Kingdom: Plantae
Order: Caryophyllales
Family: Tamaricaceae
Genus: Tamarix

এই গণের অন্তর্গত প্রায় ৫০ প্রকার উদ্ভিদ রয়েছে। এর ভিতরের উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো হলো

Tamarix aphylla (L.) H.Karst.
Tamarix chinensis Lour.
Tamarix dioica Roxb. ex Roth
Tamarix gallica L.
Tamarix laxa Willd.
Tamarix parviflora DC.
Tamarix ramosissima Ledeb.

ঝাউ

সংস্কৃত : ঝোবুক, সভক
বাংলা : ঝাউ, বন ঝাউ।

 

Tamaricaceae গোত্রে অন্তর্গত টামারিক্স (ঝাউ জাতীয় উদ্ভিদ) গণের ভিতরে চির সবুজ বা পাতা ঝরা উদ্ভিদের সাধারণ নাম হলো ঝাউ। এর কোনোটি গুল্ম আবার কোনটি বৃক্ষ। এই গণের উদ্ভিদগুলো প্রজাতি ভেদে ১ থেকে ১৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এই গণের Tamarix aphylla  প্রজাতিটি প্রায় ১৮ মিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে। সাধারণ এই জাতীয় গাছ লবণাক্ত মাটিতে ভালো জন্মে। এই কারণে এই গণের উদ্ভিদ সমুদ্র উপকূলে প্রচুর জন্মে। তবে ক্ষারযুক্ত মাটিতেও এরা টিকে থাকত পারে।

 

এই গণের প্রজাতিগুলোর কাণ্ড এবং শাখা সরল এবং গোলকার। এদের পাতা সরু সরু এবং গুচ্ছাকারে থাকে। পাতাগুলো ১-২ মিলিমিটার লম্বা হয়। এবং শাখার অগ্রভাগে সরু ফলকের মতো ছড়ানো থাকে। এদের নবীন শাখাগুলো বেশ মসৃণ এবং লালচে বা বাদামি রঙের হয়। কিন্তু পুরানো ডালের রঙ হয় নীলাভ-লাল বা লাচে হয়। এদের ফুল ধরে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। এই গণের উদ্ভিদগুলো শাখা, মূল বা বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে।

 

ঝাউ জাতীয় উদ্ভিদের উল্লেখযোগ্য প্রজাতিসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

 

 

Tamarix aphylla (L.) H.Karst.:

Tamarix aphylla (L.) H.Karst.:

এর অন্যান্য নাম এ্যাথেল পাইন, এ্যাথেল গাছ, এ্যাথেল টামারিক্স। টামারিক্স গণের উদ্ভিদগুলোর ভিতর, এই ঝাউগাছগুলো সবচেয়ে বেশি লম্বা হয়। এর উচ্চতায় প্রায় ১৮ মিটার (৬০ ফুট) হয়। এই গাছগুলো চিরজবুজ। 

আফ্রিকার পূর্ব, উত্তর ও মধ্যভাগে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়।  এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিমাঞ্চলে এই গাছ জন্মে। বর্তমানে এই গাছ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অষ্ট্রেলিয়ার লাগানো হয়েছে। প্রবল বায়ুপ্রবাহ রোধে এই গাছ অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

Tamarix chinensis Lour.

Tamarix chinensis Lour.
এর অন্যান্য নাম চীনা টামারিক্স। পাঁচ-পুংকেশর টামারিক্স বা লবণ-সিডার। এই ঝাউগাছগুলোর আদিনিবাস চীন এবং কোরিয়া। বাংলা নামচীনা ঝাউ। এই ঝউগাছ সাধারণ লবণাক্ত ভূমিতে আর্দ্র আবহাওয়া ভালো জন্মে। এই কারণে চীনের সমুদ্র-উপকূলে এই গাছ প্রচুর দেখা যায়।

এই গাছের একটি সরল গুড়ির অনেকখানি উপরে উঠে। এরপর শাখাপ্রশাখা বিস্তারলাভ করে। উপরে দিকটা ঘন পাতায় ঝোপের সৃষ্টি করে। এদের উচ্চতা সর্বোচ্চ ১২ মিটার পর্যন্ত হয়। এদের বাকলের রঙ লালচে, বাদামি বা কালো হয়ে থাকে।

 

Tamarix dioica Roxb. ex Roth

Tamarix dioica Roxb. ex Roth
এর সংস্কৃত নাম পিকুলা। বাংলা নাম লাল ঝাউ। ভারতবর্ষের সিন্ধুপ্রদেশ, পাঞ্জাব এবং বাংলাদেশের সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনে এই ঝাউ গাছ দেখা যায়। এটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদ লবণাক্ত ভূমিতে, উষ্ণ আবহাওয়ায় খুব ভাল জন্মে। এই কারণে সমুদ্র উপকূলে এদের বেশি দেখা যায়।

