Kingdom: Plantae
|
গাজর
সংস্কৃত : গর্জর।
ইংরেজি :
Carrot
বৈজ্ঞানিক নাম : Daucus carota।
Apiaceae
গোত্রের একটি বর্যজীবী
উদ্ভিদ। ইউরোপ ও এশিয়ার একটি আদি উদ্ভিদ। বাংলাদেশের এটি একটি জনপ্রিয় শীতকালীন
সবজি। এই গাছের মূল সব্জি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। গাজর বলতে সাধারণভাবে এর মূলকেই
শনাক্ত করা হয়। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় গাজর চাষ করা হয়। তবে যশোর, মানিকগঞ্জ,
নরসিংদি, পাবনা প্রভৃতি জেলায় গাজর উৎপাদন বেশি হয়।
এর কাণ্ড সর্বোচ্চ ৪ ফুট পর্যন্ত হয়। এর পাতার দৈর্ঘ্য ২-৩ ইঞ্চি। পাতায় রোম থাকে। এর পুষ্পদণ্ডের পত্র অনেক। এতে ৩টি আঁকড়ি থাকে। ফুলের পাপড়ি ডিম্বাকৃতির। ফুলের রঙ সাদা এবং উজ্জ্বল। ফল ১/১০ ইঞ্চি। শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মের প্রারম্ভকাল পর্যন্ত এর ফুল ও ফল পাওয়া যায়। সবজি হিসাবে ব্যবহৃত গাজর গাছের মূলের রঙ গাঢ় কমলা। প্রজাতিভেদে এর রঙ পার্পেল, লাল, সাদা বা হলুদ হতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে খাদ্য উপাদান |
কার্বোহাইড্রেড ৯ গ্রাম চিনি ৫ গ্রাম আঁশ ৩ গ্রাম চর্বি ০.২ গ্রাম আমিষ ১ গ্রাম ভিটামিন এ 835 μg (104%) বিটা-ক্যারোটিন 8285 μg (77%) ভিটামিনলুটেইন এবং জিক্সানথিন 256 μg থায়ামিন (vit. B1) 0.04 mg (3%) রিবোফ্লাভিন (vit. B2) 0.05 mg (4%) নিয়াসিন (vit. B3) 1.2 mg (8%) ভিটামিন B6 0.1 mg (8%) ফোলেট (vit. B9) 19 μg (5%) ভিটামিন সি 7 mg (8%) ক্যালসিয়াম 33 mg (3%) লৌহ 0.66 mg (5%) ম্যাগনেশিয়াম 18 mg (5%) ফসফোরাস 35 mg (5%) পটাশিয়াম 240 mg (5%) সোডিয়াম 2.4 mg (0%) |
ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় গাজর খুব ভালো জন্মে। সাধারণত নভেম্বর মাসে এর বীজ বপন করা হয়। অনেকে আগাম ফসল উৎপাদনের জন্য সেপ্টেম্বর মাসে বীজ বপন করে থেকেন। তবে সাধারণত অক্টোবরের শেষ ভাগ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বীজ বপন করা হয়। গাজর চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। উঁচু রোদযুক্ত জমি গাজর চাষের জন্য ভালো। গাজর চাষের জন্য ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত গভীর করে চাষ করা হয়। এ জন্য কৃষকরা ৪ থেকে ৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে তৈরি করেন। এক্ষেত্রে জমির ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝরঝরে করা হয়। জমিতে ৮-১০ ইঞ্চি দূরে দূরে সারি তৈরি করে গাজরের বীজ বপন করা হয়।
গাজর চাষের জন্য জৈব সার সবচেয়ে উপযোগী। এক্ষেত্রে গোবর ও আবর্জনা পচা সার ব্যবহার সবচেয়ে ভালো। বীজ বপনের পর গাজরের ক্ষেতে সামান্য পানি দিলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো হবে। সাধারণত বীজ বপনের ৬ থেকে ৭ দিন পরে চারা বের হতে শুরু করে। ফসল তোলার সামান্য আগে প্রয়োজনে কৃষকরা আর একবার সেচ দিয়ে থাকেন। তবে গাজর চাষের জমিতে পানি জমলে ফসলের ক্ষতি হয়।
গাজরের প্রধান শত্রু হলো লীফ হপার পোকা। এর আক্রমণে গাজরের ছোট বা কচি পাতাগুলো হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। পাতার পাশের ডগাগুলো হলুদ ও বিবর্ণ হয়ে যায়। তাছাড় এই পোকা গাজরের পাতা ও গাছের কচি অংশের রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে ফসলের অনেক ক্ষতি করে। মূল ও পাতার গোড়ায় ব্যাক্টেরিয়াজনিত পচন রোগ দেখা যায়। নাইট্রোজেন সার অতিরিক্ত প্রয়োগে এ রোগ বেড়ে যায়।
ভালো গাজর পাওয়ার জন্য
প্রায় ১০০ দিন অপেক্ষা করা হয়। ভালোমানের গাজর পেতে হলে বীজ বোনার ১০০ থেকে ১২৫
দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে প্রায়
১৫০০-২০০০ কেজি গাজর পাওয়া সম্ভব।
রান্না করে, সালাদ তৈরি বা কাঁচা অবস্থায় গাজর খাওয়া যায়। এছাড়া গাজর দিয়ে বিভিন্ন
সুস্বাদু খাবার তৈরি হয়। যেমন—
হালুয়া, সেমাই, লাড্ডু, পায়েস সবচেয়ে বেশি তৈরি করা হয়।
সূত্র :
উচ্চ মূল্য ফসলের উৎপাদন প্রযুক্তি, নভেম্বর ২০০৫, কৃষি সম্প্রসারণ
অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয়, ঢাকা।
শাকসবজি এবং ফলমূলের পুষ্টি ও ওষধিগুণ । সোবহানী, মোঃ মাহবুব, ফেব্রুয়ারি
২০০৫, নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন।
সবজি উৎপাদনের উন্নত কলাকৌশল। অক্টোবর ২০০৬, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা
ইনস্টিটিউট, জয়দেবপুর, গাজীপুর।
ভারতীয় বনৌষধি। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০১
http://www.infokosh.bangladesh.gov.bd/index.php