে আউশ। এই ধান সাধারণত জন্মে বর্ষাকালের আষাঢ় মাসে। এই কারণে এর অপর নাম আষাঢ়ী ধান। তবে এই ধান বৎসরের যে কোন সময়েই চাষ করা যায়। বাংলাদেশে আউশ ধানের যে নামগুলো পাওয়া যায়, তা হলো
আটলাই, কটকতারা, কুমারী, চারনক, দুলার, ধলাষাইট, ধারাইল, পটুয়াখালি, পশুর, পানবিড়া, পাষপাই, পুখী, মরিচবেটি, হরিণমুদা, হাসিকলমি, সূর্যমুখ ইত্যাদি।

বোরো ধান

সাধারণত নিচু জমিতে এই ধানের চাষ করা হয়। বোরো মূলত রোপণ করে চাষ করা হয়। সে কারণে একে রোপা ধান হিসাবেও কোনো কোনো অঞ্চলে অভিহিত করা হয়। তবে বসন্তকালে এই ধান জন্মে বলে একে বাসন্তিক ধান বলা হয়। এই জাতীয় ধানের নামগুলো হলো
আমন বোরো, খৈয়াবোরো, টুপা, পশুশাইল, বানাজিরা, বোরোবোরো ইত্যাদি।

চাল বা ধান ফল
ধানগাছে ধানফল ছড়া আকারে জন্মে। এ ছড়া থেকে ধানবীজ পৃথক করার পর যে দণ্ড পাওয়া যায়, তাকে খড় বা নাড়া বলা হয়। যদিও ধান সাধারণত লম্বাটে হয়ে থাকে। তবে প্রজাতিভেদে লম্বায় বড়-ছোটো হয়। ধানের আবরণ ফেলে দিলে ভিতরে শ্বেতসার প্রধান যে ফল পাওয়া যায়, তাকে চাল বা চাউল বলা হয়। ধানের নামানুসারেই চালের নামকরণ করা হয়। যেমন 'কুমারী ধান-এর চালের নাম হয় 'কুমারী চাল'। ধানের খোসাকে বলা হয়, তুষ।

চাল তৈরির প্রক্রিয়া অনুসারে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
১. সেদ্ধ চাল: এক্ষেত্রে ধানকে আগে পানিতে সিদ্ধ করে শুকানো হয়। পরে এই শুকনো ধান থেকে খোসা ছাড়িয়ে যে চাল তৈরি করা হয়, তাকে সেদ্ধ বা সিদ্ধ চাল বলা হয়।

২. ধানকে রৌদ্রে উত্তমরূপে শুকিয়ে, তারপর খোসা ছড়িয়ে যে চাল তৈরি করা হয়, তাকে আতপ চাল বলা হয়।
 

চাল শর্করা-প্রধান শস্য। কিন্তু এর সাথে অন্যান্য যে সকল খাদ্য-উপাদান পাওয়া যায়, তা হলো ভিটামিন বি-কম্প্লেক্স ও খনিজ পদার্থ। তুলনামূলকভাবে আমিষ ও তৈল জাতীয় উপাদান অতি নগণ্য।

পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ চালকে সিদ্ধ করে ভাত হিসাবে খায়। এশিয়ার বেশিরভাগ অংশের মানুষ, শর্করা জাতীয় খাবার হিসাবে ভাতকে প্রধান খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। এছাড়া চাল থেকে পিঠা, নানা রকম মুখরোচক মিষ্টান্ন তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে মুড়ি, চিড়া ইত্যাদির মতো কিছু খাবার তৈরি করা হয়। জাপান ও চীনে চাল থেকে সাকি নামক চোলাই মদ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে বাংলা মদ তৈরিতে অনেকে ভাত ব্যবহার করে থাকে।


সূত্র :
বাংলা বিশ্বকোষ। তৃতীয় খণ্ড। জুলাই ১৯৭৩