হাই
hydra

প্রাণীজগতের একটি গণ
বিশেষ। ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে এই গণের নাম করেন লিনিয়াস। এই গণের প্রজাতিগুলো স্রোতহীন মিঠা পানিতে বাস করে।
পানিতে অবস্থিত কোন কঠিন বস্তুর গায়ে এটি লেগে থাকে। অনেক সময় পানিতে ভাসমান অবস্থাতেও দেখা যায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ের এর যে প্রজাতিটি বেশি পাওয়া যায়, তা হলো Hydra vulgaris

 

হাইড্রার দেহ অরীয় প্রতিসম। দেহ নলাকার। লম্বায় ১০-৩০ মিলিমিটার হয় এবং প্রস্থে প্রায় ১ মিলিমিটার হয়। এদের দেহ নিডোব্লাস্ট আছে, তাই এদের নিডারিয়া (Cnidaria) পর্বের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিডারিয়া পর্বে মোট ২৩ ধরনের নেমাটোসিস্ট রয়েছে। তবে হাইড্রাতে চার ধরনের নেমাটোসিস্ট পাওয়া যায়। এদেহের বৃহত্তম নেমাটোসিস্টকে বলা হয় স্টিনোটিল বা পেনিট্যান্ট। স্টিনোটিল-এ হিপনোটক্সিন নামক বিষাক্ত রস থাকে। এদের স্টিনোটিল-এর গড়ন প্যাঁচানো।
 

দেহের একপ্রান্ত খোলা এবং অপর প্রান্ত বন্ধ থাকে। খোলা প্রান্তকে মুখগহ্বর বলা হয়। অপাচ্য ও বর্জ্য পদার্থ মুখগহ্বর দিয়েই বাইরে নিষ্ক্রান্ত হয়।এরা অন্যান্য ক্ষুদ্রাকার প্রাণী আহার করে, তাই এদেরকে মাংসাশী প্রাণী হিসেবে গণ্য করা হয়। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে পতঙ্গের লার্ভা, সাইক্লপস ও ড্যাফনিয়া (ক্রাস্টাসীয় সন্ধিপদী প্রাণী), ছোট ছোট কৃমি, মাছের ডিম ইত্যাদি।

 

এদের মুখগহ্বরের বাইরে ৬-৮টি কর্ষিকা থাকে। হাইড্রার খাদ্য হিসেবে বিবেচিত ক্ষুদ্র প্রাণী নিকটে এলে কর্ষিকা ব্যবহার করে মুখগহ্বরের ভিতরে টেনে নেয়। ভলভেল্ট ও অন্যান্য নেমাটোসিস্ট শিকারকে ধরে রাখতে সাহায্য করে, গ্লুটিন্যান্ট নেমাটোস্টি গ্লু বা আঠালো রস ক্ষরণ করে। তারপর স্টিনোটিল “হিপনোটক্সিন” দিয়ে শিকারকে অবশ করে। পরে মুখছিদ্র দিয়ে তা গ্রহণ করে। সিলেন্টেরনে বহিঃকোষীয় পরিপাক ঘটলেও হাইড্রার দেহে বহিঃকোষীয় পরিপাক এবং অন্তঃকোষীয় পরিপাক ঘটে। এছাড়া এই কর্ষিকা ব্যবহার করে হাইড্রা হামগুড়ি দিয়ে ডিগবাজির ভঙ্গিতে চলাচল করে।
 

এদের দেহ দ্বিস্তরবিশিষ্ট। এই স্তর দুটি বলা হয় এক্টোডার্ম এবং এন্ডোডার্ম। এক্টোডার্ম থেকে এপিডার্মিস (ত্বক) এবং এন্ডোডার্ম থেকে গ্যাস্ট্রোডার্মিস উৎপন্ন হয়। হাইড্রার নিডোব্লাস্ট এপিডার্মিস স্তরে থাকে। এছাড়া থাকে পেশী-আবরণী কোষ, ইন্টারস্টিশিয়াল কোষ, নিডোব্লাস্ট, গ্রন্থি কোষ, স্নায়ূ কোষ, জনন কোষ। অন্যদিকে গ্যাস্ট্রোডার্মিস স্তর (এন্ডোডার্ম)-এ থাকে পুষ্টি (নিউট্রিটিভ) কোষ, গ্রন্থি কোষ, সংবেদী কোষ।  সিলেন্টেরন বা গ্যাস্ট্রোভাসকুলার গহ্বর-এ বহিঃকোষীয় ভাবে খাদ্যবস্তু পরিপাক হয়।

