মস্তিষ্কমূল
ইংরেজি: brainstem
মস্তিষ্কের এই অংশটুকু রয়েছে একবারের করোটির নিচের
দিকে। মস্তিষ্কের এই অংশটির সাথে
সুষুম্নাকাণ্ড (Spinal
Cord) যুক্ত থাকে। সুষুম্নাকাণ্ড দ্বারা বাহিত সকল তথ্য
মস্তিষ্ক এই অংশ দ্বারা গ্রহণ করে। এছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃদপিণ্ডের গতি, রক্তের
চাপ ইত্যাদি এই অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
এর অপর নাম সরীসৃপীয় মস্তিষ্ক (reptilian
brain)।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন,
৩৪ কোটি বৎসর আগে
(কার্বনিফোরাস) অধিযুগে-
টেট্রাপোডদের
একটি দল বিবর্তিত হয়ে সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীতে পরিণত হয়েছিল। আর
কার্বোনিফোরাস অধিযুগের শেষের দিকে,
৩০ কোটি বৎসর আগে-
সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীকূল বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। আদি সরীসৃপ
জাতীয় প্রাণীদেহে প্রথম মস্তিষ্কের এই অংশের বিকাশ ঘটেছিল। সরীসৃপ থেকে
বিবর্তিত হয়ে যত প্রাণী রয়েছে, তাদের ভিতর মস্তিষ্কের এই অংশ রয়েছে। এই অংশে
রয়েছে ক্ষুধা, ভয় জাতীয় অনুভুতি।
কার্যক্রমের বিচারে একে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো−
পশ্চাৎ মস্তিষ্ক, মধ্য মস্তিষ্ক এবং ডায়েনসেফালন।
মানব মস্তিষ্কের একটি অংশ। এর প্রধান উপাদান শ্বেত পদার্থ এবং ধূসর পদার্থ। উভয় অংশ জালের মতো ছড়িয়ে থাকে। এটা পুরো অংশ জুড়েই সুসমন্বয়ের ধারায় নানা ধরনের কাজ করে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো সম্মুখ মস্তিষ্ককে উদ্দীপ্ত করা। ঘুম থেকে জাগানোর ক্ষেত্রে এই অংশ কাজ করে। এই কারণে, একে অনেক সময় রেটিকুলার অ্যাক্টিভেশন সিস্টেমও বলা হয়।
পশ্চাৎ মস্তিষ্কের সেরেবেলাম জটিল চলন নিয়ন্ত্রণ করে এবং দক্ষতা অর্জনে অন্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। নৃত্যের মতো দ্রুত অঙ্গসঞ্চালেনে কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এই অংশ। দেখা যায় বিড়াল বা চিতাবাঘের মত দ্রুত চলাচলকারী প্রাণীদের সেরেবেলামের আকার বেশ বড় থাকে। পক্ষান্তরে ধীর গতির প্রাণিদের সেরেবেলামের আকার বেশ ছোট হয়। সেরেবেলামের কাজই হল ক্ষেত্রে সেরেবেলামের ভূমিকা যথেষ্ট।
মধ্য
মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাশীর্ষকের মাঝখানে অবস্থিত অংশকে
পনস বা
যোজক বলে ।
মস্তিষ্কের
বিভিন্ন অংশের
মধ্যে সমন্বয়সাধন
করা হল পনস বা
যোজকের প্রধান
কাজ।
পন্সের নিউক্লিয়াই সেরেবেলাম থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং এর সাথে মস্তিষ্কের অবশিষ্ট
অংশের সংযোগ স্থাপন করে।
এটি পনসের পরবর্তী অংশ এবং সুষুম্নাকান্ডের অগ্রভাগে অবস্থিত। এটি মস্তিষ্কের
সবচেয়ে নিচের অংশ। হৃদস্পন্দন, শ্বাসক্রিয়া, খাদ্যগ্রহণ, লালা ও ঘর্ম নিঃসরণ
ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা হল সুষুম্নাশীর্ষকের প্রধান কাজ।
এটি সুষুম্নাশীর্ষক ও পনসের পিছনে এবং পশ্চাদ করোটির খাঁজে অবস্থিত। লঘু মস্তিষ্কটি দুটি গোলার্ধে বিভক্ত থাকে । এই গোলার্ধ দুটি ভারমিস নামে একটি যোজক দিয়ে যুক্ত থাকে । লঘু মস্তিষ্ক মানবদেহের ভারসাম্য রক্ষা করে।
সেরেবেলাম ছাড়া
হিন্ডব্রেইনে তিনটি আলাদা উপ-অংশ। এগুলো হলো−
রেটিকুলার ফরমেশন, পন্স
এবং মেডুলা। এদের ভিতরে মেরুদণ্ডের উপরস্থ প্রান্তে অবস্থিত মেডুলা শ্বাস-প্রশ্বাস
এবং রক্ত সংবহনের মত অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এই অংশটি
কোনভাবে আঘাত প্রাপ্ত হলে খুব সহজেই মানুষের মৃত্যু হওয়া সম্ভব।