Kingdom: Plantae
|
পান
ইংরেজি :
betel।
সংস্কৃত
পর্ণ>প্রাকৃত পণ্ণ (পাতা)>বাংলা পাণ>পান।
সংস্কৃতিতে
ব্যবহৃত শব্দ :
তাম্বুল।
Piperaceae
গোত্রের
লতানো
গাছ।
বাংলাতে
এই গাছের পাতাকে পান বলা হয় এবং গাছটিকে বলা হয় পান গাছ।
বাংলাদেশ,
ভারত, পাকিস্তান,
শ্রীলঙ্কা,
মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে হয়ে থাকে।
চুন, সুপারি, খয়ের, জর্দা ইত্যাদি সহযোগে পান কাঁচা অবস্থায় খাওয়া। এক সময় পান
খাওয়াটা বাঙালির সংস্কৃতির অংশ ছিল। বর্তমানে পান খাওয়ার চর্চা অনেকটা কমে এসেছে।
বর্তমানে অনেকে সখ করে মাঝে মধ্যে পান খেয়ে থাকেন।
পান গাছ অন্য কোনো গাছ বা উলম্ব কোনো অবলম্বনকে আশ্রয় করে বৃদ্ধি পায়। গাছগুলো
প্রায় ১০-১৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে দু’প্রজাতির পান চাষ হয়ে থাকে। এর একটি
পাহাড়ী এলাকার, অপরটি সমতল এলাকার। পাহাড়ি এলাকার পান অন্য কোনো গাছের গোড়ায়
লাগানো হয় এবং পান গাছ ঐ গাছ বেয়ে উপরের দিকে ওঠে। অন্যদিকে সমতল এলাকার পান চাষের
জন্য একটি বাগান তৈরি করা হয়। একে পানের বরজ বলে।
![]() |
পানের বরজ |
বরজ-এর উপর দিক খড়, শন, অথবা
সুপারী গতাছের পাতা দিয়ে ছাউনি দেয়া থাকে। এর চারপাশটা ও সুপারী অথবা খেজুর পাতা দিয়ে ঘেরা
থাকে। উল্লেখ্য আরবি বুজ শব্দের অর্থ হলো দুর্গ। দুর্গের মতো করে এই বাগান তৈরি করা
হয় বলে এই বাগানের নাম হয়েছে বরজ। আর
পান
চাষীদেরকে
বলা হয় বারুই।
সংস্কৃতিতে বারুজীবী
শব্দের
অর্থ পান ব্যবসায়ী। সংস্কৃতভাষায় বারু শব্দটিকে পৃথকভাবে পান-এর সমার্থক শব্দ হিসেবে
পাওয়া যায় না।
কিন্তু বারুজীবী শব্দের সূত্রে বলা যায়, বারু শব্দটির অর্থ পান-ই দাঁড়ায়।
পান চাষের জন্য উঁচুস্থান ও দোঁআশ মাটির প্রয়োজন হয়।
পানের
লতাগুলো
উপরে উঠার জন্য উলম্ব কাঠি পুঁতে রাখা হয়।
পানের মোট ৩টি ফলনকাল রয়েছে। তবে কম বেশি সারা বছরই পান আহরণ করা হয়।
এই গাছের ডাঁটা
শক্ত,
পাতা তিন থেকে আট ইঞ্চি লম্বা
হয়। পাতার অগ্রভাগ সরু এবং বৃন্তদেশ
হৃদপিণ্ডাকৃতি। পাতায় সাতটি শিরা আছে বলে একে
অনেক সময় সপ্তশিরা বলা হয়। মার্চ
থেকে মে মাস পর্যন্ত পানের ফুল ও ফল হয়ে থাকে।
ছোট একটা মঞ্জরীদণ্ডের চারপাশে ফুলগুলো ঘন
হয়ে ফুটে থাকে।
স্বাদের বিচারে পানকে নানারকমে ভাগ করা হয়। যেমন—
বাংলা পান, সাঁচিপান,
মিঠাপান, তিতা পান, ঝাল পান
ইত্যাদি।
পানের
জৈব রাসায়নিক উপাদান
পানের প্রধান
রাসায়নিক উপাদান হলো−
বিভিন্ন প্রকার উদ্বায়ী তেল। পানে যেসব উদ্বায়ী তেল পাওয়া যায় তা হলো—
২- মিথাইল-৫-
বাইসাইক্রো হেক্সো-২ আইন,
আলফা পেনিন, বিটা-ফেলেনড্রিন,
বিটা-মাইক্রিন, আলফা-ফেনেনড্রিন, মিথাইল-৪-১,৪
সাইকোক্সোডিন, ২-সেরিন, ৪-(২
প্রোপাইল) ফেনল সেফিকল,
কোডিনিন ইত্যাদি।
এ ছাড়া প্রোটিন ৩.১%,
কার্বোহাইড্রেড- ৬.৯%, মিনারেলস ২.৩%,
টেনিন ২%, কটু দ্রব্য ০.৭ থেকে ২.৬%।
এছাড়া
ফসফরাস, লৌহ,
আয়োডিন ভিটামিন বি,
ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ পানে পাওয়া যায়।
পানের ব্যবহার
একটি গবেষণায় দেখা গেছে,
পানে বিদ্যমান উদ্বায়ী তেল
এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর উদ্বায়ী তেল,
স্টাফাইলোকক্কাস এরিয়াস স্ট্রেপটোকক্কাস পিওজেনস নামক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে
অত্যন্ত কার্যকর।
পানের নির্যাস
ক্যান্ডিভা এলবিকাস নামক ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে।
দাঁতের
মাড়ির দূষিত ক্ষতে পুঁজ জমতে থাকলে পানের রসের সাথে অল্প পানি মিশিয়ে কুলকুচি
করলে দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমে না।
পুরাতন দাদ,
চুলকানিতে পানের রস বেশ উপকারী।
কানের পুঁজ
পানের রস গরম করে দুই-এক ফোঁটা করে কানে দিলে কানের পুঁজ কমে যায়।
পান পাতা বেটে
মাথায় মাখলে খুশকি দূর হয়।
উকুননাশক হিসেবে কাজ করে
পানের রস বেশ উপকারী।
পান পাতার রস একটু গরম করে সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে বুকে মালিশ
করলে শিশুর কফ ও শ্বাসকষ্ট দূর হয়।
বড়দের শ্বাসকাশ দূর করার জন্য এক চা চামচ থেঁতলানো পানের পাতা, আদা ও তুলসী পাতার রস. এক চা চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করলে সব ধরনের কফ ও শ্বাসকষ্ট দূর হয়। পান পাতার রস দুই-তিন ফোঁটা করে নাকে দিলে মাথাব্যথা দূর হয়। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ পান পাতা নিয়মিত চিবালে অস্টিওপরোসিস থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পান পাতা মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। জন্মনিয়ন্ত্রক হিসেবে পানের শিকড় বেটে খেলে তা গর্ভনিরোধক হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া পান পাতা কাম ও স্নায়ু উদ্দীপক, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, বাতব্যথা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর।
পান খাওয়ার সতর্কতা
আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সী'র
মতে সুপারি ও পান ক্যান্সারজনক পদার্থ (কার্সিনোজেন)। সুপারিসহ পান খেলে মুখ
গহ্বরের ক্যান্সার হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুপারি দিয়ে পান খেলে মুখের
ক্যান্সারের ঝুঁকি ৯.৯ গুণ (জর্দা সহ) এবং ৮.৪ গুণ ( জর্দা ছাড়া)।