অজিত
রায়
সঙ্গীত শিল্পী
১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন বাংলাদেশের রংপুর জেলার উলিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম মুকুন্দ রায় এবং মায়ের নাম কণিকা রায।
কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন। তাঁর মা কণিকা রায়- ছিলেন
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী
এবং
সালেমা বহুমুখী উচ্চ বালিকা
বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। মায়ের কাছে তাঁর সঙ্গীতের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। অজিত
রায়ের শিক্ষাজীবন শুরু রংপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। পরে ভর্তি হন
রংপুর কারমাইকেল কলেজ। এই কলেজ থেকে তিনি
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা আসেন।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে রেডিওতে প্রথম গান পরিবেশন করেন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তা বোধে উদ্বুদ্ধ জনতার
সাথে আন্দোলনে যোগ দেন। এই সময় রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী জাহেদুর রহিমের অনুপ্রেরণায়
তিনি সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্তাব্দের গণ-অভ্যুত্থানের সময় ডাকসুতে নিয়মিত গণ-সংগীতের রিহার্সেল
করাতেন। তাঁর দরাজ গলার জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁকে ডাকতেন 'রায় বাহাদুর'।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের যুদ্ধের শুরুতে ঢাকাতে কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকেন। জুন মাসের
দিকে কলকাতায় যান। এরপর তিনি কলকাতাস্থ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কণ্ঠশিল্পী
হিসেবে যোগদান করেন। এই সময়
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের
স্টুডিওতে বহু গান তৈরি করা হয়েছিল, প্রচার করা হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের
সময়। শিল্পীই ছিলেন প্রায় ১২০ জনের মত। এদের মধ্যে ছিলেন -
সান্জীদা খাতুন,
রথীন্দ্রনাথ রায়, কাদেরী কিবরিয়া, প্রবাল চৌধুরী, ফকির আলমগীর, উমা খান, স্বপ্না
রায়, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, তপন মাহমুদ, কুইন মাহজাবীন, মিতালী মুখার্জী, মালা খুররম,
মৃণাল ভট্টাচার্য, রফিকুল আলম, রূপা ফরহাদ, শাহীন সামাদ, রিজিয়া সাইফুদ্দিন,
প্রমুখ। এই দলে সুরকার-শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন - সমর দাস, অজিত রায়, আপেল মাহমুদ,
আব্দুল জব্বার, সুজেয় শ্যাম প্রমুখ।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়
দিবসে প্রচারিত আখতার হোসেন রচিত 'স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে' গানটিতে সুর ও কণ্ঠ
দিয়েছিলেন অজিত রায়।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১ল জুলাই তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এই
বৎসরে বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত গমন করেছিলেন।
১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেব সাবেক
সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২৫তম জন্ম
জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
সঙ্গীতে অবদান:
অজিত রায় মূলত রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এর পাশাপাশি
তিনি গণসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গানের জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে
স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তিনি কণ্ঠযোদ্ধা ছিলেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি কণ্ঠদান
করেছিলেন। এ ছাড়া 'সুরজ মিয়া' নামের একটি ছবিতে অভিনয়ও করেন।
সম্মাননা
২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পান। এছাড়া তিনি
যে সকল সম্মাননা পান তা হলো−
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদ থেকে 'শব্দসৈনিক পদক, ১৯৮৮ সালে
সিকোয়েন্স পদক, বেগম রোকেয়া পদক, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক, রবি রশ্মি পদক, ২০১১
সালে রবীন্দ্র পদক, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের গুণীজন পদক, বাংলাদেশ
রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার শ্রদ্ধাঞ্জলি পত্র, চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়্যার
অ্যাওয়ার্ড
স্ত্রী : বুলা রায়।
সন্তানাদি : কন্যা শ্রেয়শী রায় মুমু। পুত্র রোমাঞ্চ রায়