অক্সিটোসিন (হরমোন)
ইংরেজি: Oxytocin বাংলা অক্সিটোসিন
রাসায়নিক সংকেত-
C43H66N12S2
এর গলনাঙ্ক ১০০৭.২ সেলসিয়াস

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে প্রাপ্ত একটি পলিপেপ্টাইড হরমোন হরমোন বিশেষ। একে ভালোবাসা এবং যৌনাসক্তি বৃদ্ধির হরমোন হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ভিন্সেন্ট ডা ভেনদ এবং তাঁর সহকর্মীদের সাথে এই হরমোন বিশ্লেষণ করেছিলেন

এই বিশেষ হরমোনটি পিটুইটারি গ্রন্থি ও মস্তিষ্কের হাইপো থ্যালামাস অঞ্চল হতে নিঃসৃত হয়। যৌনাচরণে বা প্রসবের সময় এই হরমোনটির আধিক্য ঘটে থাকে নারীদেহে। যৌনক্রিয়ার ঘনিষ্টমুহূর্তে অধিক পরিমাণে অক্সিটোসিনের নির্গমন ঘটে। বিশেষ পুরুষের আলিঙ্গনে, যৌনসংবদেন অংশে স্পর্শ বা মর্দনে এবং রাগমোচনের সময় নারীদেহের রক্তে অক্সিটোসিনের আধিক্য ঘটে। মূলত এই হরমোনটি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তীব্র আকর্ষণের অনুভবকে উদ্দীপ্ত করে। যার নারী-পুরুষ বিপরীত লিঙ্গের ছোটো খাটো ত্রুটিকে উপেক্ষা করে থাকে। এই সময় এই হরমোনের প্রভাবে মানুষের উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভিতরে অস্থিরতা ও শরীরে ঘামের সৃষ্টি করে। কিন্তু পছন্দের জুটির সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হলে অক্সিটোসিনের নিঃসরণের পরিমাণ কমে যায়। ফলে সে সময়ে পরস্পরের দেখা করার ভিতরে তীব্র অনুভূতি সক্রিয় হয়ে উঠে না। ফলে উচ্চ রক্তচাপ বা ঘাম নিঃসরণের মতো ঘটনা ঘটে না।

এই হরমোনটি শরীরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া করে। কিন্তু সরাসরি  মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে না। কারণ, মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহের সময় বড় ধরনের অনু প্রবেশের জন্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ফলে অক্সিটোসিনের মতো বড় অণু সেখানে পৌঁছায় না। তবে এই হরমোনটি মস্তিষ্কের হাইপো থ্যালামাস থেকে উৎপন্ন হয়ে যৌনাসক্তিকে ত্বরান্বিত করে।

এই হরমোনটি সন্তান প্রসব করার সময় প্রচুর পরিমাণে নিঃসরিত হয়। এর ফলে সন্তান প্রসবকালে জরায়ুর সংকোচন-প্রসারণ বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে গর্ভফুলকে দ্রুত নিষ্ক্রমণে সহায়তা করে। এই কারণে অনেক সময় চিকিৎসকরা গর্ভবতীর সন্তান প্রসবের সময় জরায়ুকে সঙ্কুচিত করার জন্য এই হরমোনটি ড্রাগটি ব্যবহার করেন। অনেক সময় এই হরমোন সন্তানপ্রসবের পর মায়ের স্তনে ইনজেকশানের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে মাতৃস্তনে দুধের আধিক্য ঘটে। তবে গর্ভবতী নারীদের জন্য এই হরমোন গ্রহণ বিপদজনক।

এই হরমোন মানবিক গুণ (স্নেহ, মমতা, ভালবাসা) বৃদ্ধির সহায়ক। সন্তান প্রসবের পর, নারী মনে যে সন্তানস্নেহ তীব্ররূপে বিরাজ করে, তার পিছনে এই হরমোনটি সক্রিয় থাকে। শুধু মানুষ নয়, যে কোনো স্তন্যপায়ী প্রাণী এই হরমোনের প্রভাবে সন্তানকে রক্ষা করে। এই হরমোন পারস্পরিক এবং পর্যায়ক্রমিক কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রসূতি এবং সন্তানের কল্যাণ করে। যেমন প্রসবের পর পরই এই হরমোনের প্রভাবে নারী মনে সন্তানস্নেহ তীব্রতর হয়ে উঠে। এর ফলে মা তাঁর শিশুকে গভীরভাবে আদর করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। এর ফলে মাতৃস্তনে দুধের আধিক্য ঘটে। মা যখন শিশুকে স্তনদান করেন, তখন গভীর ভালোভাষার কারণে অক্সিটোসিনের নির্গমণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জরায়ু স্বাভাবিক দশায় পৌছানোর জন্য সংকুচিত হতে থাকে। এবং জরায়ু থেকে রক্ষক্ষরণও বন্ধ হয়ে যায়।