সৌগন্ধিক
ইংরেজি Amber।
এটি একটি ভঙ্গুর পাথর। এর প্রতিফলনে এক ধরনের আভা লক্ষ্য করা যায় বলে এর অপর নাম
তৈলস্ফটিক। এতে বিদ্যুৎ-ধারণ ক্ষমতা আছে। শুকনো কাপড় দিয়ে এই রত্ন ঘষলে
তড়িৎ-চুম্বক উৎপন্ন হয় এবং ছোট ছোট কাগজের টুকরাকে ঘর্ষণ
করে। এর ইংরেজি এ্যাম্বর শব্দটি এসেছে গ্রীক থেকে এসেছে। গ্রীক এ্যাম্বর অর্থ
ইলেক্ট্রন। গ্রীক পুরাণ কথায় এ সম্পর্কে একটি কাহিনী পাওয়া যায়। কাহিনীটি হলো–
এক গ্রীক বীর ঘোড়ায় চড়ে স্বর্গে যাওয়ার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছিল। আর এই বীরকে
উৎসাহিত করেছিল তার বোনেরা। এই বীর শেষ পর্যন্ত ঘোড়ার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নীচে পড়ে
গিয়ে প্রাণ হারায়। ভাইয়ের দুঃখে এই বোনেরা পাইন বৃক্ষে রূপান্তরিত হয়েছিল। আর
বোনদের দুঃখের অশ্রু কষ হয়ে পাইন গাছ থেকে নিঃসৃত হতো। এই অশ্রুই সৌগন্ধিকে
রূপান্তরিত হয়েছিল।
এটি কোনো খনিজ পদার্থ নয়। দেবদারু বা পাইন জাতীয় বৃক্ষ থেকে নিঃসৃত আঠার মতো কষ
বের হয়। প্রাচীনকালে এই জাতীয় বৃক্ষের বন থেকে এই কষ প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে
ভূমিতে জমা হতো। কালক্রমে এই কষগুলি মাটির নিচে চাপা পড়ে জীবাশ্মে পরিণত হয়েছিল।
এই জীবাশ্মই হলো সৌগন্ধিক। উল্লেখ্য সৌগন্ধিক প্রথম অবস্থায় নরম ও চটচটে থাকার
কারণে এর গায়ে মশা, মাছি বা এই জাতীয় ক্ষুদ্র প্রাণী বসলে, আর মুক্ত হতে পারে না।
ফলে এ জাতীয় প্রাণীদের জীবাশ্মও সৌগন্ধিতে পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয়, বাল্টিক সাগরের উপকূলে পাইন জাতীয় বৃক্ষের বিশাল বন ছিল। কালক্রমে এই
বন থেকে উৎপন্ন কষ পানির নিচে ডুবে গেলে এবং এর উপর মাটি জমে সৌগন্ধিকের জন্ম
হয়েছিল। এর উপাদান C10H16O
ও অন্যান্য উপাদান। এর কাঠিন্য ২-২.৫। আপেক্ষিক গুরুত্ব: সাধারণতঃ ১.০৫-১.০৯,
সর্বাধিক ১.৩০, প্রতিসরাঙ্ক ১.৫৪, বিচ্ছুরণ নাই।
এর বর্ণ- হাল্কা হলুদ, বাদামী, লাল, সাদাটে, নীল, কালো, সবুজাভ ও ধবধবে সাদা হয়ে
থাকে। স্বচ্ছ, অর্ধস্বচ্ছ, অস্বচ্ছ সব ধরনেরই হয়ে থাকে। তবে খাঁটি সৌগন্ধিক মধুর
মতো হলুদাভ হয়ে থাকে। সুর্যালোকে এটি শিশিরের মতো চকচক করে। বাল্টিক সাগরের
উপকূল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রুমানিয়া, মায়ানমার, কানাডা, সিসিলি দ্বীপ ইত্যাদি
অঞ্চলে পাওয়া যায়।
জ্যোতিষশাস্ত্রে এই রত্নকে স্বাস্থ্যরক্ষা, দৈব-দুর্বিপাক প্রতিরোধ, গ্রহদোষ
নিরাময়, যাদু-টোনার প্রভৃতির প্রতিকারের জন্য ধারণ করার বিধান আছে।