শ্রবণেন্দ্রিয়
জীবদেহের যে তন্ত্রের দ্বারা শব্দকে শনাক্ত করার কাজে ব্যবহৃত হয়। মানব দেহে এই
তন্দ্রের সাধারণ নাম কর্ণ বা কান। এর প্রধান কাজ মূলত দুটি।
১. শব্দ তরঙ্গ গ্রহণ করে তা স্নায়বিক সংকেতে রূপান্তর করা এবং মস্তিষ্কে পৌঁছে দেওয়া।
২. মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্র এই সংকেতকে বিশ্লেষণ করে শব্দকে বোধগম্য করে তোলা
সামগ্রিক গাঠনিক বিন্যাস ও কর্মকাণ্ডের বিচারে,
শ্রবণেন্দ্রিয়কে দুটি প্রধানভাগে ভাগ করা হয়। ভাগ দুটি হলো-
- প্রান্তীয়
শ্রবণতন্ত্র: বাইরের শব্দকে শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং মস্তিষ্কের
কেন্দ্রীয় শ্রবণতন্ত্রে পাঠায়। এই অংশকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি
হলো-
(Outer ear)
: এটি শ্রবণেন্দ্রিয়ের
প্রথমাংশ। এর কাজ হলো বাইরের শব্দ তরঙ্গ সংগ্রহ করে তা কানের ভেতরের অংশে
সঞ্চালিত করা। এই অংশটি তিনটি ভাগে বিভক্ত এগুলো হলো-(Pinna/Auricle):
কানের বাইরের দৃশ্যমান অংশ।
শব্দ তরঙ্গ সংগ্রহ করে শ্রবণনালীতে পাঠায়।
শ্রবণনালী (External Auditory Canal / Meatus): কর্ণশঙ্খ থেকে কানের পর্দা পর্যন্ত একটি নালী।
শব্দ তরঙ্গকে কানের পর্দায় পৌঁছে দেয়।
এই অংশেকর্ণৱ মোম (Earwax):
উৎপন্ন হয়। এই মোম কানের
ভেতরের অংশকে সুরক্ষা দেয় এবং জীবাণু প্রতিরোধ করে।
কর্ণঝিল্লি বা কানের পর্দা
(Tympanic Membrane):
বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের মাঝে পাতলা ঝিল্লি।
শব্দ তরঙ্গ এসে এটিকে কাঁপায় এবং সেই কম্পন মধ্যকর্ণে প্রেরিত হয়।
মধ্যকর্ণ
(Middle ear):
মধ্যকর্ণের কাজকে সাধারণভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
ভাগগুলো হলো-
- কর্ণঝিল্লির কম্পন গ্রহণ করা।
- স্থিকণার মাধ্যমে কম্পনকে পরিবর্ধন
করে অন্তঃকর্ণে পৌঁছে দেওয়া।
কর্ণ-গল নালী
(Eustachian Tube)
দ্বারা চাপ সমান রাখা, যাতে কর্ণঝিল্লি ঠিকভাবে কাঁপতে পারে।
উল্লেখ্য কর্ণ-গল নালী- মধ্যকর্ণকে গলার পিছনের অংশ (নাকের সাথে সংযুক্ত গলাবহুলি বা ফ্যারিংক্স) এর সাথে যুক্ত করে।
দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩.৫ সেমি। এর এক প্রান্ত মধ্যকর্ণের সাথে এবং অপর প্রান্ত নাক-গলার সংযোগস্থলের সাথে যুক্ত থাকে। নালীটি সাধারণত বন্ধ অবস্থায় থাকে। কিন্তু হাই-তোলা,
গিলতে থাকা বা চিবানোর সময় সাময়িকভাবে খোলে। নালিটি বাইরের বায়ুচাপ ও মধ্যকর্ণের ভেতরের বায়ুচাপকে সমান রাখে।
তাই হঠাৎ উড়োজাহাজে ভ্রমণের সময় উপরে ওঠা বা পাহাড়ে ওঠার সময় কানে চাপ অনুভব করলে হাই তোলার মাধ্যমে স্বস্তি পাওয়া যায়। চাপ সমান রাখার ফলে কর্ণঝিল্লি ঠিকমতো
কাঁপতে পারে এবং শব্দ গ্রহণে সাহায্য করে। এছাড়া মধ্যকর্ণে জমে থাকা তরল বা শ্লেষ্মা গলার দিকে পাঠিয়ে দেয়।
অন্তঃকর্ণ (Inner ear):
অন্তঃকর্ণে শঙ্খাকৃতির একটি নালী থাকে।
একে শঙ্খনালী
(Cochlea)
বলা হয়। এই অংশে মধ্যকর্ণ থেকে
আগত শব্দকে তরঙ্গকে স্নায়বিক সংকেতে রূপান্তর করে । এছাড়া দেহের ভারসাম্য রক্ষার কেন্দ্রীয় অঙ্গ কাজন করে।
কেন্দ্রীয়
শ্রবণতন্ত্র: এই অংশটি শব্দকে বিশ্লেষণ করে এবং শব্দের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।
এই অংশকে কয়েকটি অংশে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো (Cochlear Nerve / Auditory Nerve, CN VIII): শঙ্খনালীর শ্রবণকোষগুলো থেকে উদ্দীপনা সংগ্রহ করে মস্তিষ্ককাণ্ডে নিয়ে যায়।
শঙ্খনালীয় নিউক্লিয়াস (Cochlear Nuclei, Brainstem):
এখানে সংকেত প্রথম প্রক্রিয়াজাত হয়।
সুপিরিয়র অলিভারি কমপ্লেক্স (Superior Olivary Complex, Pons)
দুই কান থেকে আসা সংকেত তুলনা করে। এছাড়া শব্দের দিক নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ট্রাপিজয়েড বডি
(Trapezoid Body): এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্নায়বিক পথ।
এই অংশটি থাকে মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের একে অপরের সাথে যুক্তকারী
পন্সএর ভিতরে। উল্লেকখ্য পন্স থাকে মস্তিষ্ককাণ্ডের মধ্যমস্তিষ্ক) ও মজ্জার মাঝখানে অবস্থিত।
ল্যাটেরাল
লেমনিসকাস (Lateral Lemniscus)
: সংকেত বহনকারী একটি প্রধান স্নায়বিক পথ। পন্স থেকে মজ্জা পর্যন্ত
বিস্তৃত একটি একটি সাদা তন্তুযুক্ত বান্ডিল।
ইনফেরিয়র কোলিকুলাস (Inferior Colliculus, Midbrain)
শব্দের স্থান, গতি ও তীব্রতা বিশ্লেষণ করে।
মেডিয়াল জেনিকুলেট বডি (Medial Geniculate Body, Thalamus)
শব্দ সংকেতকে আরও বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্কের শ্রবণ কর্টেক্সে পাঠায়।
প্রাথমিক শ্রবণ কর্টেক্স (Primary Auditory Cortex, Temporal Lobe)
:
মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের সুপিরিয়র টেম্পোরাল গাইরাসে অবস্থিত।
এখানে সংকেতকে শব্দ হিসেবে সচেতনভাবে উপলব্ধি করার প্রক্রিয়া সচল হয়।