Kingdom: Animalia : Meropogon
প্রজাতিসমূহ
Genus : Nyctyornis গণের সুইচোরা
Genus : Meropogon গণের সুইচোরা
|
সুইচোরা
সমনাম : নরুন-চেরা, মৌমাছিখেকো।
ইংরেজি
নাম: Green Bee-eater
বৈজ্ঞানিক নাম : M.
orientalis Latham, 1802
Meropidae
গোত্রের
Merops,
Nyctyornis
এবং
Meropogon
গণের ছোটো
আকারের এক
প্রকার পাখির সাধারণ নাম। সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে সেনেগাল
এবং গাম্বিয়া থেকে ইথিওপিয়া পর্যন্ত এই পাখি প্রচুর দেখা যায়।
আফ্রিকার নীল উপত্যাকাতেও এই পাখি অল্পবিস্তর চোখে পড়ে। এশিয়ার আরব
উপদ্বীপ, ভারত, বাংলাদেশ থেকে ভিয়েৎনাম পর্যন্ত এই পাখি দেখা যায়। এই সব
অঞ্চলে নানা প্রজাতির সুইচোরা দেখা যায়। বাংলাদেশে এর বেশ কয়েকটি প্রজাতি
পাওয়া যায়। বাংলাদেশে নদীর তীরবর্তী বনাঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়।
এরা টিউ টিউ শব্দ করে থাকে।
প্রজাতিভেদে এদের শরীরের রঙ নানা ধরনের হয়। এরা কীট পতঙ্গ আহার করে। তবে ছোটো ছোটো মাছও খায়। মৌমাছি এদের প্রিয় খাবার । এই কারণে ইংরেজিতে এর সাধারণ নাম Bee-eater । মৌমাছি ছাড়াও এরা ফড়িং, মথ, ইত্যাদি আহার করে।
বাংলাদেশের সুইচোরাসমূহ
বাংলাদেশে চারটি প্রজাতির সুইচোরা দেখা যায়। এর ভিতরে Merops গণের তিনটি সুইচোরা পাওয়া যায়। এগুলো হলো−
এছাড়া
Nyctyornis
গণের একটি প্রজাতির সুইচোরা
দেখা যায়। এই প্রজাতিটি হলো−
Nyctyornis athertoni
।
উল্লিখিত প্রজাতিগুলোর ভিতরে সবুজ সুইচোরা (Merops orientalis) সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সকল সুইচোরা মধ্যে বড় জাতের সুইচোরা হলো− Nyctyornis গণের Nyctyornis athertoni । বাংলাদেশে একে বলা হয়− পাহাড়ি সুইচোরা। এই সুইচোরা খুব বেশি দেখা যায় না।
সবুজ সুইচোরা
সমনাম : নরুন-চেরা।
ইংরেজি
নাম: Green Bee-eater
বৈজ্ঞানিক নাম :
M. orientalis Latham, 1802
প্রায় ৫ সেন্টিমিটার দীর্ঘ লেজসহ এদের দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৬-১৮ সেন্টিমিটার হয়। স্ত্রী-পুরুষ পাখির প্রভেদ বুঝা যায় না।
এদের গায়ের রঙ
উজ্জ্বল সবুজ হয়। মাথার রঙ তামাটে। গলায় সাদা রঙের এবং এর নিচের দিকে
কালো রেখা আছে। ঠোঁটের রঙ কালো। ঠোঁট ধারালো, অগ্রভাগ সরু ও বাঁকানো। ঠোঁটের
গোড়া থেকে চোখ স্পর্শ করে চওড়া কালো রেখা রয়েছে। দেখতে অনেকটা কাজল টানা চোখের
মতো মনে হয়।
এরা পাহাড় বা নদীর খাঁড়া পাড়ে গর্ত করে ডিম পাড়ে। বাসা তৈরি করতে প্রায় ৪থেকে ৬ দিন সময় লাগে। বাসা তৈরির সময় এরা ঠোঁট এবং পা ক্রমাগত ব্যবহার করে।
প্রায়ই দেখা যায়, উঁচু পাহাড় বা নদীর পাড়ে এক সাথে অনেক পাখি বাসা তৈরি করে বাস করে। গ্রীষ্মকালে স্ত্রী পাখি ৫-৭টি সাদাটে ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়ই ডিমে তা দেয়। প্রায় ২১-২৭ দিন ডিমে তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। বাচ্চাগুলো উড়া না শেখা পর্যন্ত, উভয় পাখি এদের খাবার জোগান দেয়। এই সময় এরা নিজেদের বাসা ছাড়াও প্রতিবেশির বাসার উপরও নজর রাখে। খাড়া পাড়ের কারণে এদের বাসায় বিড়াল জাতীয় মাংশাসী প্রাণী হানা দিতে পারে না।
পিঙ্গল মাথা সুইচোরা
ইংরেজি নাম :
Chestnut headed bee Eater.
