রাজ্য:
Animalia
|
শামুকখোল
ইংরেজি :
Openbill Stork।
বৈজ্ঞানিক নাম : Anastomus (গণ-এর
নাম)।
Ciconiidae
গোত্রের Anastomus
গণের অন্তর্গত পাখি। ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে এই
গণের নামকরণ করেছিলেন Bonnaterre।
এদের
দুই ঠোঁটের মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা
থাকে। এই ফাঁকের ভিতরে শামুক ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলে ভিতরের জীবন্ত অংশটুকু খায়।
এই কারণে একে শামুক খোল বলা হয়। এদের আকার প্রায় শকুনের মতো।
Anastomus
গণের অন্তর্গত এই পাখির দুটি প্রজাতি
পাওয়া যায়। এই প্রজাতি দুটি হলো―
এশীয়
শামুকখোল
ইংরেজি :
Asian
Openbill Stork।
বৈজ্ঞানিক নাম : Anastomus
oscitans।
এশিয়া মহাদেশের এই পাখি পাওয়া যায়
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়া এবং ভারত উপমহাদেশে। বাংলাদেশে সুন্দরবন অঞ্চলে এই পাখি বেশি দেখা যায়। এছাড়া
বাংলাদেশের রাজশাহীর দুর্গাপুর, নাটোর, পুটিয়া, ফেনী, সান্তাহার, মহাদেবপুর,
জয়পুরহাট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটর হাওর এলাকায় এই পাখি
অল্প-বিস্তর দেখা যায়। ভারত ও বাংলাদেশ ছাড়া এদের দেখা যায় নেপাল, পাকিস্তান,
শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম-এ। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই
কমছে। আই. ইউ. সি.এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
এদের
দৈর্ঘ্য প্রায় ৮১ সেন্টিমিটার, ডানা ৪০ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ১৫.৫ সেন্টিমিটার, লেজ ২০
সেন্টিমিটার ও পা ১৪.৫ সেন্টিমিটার। প্রজননকালে প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ একদম সাদা
দেখায়। কাঁধ-ঢাকনি, ডানার প্রান্ত-পালক, মধ্য পালক এর রঙ হাল্কা ছাইরঙ। লেজের
অগ্রভাগ সবুজাভ কিন্তু বাকি অংশের রঙ কালো।
ঠোঁট লম্বা ভারি এবং কালচে-লাল রঙের। দুই ঠোঁটের মাঝখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা থাকে।
এই ফাঁকের ভিতরে শামুক বা শামুক জাতীয় ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে ভেঙে ফেলে ভিতরের জীবন্ত
অংশটুকু খায়। এদের চোখের রঙ সাদাটে। কোনো কোনো পাখির চোখের রঙ হলদে-বাদামি হয়। চোখের চারদিকের চামড়া পালকহীন। পা বেশ লম্বা, পায়ের পাতার রঙ
অনুজ্জ্বল মেটে। প্রজনন মৌসুম ছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ ধূসরাভ সাদা থাকে। এই
সময় পা অনুজ্জ্বল পাটকেল বর্ণ ধারণ করে। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি একই রকম দেখায়।
এরা মূলত হাওর, বিল বা এই জাতীয় বড় মিঠাপানির জলাশয়ের ধারে থাকে। এছাড়া উপকূলীয় উপবন ও নদীর পাড়ে বিচরণ করে। সচরাচর ছোট ঝাঁক বেঁধে থাকে। বড় একত্রে গাছে বা জলাশয়ের ধারে একত্রের দলবদ্ধভাবে থাকে। খাবারের অভাব না হলে এরা সাধারণত স্থান পরিবর্তন করে না।
এরা ভোর
বেলায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। অনেক সময় চক্রাকারে আকাশের উঁচুতে উঠে যায় এবং দল
বেঁধে ঘুরতে থাকে। পানির ধারে বা অগভীর পানিতে হেঁটে হেঁটে কাদায় ঠোঁট ঢুকিয়ে
শামুক, ঝিনুক আর গুগলি তুলে খায়। অনেক সময় ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, ব্যাঙ ও
কাঁকড়াও খায়। সচরাচর পানির নিচে শামুকের খোলক ভেঙে এরা পানির উপর মাথা তুলে
শামুকের মাংস গিলে খায়।
শামুকখোলের প্রজনন ঋতু বর্ষাকাল। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস এদের প্রজনন মৌসুম।
স্থানভেদে প্রজনন ঋতুতে বিভিন্নতা দেখা যায়। প্রজনন কালে এরা গোঙানির মত শব্দ করে
ডাকে ও ঠোঁটে ঠক্ ঠক্ করে শব্দ তোলে। প্রজনন কলে উঁচু গাছে ডালপালা দিয়ে বড় মাচার
মত আগোছালো বাসা বানায়। স্ত্রী ও পুরুষ দু'জনে মিলেই ১০-১৫দিন ধরে বাসা তৈরি করে।
স্ত্রী পাখি ২-৫টি এবং সাদা রঙের ডিম পাড়ে। ডিমের মাপ ৫.৮ × ৪.১ সেমি। স্ত্রী ও
পুরুষ দু'জনেই তা দেয়। প্রায় ২৫ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক
পাখির দেহ ধোঁয়াটে-বাদামি। কাঁধ ঢাকনি কালচে বাদামি বর্ণের হয়। শাবকগুলোর পা
অনুজ্জ্বল হয়। এদের দু'ঠোঁটের মাঝখানের ফাঁক কম বা অনুপস্থিত। একেবারে ছোট ছানার
ঠোঁটে কোন ফাঁক থাকে না।
আফ্রিকার
শামুকখোল
ইংরেজি :
African
Openbill Stork।
বৈজ্ঞানিক নাম : Anastomus
lamelligerus
Temminck, 1823
আফ্রিকান শামুকখোলের গায়ের রঙ কালো। পাখিটি আফ্রিকার উত্তরাংশ এবং দক্ষিণাংশ ছাড়া, আফ্রিকার বাকি অংশের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। আফ্রিকান শামুকখোলের উপপ্রজাতি দুইটি। এদের গায়ের রঙ ছাড়া স্বভাব, খাদ্যাভ্যাস এশিয়ার শামুকখোলের মতোই।
সূত্র
পশ্চিম বাংলার পাখি । প্রণবেশ সান্যাল, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। আনন্দ পাবলিশার্স লিমিটেড মে ১৯৯৭।
http://en.wikipedia.org/wiki/