এদের বাকল ফাটা হয় এবং বাকলে লালচে ভাব আছে। এদের পাতা লম্বা, সরু এবং গোলাকার। পাতার অগ্রভাগও সরু। পাতাগুলো ঘনভাবে সন্নিবেষ্টিত থাকে। পাতার প্রান্তভাগে সাদা হয়। ফুলগুলো একলিঙ্গিক। ফুলের রঙ লাল বা বেগুনি হয়ে থাকে। পুংকেশর থাকে পাঁচটি। স্ত্রীফুলের কেশরও পাঁচটি থাকে। এই গাছের আঠা তিক্তমধুর।
 

Tamarix gallica L.


Tamarix gallica L.
এর অপর নাম ফ্রেন্স টামারিক্স। বাংলাতে এর নাম বনঝাউ। এটি পত্রমোচী এবং গুল্মজাতীয় ঝাউ। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, সিনাই উপত্যাকা এবং সৌদি আরবে এই ঝাউ গাছ দেখা যায়। বাংলাদেশে এই ঝাউ নদী বা জলাশয়ের ধারে জন্মে। ভারতের পশ্চিম বাংলা ও বিহার অঞ্চলে দেখা যায়।

এই ঝাউগাছ উচ্চতায় ৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই গাছের ফুলের রঙ সাদা। কখনো কখনো লালবর্ণের ফুলও দেখা যায়। ফুলগুলো গুচ্ছাকারে ফোটে। বাংলাদেশে বর্ষার শেষে ফুল ফোটে। এই গাছের আঠাকে মান্না বলা হয়। ভেষজ ঔষধে এই আঠা ব্যবহার করা হয়।

Tamarix hispida
এর অপর নাম কাসগার টামারিক্স (Kashgar tamarisk,)। মধ্য এশিয়ায় এই ঝাউ গাছ জন্মে। এদের পাতার রঙ নীলাভ-সবুজ। এই গাছে ফুল ফোটে শরৎকালে। বীজ থেকে বংশ বিস্তার হয়। বিভিন্ন পরিবেশে গাছের উচ্চতার হেরফের লক্ষ্য করা যায়।

Tamarix parviflora

Tamarix parviflora
এর সাধারণ নাম ছোটফুলের টামারিক্স (smallflower tamarisk)। এই ঝাউ দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের আদি উদ্ভিদ। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই ঝাউগাছ দেখা যায়।

লবণাক্ত ভূমিতে এই গাছ ভালো জন্মে। এদের উচ্চতা প্রায় ৫ মিটার। এই গাছের পাতা ২-৩ মিলিমিটার লম্বা হয়। সরলভাবে এর পাতাগুলো ছড়ানো থাকে। পুষ্প দণ্ডে এর ফুলগুলো সজ্জিত থাকে। প্রতিটি ফুলের পাপড়ি সংখ্যা চারটি। ফুলের রঙ গোলাপী। প্রতিটি ফুল ১-৪ সেন্টিমিটার লম্বা হয়।

Tamarix ramosissima

Tamarix ramosissima
এর সাধারণ নাম লবণ সিডার (Saltcedar)। এটি গুল্ম জাতীয় পত্রমোচী ঝাউ। এটি এশিয়া ও ইউরোপের আদি গাছ। তূলনামূলকভাবে এই গাছ বেশ শক্ত। উচ্চতায় প্রায় ৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই গাছ যে কোনো মাটিতে্‌ই জন্মে। তবে জলাবদ্ধতা নেই এমন বালি মাটিতে ভালো জন্মে। প্রচুর রৌদ্র আছে এমন পরিবেশে এদের ভাল বৃদ্ধি হয়। মূলত উষ্ণ আবহাওয়া এদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

এদের কাণ্ড লালচে এবং পালকের মতো। এদের পাতার রঙ নিষ্প্রভ সবুজ। দূর থেকে এর পাতাগুলোকে সাদাটে মনে হয়।

এদের ফুলে পাঁচটি পাপড়ি থাকে। ফুলগুলো আকারে ছোটো হয় এবং এর রঙ হয় গোলাপি। গ্রীষ্মের শেষ থেকে শরতের শুরু অবধি এই গাছের ফুল দেখা যায়। মরুঅঞ্চলের ভূমি থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করার ক্ষমতা আছে। এই পানি পাতার মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে অন্যান্য উদ্ভিদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সহায়তা করে।
 


সূত্র :
ভারতীয় বনৌষধি। প্রথমখণ্ড। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০২

http://en.wikipedia.org/wiki/Tamarix