Kingdom: Plantae
|
কচু [কো.চু] [ko.cu]
সংস্কৃত
कचु (কচু)>বাংলা
কচু।
√কচ্
(শোভা বর্ধন করা বা বন্ধন করা) +উ
(উন) ,কর্তৃবাচ্য।
বিশেষ্য
ভারত
উপমহাদেশ এবং তৎসংলগ্ন দ্বীপাঞ্চলসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই গাছ পাওয়া। ধারণ করা
হয়, প্রায় দু'হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে কচুর চাষ শুরু হয়। বাংলাদেশ ও এবং
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি কচু দেখতে পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে,
বাড়ির আনাচে কানাচে, বিভিন্ন পতিত জমিতে অনাদরে-অবহেলায় অনেক সময় কচু হয়ে থাকতে
দেখা যায়। বাংলাদেশের নানা রকমের কচু রয়েছে। যে সব কচু জঙ্গলে বা পতিত ভূমিতে
আপনাআপনি জন্মায় সেগুলকে সাধারণত বুনো কচু বলা হয়। এই সব কচুর কিছু আছে, যেগুলো
খেলে গলা চুলকায়। এই জাতীয় কচুকে খাবারের অনুপযোগী বলা হয়। খাবার উপযোগী জাতগুলোর
অন্যতম হচ্ছে মুখীকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখী কচু, পাইদনাইল, ওলকচু, দুধকচু, মানকচু,
শোলাকচু ইত্যাদি। সবজি হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও সৌন্দর্যের কারণে কিছু কিছু প্রজাতির
কচু টবে ও বাগানে চাষ করা হয়। এদের মধ্যে কতগুলোর বেশ বাহারী পাতা রয়েছে। কোনো
কচুগাছ সুন্দর ফুলের জন্য চাষ করা হয়।
কচু
স্থলভূমি ও জলভুমি উভয় স্থানে জন্মাতে পারে। তবে স্থলভাগে জন্মানো কচুর সংখ্যাই
বেশি। তবে জলাশয়ের কাছে আর্দ্র ভূমিতে ভালো জন্মে।
কচুর কন্দ লম্বাটে বা গোলাকার হয়। এর মূলদেশ থেকে আলুর মতো জন্মায়। এর পাতার গোড়া হৃদপিণ্ডাকার। অগ্রভাগ মোটা এবং ক্রমশঃ সরু। পাতার ডাঁটা প্রায় ২-৩ ফুট পর্যন্ত হয়। এই গাছের স্ত্রী-পুরুষ প্রভেদ আছে।
প্রজাতিভেদে কচুর মুল, শিকড় বা লতি, পাতা ও
ডাটা সবই মানুষের খাদ্য। বাংলাদেশে কচুর কন্দ ভর্তা বা তরকারি হিসেবে ব্যবহার করা
হয়। এর পাতা দিয়ে মূলত ঘণ্ট তৈরি করা হয়। ইলিশ মাছের কাঁটাযুক্ত অংশ, কুঁচু চিংড়ি
দিয়ে কচুর ঘণ্ট তৈরি করা হয়।
এর
কন্দ স্টার্চ সমৃদ্ধ। কিছু কিছু কন্দ খেলে গলা চুলকায়। সাধারণভাবে একে গলা ধরা বলা
হয়। কিছু কিছু কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট সমৃদ্ধ একপ্রকার দানা থাকে। এই দানা গলায়
কাঁটার মতো বিঁধে যায়। রান্নার আগে কচুকে ভালোভাবে ধুলে এবং পুরো করে ওপরের অংশ
কেটে বাদ দিলে অথবা রান্না করার সময় কিছু পরিমাণ লেবুর রস, ভিনেগার অথবা তেঁতুল
গোলা পানি দিলে ক্যালসিয়াম অক্সালেট দূর করা যায়।
খাদ্যোপযোগী কচুর নানা উপ-প্রজাতির ভিতরে স্থানীয়ভাবে দুটি শ্রেণিতে ফেলা হয়। এই
শ্রেণি দুটো হলো―
সবুজ কচু ও কালো কচু। মূলত পাতার
রঙের বিচারে এই নামকরণ করা হয়। খাদ্যের গুণমান অনুসারে এই দুই ধরনের কচুর প্রভেদ
আছে। খাদ্য উপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ বা কালো কচু শাকে যথাক্রমে ১০২৭৮ ও ১২০০০
মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) রয়েছে। এই কারণে রাতকানা রোগ উপশমের জন্য কচু
শাক অত্যন্ত উপযোগী। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম সবুজ কচু শাক থেকে ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন,
৬.৮ গ্রাম শর্করা, ১.৫ গ্রাম স্নেহ বা চর্বি, ২২৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০
মিলিগ্রাম লৌহ, ০.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন), ০.২৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন
বি-২ (রাইবোফেবিন), ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৫৬ কিলো ক্যালোরি খাদ্যশক্তি
পাওয়া যায়।
সবুজ কচু শাকের চেয়ে কালো কচু শাক অনেক বেশি পুষ্টিকর। প্রতি ১০০ গ্রাম কালো কচু শাকে ৬.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৮.১ গ্রাম শর্করা, ২.০ গ্রাম চর্বি, ৪৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩৮.৭ মিলিগ্রাম লৌহ, ০.০৬ মিলিগ্রাম ভিটামিনি বি-১ (থায়ামিন), ০.৪৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-২ (রাইবোফেবিন), ৬৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ ও ৭৭ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি রয়েছে। দেহের পুষ্টি সাধনে এসব পুষ্টি উপাদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কচু শাকে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকায় এ শাকের লৌহ দেহ কর্তৃক সহজে আত্তীকরণ হয়।
ভারতীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে কচুকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। মুখী ও পানিকচুর ডগা দেহের ক্ষত রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া জ্বরের রোগীকে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য দুধকচু খাওয়ানো হয়। ওলকচুর রস, উচ্চরক্তচাপের রোগীকে প্রতিষেধক হিসেবে খাওয়ানো হয়। আবার মান কচুর ডগা ও পাতা বাতের রোগীকে খাওয়ানোর প্রথা প্রচলিত রয়েছে। কচু শাকে পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় এটি দেহের হজমের কাজে সহায়তা করে।
সূত্র :
ভারতীয় বনৌষধি (পঞ্চম খণ্ড)। কলিকাতাব বিশ্ববিদ্যালয়, ২০০২।