 
Zoochlorella নামক শৈবাল এবং Chlorohydra virdissima হাইড্রার মাঝে মিথোজীবী সম্পর্ক দেখতে পাওয়া যায়। হাইড্রা উদ্ভূত CO2 এবং নাইট্রোজেনজাত বর্জ্য পদার্থ  Zoochlorella ব্যবহার করে। পক্ষান্তরে শৈবালের বাড়তি শর্করা হাইড্রা ও শৈবালের ত্যাগ করা অক্সিজনে গ্রহণ করে।

 

প্রজনন ঋতুতে হাইড্রার দেহকাণ্ডের উপরে মোচাকৃতির শুক্রাশয় এবং দেহকাণ্ডের নিচের দিকে দুটি গোলাকৃতির ডিম্বাশয় তৈরি হয়। এরা যৌনক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়া দেহকাণ্ডের সাথে মুকুল উদ্গম হয়। এই মুকুল থেকেও নতুন হাইড্রা জন্ম নেয়। হাইড্রার দেহের কোনো অংশ নষ্ট হয়ে গেলে তা পুনরায় গজিয়ে যায়।

হাইড্রা গণের কালানুক্রম বিবর্তনের ধারা
৬০.৫-৫৬ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে প্যারাহোক্সোজোয়া  থাকের প্রজাতিগুলো ৩টি পর্বে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই পর্বগুলো হলো-নিডারিয়া পর্ব, বিলাটেরিয়া থাক ও প্লাকোজোয়া পর্ব।

এর ভিতরে নিডারিয়া পর্বের আদিম প্রজাতিসমূহের উদ্ভব হয়েছিল ৫৮ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে। এই পর্ব থেকে পর্বর্তী সময়ে আবির্ভুত হয়েছিল তিনটি ভাগে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এগুলো হলো- এ্যান্থোজোয়া, মেডুসোজোয়া ও মিক্সোজোয়া।

৫৭.৫ কোটি খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে মেডুসোজোয়া উপপর্বের আদিম প্রজাতিসমূহ থেকে  হাইড্রোজোয়া শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল। পরে এই শ্রেণিটি দুটি উপশ্রেণিতে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই উপশ্রেণি দুটি হলো- হাইড্রোইডোলিনা ও ট্রকিলিনি। ক্রমবিবর্তনের ধারায় হাইড্রোইডোলিনা উপশ্রেণির শরীরে প্রচুর পরিমাণ পলিপের যুক্ত হয়েছিল।   ফলে এরা অনেকটা হয়ে উঠেছিল প্রবাল বা জেলিফিসের মতো। কিন্তু এদের দেহকাঠামোর অন্যান্য অংশ প্রবাল বা জেলিফিসের মতো ছিল না। এই উপশ্রেণির আদিম প্রজাতিসমূহ তিনটি বর্গে বিভাজিত হয়ে গিয়েছিল। এই বর্গগুলো হলো-এ্যান্থোয়াথেসেটা, লেপ্টোথেসেটা ও সিফোনোফোরি। এ্যান্থোয়াথেসেটা বর্গটি থেকে সামুদ্রিক এবং মিঠা পানির আদিম প্রজাতিসমূহের উদ্ভব হয়েছিল। এই বর্গ থেকে উদ্ভব হয়েছিল তিনটি উপবর্গের আদিম প্রজাতিসমূহ। এই উপবর্গগুলো হলো- আপ্লানুলাটা, ক্যাপিটাটা ও ফিলিফেরা। এই উপবর্গ থেকে উদ্ভব হয়েছিল হাইড্রিডি গোত্রের আদিম প্রজাতিসমূহ। পরে হাইড্রিডি গোত্র থেকে উদ্ভব হয়েছিল হাইড্রা গণের প্রজাতিসমূহ।

হাইড্রা গণের প্রজাতিসমূহ