আবুল কাশেম সন্দীপ
(১৯৪৪-১৯৯৫)
শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক এবং প্রথম সংবাদ পাঠক।
১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার সারিকাইত গ্রামে
জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নুর আহমেদ।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে সাউথ সন্দ্বীপ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন
পাশ করেন।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক জমানা (চট্টগ্রাম)-এর
সাথে যুক্ত হন।
১৯৬২-৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রনেতা হিসেবে সরকারি
আই,আই কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের ছাত্র সংগ্রাম কমিটির সদস্য ছিলেন এবং ১৯৬৭
খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সদস্য ছিলেন।
১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ চট্টগ্রামের সরকারি আই,আই কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক
পাশ করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজ
বাংলাতে ভর্তি হন। এই বছরেই তিনি চট্টগ্রাম কলেজে
সাহিত্য সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত
তিনি এই পদে ছিলেন।
১৯৬৬-৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র সংসদের
সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান)
পাশ করেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা
সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। এই সময় তিনি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার নির্মাণ কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে দৈনিক জমানা (চট্টগ্রাম)
ত্যাগ করেন এবং তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি কলেজে সহ-অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান
করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে
চট্টগ্রামের কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র গঠিত হয়, তিনি এর
অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি এই বেতার কেন্দ্রে বার্তা বিভাগের দায়িত্ব পালন
করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ ৭.৪০ মিনিটে তিনি
প্রথম ঘোষণা করেন- 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে বলছি'। তিনিই প্রথম
প্রথম বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সংবাদাকারে পাঠ করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আগরতলা ও কলকাতায় সংবাদ লেখার দায়িত্ব পালন করেন এবং বেতারে বাংলা খবর পাঠ করতেন। মুক্তিযুদ্ধে বহুল প্রচারিত গান ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’ এর গীতিকার তিনি।
স্বাধীনতার পর তিনি কিছুদিন ঢাকা বেতার কেন্দ্রে নিযুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে
বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের গণশিক্ষা প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেন।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ভারত থেকে কো-অপারেটিভ বিষয়ে ফেলোশিপ
নিয়ে লেখাপড়া করেন।
১৯৭৫-৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনে আবুল কাশেম সন্দ্বীপ গণশিক্ষা প্রকল্পের পরিচালক, ভিইআরসি’র
(VERC- Village Education Research Centre, Savar) সমন্বয়কারী ও উপ-পরিচালক এবং
গণসাহায্য সংস্থায় কাজ করেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণচীন, কিউবা, ভারত,
থাইল্যান্ড, জাপান, ফিলিপাইন, তাইপে, হংকং সফর করেন।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর ৫১ বছর বয়সে সাভারের
তালবাগস্থ নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
পুরস্কার
- বঙ্গবন্ধু স্বর্ণ পদক (১৯৭৫)
- আজিজুর রহমান সাহিত্য (১৯৮৬)
- সাংবাদিকতায় একুশে পদক (১৯৯৮, মরণোত্তর)
- চাদ সুলতানা সাহিত্য পুরস্কার (২০০২, মরণোত্তর)
এছাড়া তার স্মৃতির স্মরণে সাভার পৌরসভার সাভার থানা সড়কটির নাম ‘আবুল কাশেম সন্দ্বীপ’ হিসেবে নামকরণ করা হয়।