মরোক্কোর জেবেল ইর্হৌদে প্রাপ্ত ৩.১৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের আদিম অস্ত্রের নমুনা |
হোমো স্যাপিয়েন্সদের উন্নয়নকৃত মধ্য প্রস্তরযুগের অস্ত্র। আফ্রিকা থেকে আগত আধুনিক মানবগোষ্ঠী ইউরেশিয়ায় প্রবেশের পর, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত পাথরের অস্ত্রের উন্নয়ন সূত্রে এই যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের উদ্ভাবন করেছিল। ফরাসি Levallois-Perret নগরীর নামুসারে এই যন্ত্রপাতির নামকরণ করা হয়েছে।
এই জাতীয় যন্ত্রপাতি ও অস্ত্র তৈরি করার প্রাচীন মানুষেরা কোনো পাথর নির্বাচন করতো। এরপর এরা ওই পাথরের উপর থেকে টুকরো টুকরো অংশ তুলে ফেলে মূল পাথরটিকে পাতলা তক্তার মতো করে ফেলতো। এরপর ওই পাতলা পাথরের ঠুকরোর পাশগুলো ঘষে ঘষে তীক্ষ্ণ করে নিতো। এ প্রক্রিয়া উৎপন্ন অস্ত্রনির্মাণকে বলা হয়ে থাকে- লেভালয়য়িস অস্ত্রনির্মাণ কৌশল।
২.৫ লক্ষ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে প্রাপ্ত লেভালয়িস যন্ত্রপাতির নমুনা |
লেভালয়য়িস অস্ত্রনির্মাণ কৌশলের আদিমতম রূপটির বিকাশ ঘটেছিল প্রায় ৩.১৫ লক্ষ
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মরক্কোর জেবেল অঞ্চলে।
পাথুরে যন্ত্রপাতি বা অস্ত্রের বিশেষ কৌশলের আদিম রূপ লেভালয়িস যন্ত্রপাতি'
তৈরির কৌশল এদের দ্বারাই সূচিত হয়েছিল। বিভিন্ন স্ফটিক পাথরের ফলকের প্রান্তভাগ তীক্ষ্ণ করে এরা যে অস্ত্র তৈরি করেছিল, তার সাহায্যে
শিকারকে আঘাত করে গভীর ক্ষত তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়া এই জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে এরা শিকারকৃত পশুর মাংস হাড়
থেকে করতে পারতো। সম্ভবত কচি ডালাপালা কাটা বা থেঁৎলানোর জন্য এই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করতো। সম্ভবত সাধারণ পাথরের
পরিবর্তে এরা রঙবেরঙে বাহারি স্ফটিক পাথরে ব্যবহার করতো, এদের কাঠিন্য ধারালো করার সহজতর বলেই।
এই অঞ্চলের জীবাশ্মের সাথে প্রাপ্ত অন্যান্য উপকরণের ভিতরে বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো দাহ্য কয়লা এবং অর্ধদগ্ধ গ্যাজেলের হাড়। সম্ভবত এরা আগুন জ্বালানোর জন্য কয়লার ব্যবহার করতো। সম্ভবত গ্যাজেলের হাড়- আগুন উস্কে দেওয়া বা মাংস ঝলসানোর দণ্ড হিসেবে ব্যবহার করতো।
২.৫ লক্ষ্ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের ভিতরে এদের একটি দল মরোক্কো থেকে কেনিয়ার দিকে চলে এসেছিল। এই সময়ের ভিতরে লেভালয়য়িস অস্ত্রের উন্নতর সংস্করণ তৈরি করেছিল। আরও পরে মধ্য প্রস্তরযুগে সিরিয়া এবং মিশরের নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলে এই অস্ত্রের অধিকতর উন্নত সংস্করণ উদ্ভাবন হয়েছিল। পরে এই অস্ত্র নির্মাণকৌশল মধ্য এশিয়া, ভারতবর্ষ ও চীনের এর বিস্তার ঘটেছিল।