তাল (উদ্ভিদ)

Borassus গণের একটি প্রজাতি। এর প্রজাতিগত নাম Borassus flabellifer। পাম জাতীয় গাছের ভিতরে তাল গাছকে ভারতীয় উপমহাদেশীয় গাছ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশের সব এলাকায় কমবেশী তালগাছ দেখা যায়। তবে ফরিদপুর, পাবনা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশি এই গাছ দেখা যায়।

Kingdom (রাজ্য): Plantae
Order ((
বর্গ): Arecales
Family
(গোত্র): Arecaceae
Genus (
(গণ) : Borassus
প্রজাতি
Borassus flabellifer

তাল গাছ সরলভাবে উপরের দিকে একক কাণ্ডীয় বৃক্ষ হিসেবে বৃদ্ধি পায়। উচ্চতায় সাধারণত প্রায় ৬০-৭০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

গাছের শীর্ষদেশে তালের পাতা পাখার মত ছড়ানো থাকে। এর বিস্তার হয়ে থাকে ৫-১০ ফুট। পাতাগুলোর পত্রফলক জুড়ে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা। শিরাগুলো পত্রদণ্ডের গোড়া হতে অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং পত্রের কিনারা কাঁটার মত। কাঁচা পাতা চামড়ার মতো হলেও শুকনো পাতা শক্ত হয় কাঠের মতো।

তাল গাছ একলিঙ্গিক। এই গাছকে ফুলের বিচারে পুরুষ ও স্ত্রী তাল গাছ হিসেবে ভাগ করা হয়। পুরুষ গাছে মোচ মোচার মতো দেখায়। এর স্ত্রী-গাছে কাঁদিতে ফল ধরে। তালের কাঁদি প্রায় ২/২ফুট লম্বা হয়ে থাকে। প্রতি কাঁদিতে ২০/২৫টি পর্যন্ত তাল হতে দেখা যায়। কাঁচা অবস্থায় এর রঙ ধূসর, পাকলে গাত্রবর্ণ কালো হয়। তাল ফলে প্রচুর আঁশ থাকে। ফলের ভিতরে ১ থেকে ৩টি বীজ বা আঁটি থাকে। আঁটি বেশ শক্ত, ডিম্বাকার ও চ্যাপ্টা।

এই গাছে মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মাসে ফুল আসে এবং শ্রাবণ- ভাদ্র মাসে ফল পাকতে শুরু করে। প্রতি গাছে প্রায় ১৫০- ২৫০টি ফল ধরে। পাকা তালের প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৭৭.২ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৭ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম, শর্করা ২০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শাক্তি ৮৭ কিলো-ক্যালোরি রয়েছে।

কচি তাল-ফলের শাঁস মুখোরোচক খাদ্য হিসেবে খাওয়া হয়। একে সাধারণত তাল-শাঁস বলা হয়। আবার মাটিতে তালের ফল রাখার পর, অঙ্কুরদ্গমনের সময় হলে- এর শাঁস বের করে খাওয়া হয়।

তালের রস বিভিন্ন প্রকার পিঠা , মিছরি ও গুড় তৈরিতে ব্যবহার হয়। সদ্য আহরিত তালের রস পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত। এর গাঁজানো রস থেকে তাড়ি নামক মাদকীয় তরল পানীয় তৈরি হয়। পাকা তালের রস কনফেকশনারীতে শুকনো খাবার প্রস্তুত করণের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

তালগাছের পাতা, আঁশ, দেহ কাণ্ড থেকে  নানা ধরনের উপকরণ তৈরি করা হয়।  বাংলা দেশের এই পাতা দিয়ে হাত-পাখা তৈরি করা হয়। প্রাচীন কালে বাংলাদেশে লেখার উপকরণ হিসেবে তালপাতা ব্যবহার করা হতো। বয়স্ক তালগাছ থেকে উৎকৃষ্ট মানের কাঠ পাওয়া যায়। এই কাঠ গৃহ নির্মাণে ও সৌখিন দ্রব্য প্রস্তুত করা জন্য ব্যবহার করা হয়। এছাড়া তালের দেহকাণ্ড থেকে ডোঙা জাতীয় জলযান তৈরি করা হয়।

তাল গাছের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে এর বীজের মাধ্যমে। প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়, তাল ফল মাটিতে পড়লে এর বীজ থেকে তালগাছের চারা জন্মলাভ করে। বর্তমানে বীজতলায় চারা উৎপাদন করে পরিকল্পিতভাবে তাল গাছের চাষ করা হয়।


সূত্র :