দ্রাবিড়
ইংরেজি : Dravid
সাধারণভাবে দ্রাবিড়িয়ান ভাষাসমূহে কথা বলে এমন ভারতীয় নরগোষ্ঠী।

অনেকে মনে করেন প্রোটো-অস্ট্রালয়েডদের ভারতের প্রবেশ করেছিল আরও একটি নরগোষ্ঠী। এদেরকে সাধারণভাবে নামকরণ করা হয়ে থাকে প্রোটো-দ্রাবিড়। মূলত দ্রাবিড় ভাষার প্রাথমিক রূপকে বলা হয়ে প্রোটো-দ্রাবিড় ভাষা। এই সূত্রে এই ভাষার অধিকারীদেরকে বলা হয় প্রোটো-দ্রাবিড়।  অন্ধ্রপ্রদেশের আদিতান্নালুর অঞ্চলে প্রাপ্ত সমাধিপাত্রে এবং দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন সমাধিস্তূপে যেসব নরকঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে তা থেকে এ কথাই প্রমাণিত হয়। মহেঞ্জোদারোতেও এ জাতির নরকঙ্কাল পাওয়া গেছে। আধুনিক বাঙালিদের মধ্যেও কদাচিৎ এই ধরনের লোক দেখতে পাওয়া যায়। ভারতে আগত জনগোষ্ঠীর লোকেরা প্রোটো দ্রাবিড় ভাষায় কথা বলতো।

খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের ভিতরে এই ভাষা বিবর্তিত হয়ে কয়েকটি শাখায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। এগুলোর নামকরণ করা হয়েছে- এটি প্রোটো-উত্তর দ্রাবিড়, প্রোটো-মধ্য দ্রাবিড় এবং প্রোটো-দক্ষিণ দ্রাবিড় ভাষা । এ সকল শাখা থেকে উৎপন্ন হয়েছিল -
তেলেগু, তামিল, কর্ণাটক, ও মালায়ালাম ভাষাসমূহ।  

দ্রাবিড়ভাষাভাষী লোকদের সঙ্গে প্রাচীন সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, মিশরীয় ছাড়াও আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের জাতিসমূহের মিল পাওয়া যায়। এই কারণে নৃতাত্ত্বিকরা এদেরকে 'ভূমধ্য সাগরীয়  নরগোষ্ঠী নামে অভিহিত করে থাকেন। ধারণা করা হয়, ভারতে আগত দ্রাবিড়রা বাস করতো চীনের গোবি মরুঅঞ্চলে। ধারণা করা হয়, এরা খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দে প্রোটো-দ্রাবিড়রা ভারতে প্রবেশ করেছিল উত্তর-পশ্চিম দিকে দিয়ে।

এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা প্রথমে ভারতবর্ষের সিন্ধু নদীর তীরে  বসতি স্থাপন করেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সূত্রে যে সকল নমুনা এই অঞ্চলের হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদাড়ো থেকে পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে এই সভ্যতাকে সামগ্রিকভাবে 'সিন্ধু সভ্যতা' নামে অভিহিত করা হয়। আবার 
J. Bloch এবং M. Witzel -এর মতো অনেকে গবেষক মনে করেন, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল আর্যদের অগ্রবর্তী দল এবং অনেকে মনে করেন, এদের দ্বারা ঋগ্বেদের আদি অংশ রচিত হয়েছিল।

দ্রাবিড়রা ধীরে ধীরে দক্ষিণ ভারতে নিজেদের বসতি স্থাপন করা শুরু করে। অনেক মনে করেন বেলুচিস্তানের ব্রাহুই ভাষাভাষীরা দ্রাবিড়দের একটি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী। ব্রাহুইরা তুলনামূলকভাবে ভারতীয় দ্রাবিড়দের চেয়ে ফর্সা, লম্বা এবং সুদর্শন। থমসন, কাফম্যান এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের মতে- খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের পরে, দ্রাবিড়রা আর্যদের দ্বারা ভারতবর্ষের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল থেকে বিতারিত হয়ে  দক্ষিণ ভারতে ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছিল। দক্ষিণ ভারতে আগে থেকেই থাকা দ্রাবিড় এবং বিতারিত দ্রাবিড়দের সমন্বয়ে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আর্যরা এই বিশাল দ্রাবিড় অঞ্চলকে পদানত করতে পারে নি। কিন্তু ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর (নেগ্রিটো, প্রোটো-অস্ট্রালয়েড, দ্রাবিড়) আরেকটি অংশ থেকেই গিয়েছিল। এদেরকে আর্যরা অনার্য হিসেবে অভিহিত করতো। 

ভারতীয় দ্রাবিড়

ব্রাহুই

এদের গায়ের রঙ কালো, গড় উচ্চতা মাঝারি। নিগ্রোয়েডদের মতো এদের ঠোঁট মোটা নয়। মাথা গোলাকার, চুল ঢেউ খেলানো বা মোটামুটি সপাট। তবে মোঙ্গোলীয়দের মতো সটান নয়। নাকের উচ্চতা মাঝারি। চোখ বড়, চোখের মণি কালো বা ঘোলাটে কালো হয়।

দ্রাবিড় নৃগোষ্ঠী'র শ্রেণিবিভাজন
ভারতের দ্রাবিড়ীয় জনগোষ্ঠীর নৃগোষ্ঠীগুলো রয়েছে, তারা হলো

দ্রাবিড়দের ভাষা-শ্রেণিগত বিভাজন
ভাষাতাত্ত্বিকরা দ্রাবিড়দের ভাষাকে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছেন। এই ভাগগুলো হলো-
১. উত্তর-পশ্চিমা ব্রাহুই।
২. মধ্য গোণ্ড
৩. পূর্ব মাল্‌তো
৪. অন্ধ্র তেলেগু
৫. দক্ষিণী দ্রাবিড়ীয়

দক্ষিণী দ্রাবিড়ীয় ভাষাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর এক ভাগে রয়েছে কন্নড়, টুলু ইত্যাদি ভাষা। অন্য ভাগে আছে মলয়ালম ও তামিল ভাষা।


সূত্র :

সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা। ডঃ রামেশ্বর শ।