বৈজ্ঞানিক নাম : Merops
leschenaulli
Vieillot, 1817
বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যাণ্ডে এদের দেখা যায়।
প্রায় ৫ সেন্টিমিটার
দীর্ঘ লেজসহ এদের দৈর্ঘ্যে প্রায়
১৬-১৮ সেন্টিমিটার হয়। স্ত্রী-পুরুষ পাখির প্রভেদ বুঝা যায় না।
এদের সারা শরীর
পিঙ্গল বর্ণের হলেও মাথা রঙের বিচারে এই সুইচোরার এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। এদের গলার
রঙ হলুদ। এই হলুদ রঙের নিচের দিকে একটা কালচে পিঙ্গল রঙের বলয় আছে। পেটের রঙ সবুজাভ। লেজের উপর
দিক নীল রং। ডানার রং সবুজ।
ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখ স্পর্শ করে হাল্কা কালো রেখা রয়েছে।
অন্যান্য সুইচোরার মতোই এদের প্রিয় খাবার মৌমাছি। মৌমাছি ছাড়াও এরা ফড়িং, মথ, ইত্যাদি আহার করে। পাহাড় বা নদীর খাঁড়া পাড়ে গর্ত করে ৪ থেকে ৬টি ডিম পাড়ে। প্রায় ২১-২৭ দিন ডিমে তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
নীললেজা সুইচোরা
ইংরেজি নাম
Blue tailed Bee Eater।
বৈজ্ঞানিক নাম
Merops Philipplinus,
Linnaeus, 1766।
বাংলাদেশ ও ভারতে এদের দেখা যায়।
প্রায় ৫ সেন্টিমিটার
দীর্ঘ লেজসহ এদের দৈর্ঘ্যে প্রায়
২৩-২৬ সেন্টিমিটার হয়। স্ত্রী-পুরুষ পাখির প্রভেদ বুঝা যায় না।
পিঙ্গল মাথা সুইচোরার মতো এদেরও মাথা-বুক-ঘাড়-গলা পিঙ্গল রঙের। তবে এদের
গলায় কোনো কালো রেখা থাকে না। পিঠের শেষ দিক থেকে লেজের উপরদিক পর্যন্ত
নীলচে রং। পাখার প্রান্তদেশে কালো বর্ণের পালক রয়েছে।
ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখ স্পর্শ করে চওড়া কালো রেখা রয়েছে। অনেকটা কাজল টানা চোখের
মতো মনে হয়।
অন্যান্য সুইচোরার মতোই এদের প্রিয়
খাবার মৌমাছি। মৌমাছি ছাড়াও এরা ফড়িং, মথ, ইত্যাদি আহার করে। পাহাড় বা নদীর
খাঁড়া পাড়ে গর্ত করে ৪ থেকে ৬টি ডিম পাড়ে। প্রায় ২১-২৭ দিন ডিমে তা
দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
পাহাড়ি সুইচোরা
ইংরেজি নাম Blue Bearheaded Bee Eater।
বৈজ্ঞানিক নাম
Nyctyornis athertoni Jardine & Selby,
1830
প্রায় ৬ সেন্টিমিটার
দীর্ঘ লেজসহ এদের দৈর্ঘ্যে প্রায়
৩৩-৩৫ সেন্টিমিটার হয়। স্ত্রী-পুরুষ পাখির প্রভেদ বুঝা যায় না।
এরা
লম্বায় ৩৫ সেন্টিমিটার। সুইচোরার সব প্রজাতির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।
বাংলাদেশ, ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের দেখা যায়।
মূলত এ্ই সুইচোরা সবুজ রঙের হয়। তবে গলা থেকে বুকের খানিকটা এবং পাখায় নীলচে রং আছে। এদের গলায় কোনো কালো রেখা থাকে না। পেটে হলুদের সাথে সবুজ রঙের হালকা টান লক্ষ্য করা যায়। এদের লেজে সুঁইয়ের মতো সরু লম্বা পালক নেই। ফলে এদের লেজের অগ্রভাগ প্রায় বর্গাকার। পাহাড় বা নদীর খাঁড়া পাড়ে গর্ত করে ৪ থেকে ৬টি ডিম পাড়ে। প্রায় ২১-২৭ দিন ডিমে তা দেওয়ার পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
সূত্র :
পশ্চিম বাংলার পাখি। প্রণবেশ সান্যাল, বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী। আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। মে ১৯৯৭।