অগ্র-মস্তিষ্ক
ইংরেজি: forebrain।
মানব মস্তিষ্কের
সবচেয়ে বড় অংশ হলো এর
অগ্রমস্তিষ্ক। অগ্র
মস্তিষ্ক তিনটি অংশে বিভক্ত। এই অংশগুলো হলো
−
কর্টেক্স, ব্যাসাল গ্যাঙ্গলিয়া এবং লিম্বিক পদ্ধতি। নিওকর্টেক্সের উপরে রয়েছে ছয়
স্তরের ধূসর পদার্থ (Grey matter)।
মূলত এর রঙ ধূসর-বাদামী। এর পুরুত্ব প্রায় ৩ সেন্টিমিটার। এই অংশটি নিউরাল
কোষ দ্বারা গঠিত। এই অংশ দ্বারা মানুষের দেহের পেশী নিয়ন্ত্রণ, দর্শন এবং শ্রবণের
ক্ষেত্রে এই অংশ বিশেষ ভূমিকা রাখে। দেহের ২০% অক্সিজেন মস্তিষ্ক ব্যবহার করে।
পক্ষান্তরে মস্তিষ্কে প্রাপ্ত মোট অক্সিজেনের ৯৫% ব্যবহৃত হয় এই ধূসর অংশে।
মস্তিষ্কের ধূসর অংশের নিচে থাকে শ্বেত পদার্থ (white
matter)।
- কর্টেক্স (cortex):
এই অগ্রমস্তিষ্কের উচ্চতর অংশ। এই অংশ দুটি ভাগে বিভক্ত। এর একটি হলো
নিওকর্টেক্স অপরটি ওল্ডার কর্টেক্স। ক্রমবিবর্তনের ধারায় প্রাণিজগতে প্রথম
বিকশিত হয়েছিল ওল্ডার কর্টেক্স। স্তন্যপায়ী প্রাণী ছাড়াও এই কর্ডেক্স পাখি এবং
সরীসৃপ দেখা যায়। সেই তুলনায় নব্য কর্টেক্সের দেখা পাওয়া উন্নততর প্রাণিকূলে।
ওল্ড কর্টেক্স বাইরে থেকে দেখা যায় না।
ভরের দিক থেকে কর্টেক্স সমস্ত মস্তিষ্কের প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ জুড়ে আছে এবং এর
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ২৫০০ বর্গ সেন্টিমিটার, যদিও এর পুরুত্ব মাত্র ১.৫
থেকে ৩ মিলিমিটার। এই কর্টেক্সের প্রধান কাজ হল কাজে উৎসাহিত করা। এই অংশে রয়েছে চিন্তা, মনন ও বুদ্ধি
ইত্যাদির নিয়ন্ত্রক অংশ। এই কারণে একে অনেক সময় গুরু মস্তিষ্ক (telencephalon,
cerebrum) বলা হয়। এর বাইরের দিকে
অসংখ্য খাঁজ (সালকাস) এবং ভাঁজ (জাইরাস) দেখা যায় । গুরু মস্তিষ্কটি একটি গভীর
খাঁজ দিয়ে দুটি গোলার্ধে অর্থাৎ ডান ও বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারে
বিভক্ত থাকে।
এই গোলার্ধ দুটি
করপাস ক্যালোসাম
নামে একটি প্রশস্ত
স্নায়ু-যোজক
দিয়ে পরস্পর যুক্ত থাকে ।
গুরু মস্তিষ্ক
পাঁচটি খণ্ডে
বিভক্ত। এই খণ্ডগুলো
হলো−
-
অগ্র খণ্ড
(Frontal lobe):
প্রজ্ঞা, চিন্তা, মেজাজ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।
- পশ্চাৎ খণ্ড (Parietal
lobe): নানা ধরনের
ইন্দ্রিয়জাত অনুভূতিসমূহকে সমন্বয় করে।
- দর্শন খণ্ড
(Occipital lobe):
দেখার সাথে সম্পর্কিত আলোক সংবেদী তথ্য বিশ্লেষণ করে।
- টেম্পরাল খণ্ড (Temporal
lobe): গন্ধ এবং ধ্বনি
বিশ্লেষক অংশ। এছাড়া দৃশ্যের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- লিম্বিক খণ্ড (Limbic
lob):
আবেগ এবং স্মৃতি নিয়ন্ত্রক অংশ। এই অংশে রয়েছে
ক্রোধ, বিষাদ, আনন্দ, দুঃখ, কামপ্রৱবৃত্তি। এই অংশটি মূলত মস্তিষ্কের
মধ্যভাগে অবস্থিত। বিবর্তনের ধারায় মস্তিষ্কমূলের পরে লিম্বিক মস্তিষ্ক
বিকশিত হয়েছিল। মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশ রয়েছে এলিগেটরের মস্তিষ্কে।
এলিগটরের মস্তিষ্কের এই অংশ কাজ করে খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে। এই অংশের
ভিতরে একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে কামপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রক অংশ। এই অংশের নাম
এমিগডালা (amygdala)।
- ইনসুলার কর্টেক্স (Insular
cortex):
বেদনা, অস্বস্তি জাতীয় অনুভূতি বিশ্লেষণ করে।