অজয় ভট্টাচার্য
১৯০৬-১৯৪৩।
কবি, গীতিকার, নাট্যকার, চিত্র-পরিচালক।
১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই ত্রিপুরার শ্যামগ্রামে
জন্মগ্রহণ করেন। পিতা রাজকুমার ভট্টাচার্য ছিলে পেশায় উকিল। মায়ের নাম শশীমুখী
দেবী।
পিতার ওকালতির সূত্রে তাঁর শৈশব কেটেছে কুমিল্লা শহরে। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ
করেছিলেন কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালায়। তাঁর মধ্যবর্তী শিক্ষাকাল সম্পর্কে জানা যায়
না। তবে এটুকু জানা যায় যে, তিনি ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
বাংলায় এম এ পাশ করেছিলেন।
কলকাতা থেকে ফিরে এসে তিনি কিছুদিন
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন। এছাড়া তিনি কিছুদিনের জন্যে কুমার
বোর্ডিং-এ ত্রিপুরার রাজবাড়ির কুমারদের গৃহশিক্ষক ছিলেন। পরে ওই চাকরি ছেড়ে শচীন
দেববর্মণের আমন্ত্রণে কলকাতায় চলে আসেন এবং শিক্ষকতার চাকরি নেন কলকাতার
বালিগঞ্জের তীর্থপতি ইনস্টিট্যুশনে। অবসর সময় তিনি চলচ্চিত্রের জন্যে গল্প ও সংলাপ
এবং গান লিখতেন। তাঁর প্রথম গান 'হাসনুহানা আজ নিরালায়'; গানটিতে সুর দিয়েছিলেন
সুরসাগর হিমাংশু দত্ত। পরে তাঁর গানে সুর সেকালের বিখ্যাত সকল সুরকাররা। বিশেষভাবে
তাঁর গানের সুরকারদের তালিকায় পাওয়া যায়- শচীন দেববর্মণ, পঙ্কজ মল্লিক, রাইচাঁদ
বড়াল, অনুপম ঘটক, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। তাঁর গানগুলো গেয়েছেন শচীনদেব
বর্মণ, সায়গল, পঙ্কজ মল্লিক, কানন দেবী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পীরা। তাঁর
রচিত গানের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। তাঁর গানের প্রচুর রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল
হিন্দুস্থান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস, গ্রামোফোন, কোম্পানি, মেগাফোন, সেনোলা থেকে।
অজয় ভট্টাচার্য নানা বিষয়াঙ্গের গান রচনা করেছিলেন। এই তালিকায় ছিল কাব্যগীতি,
ভক্তিগীতি। সুরাঙ্গের বিচারে এ সকল গানের সুরারোপ হয়েছিল ভাটিয়ালি, বাউল,
রাগপ্রধান, কীর্তন ইত্যাদিতে।
ছাত্রজীবনে অজয় ভট্টাচার্য নজরুল ইসলামের সাথে পরিচিত হয়েছিলেন। সেই সূত্রে নজরুল
সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ কাগজে তাঁর প্রথম কবিতা ‘উল্কা’ প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর তিনি
অজস্র কবিতা রচনা করেছিলেন। তাঁর একমাত্র উপন্যাস হলো ‘যেথা নেই প্রেম’।
এছাড়া তিনি এরিখ মারিয়া রেমার্কের ‘রোডব্যাক’ উপন্যাস অনুবাদ করেছিলেন।
তাঁর পরিচালিত ‘অশোক’ ও ‘ছদ্মবেশী’ ছবিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
প্রথম জীবনে তিনি রোমান্টিক গান রচনা করলে, শেষ জীবনে বহু সাধারণ মানুষের
জীবনঘনিষ্ঠ গান রচনা করেছিলেন। বিশেষত চলচ্চিত্রের গানের সূত্রে তাঁর অনেক গান
অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য গান গুলোছিল 'এই পেয়েছি অনল
জ্বালা', 'একটি পয়সা দাও গো বাবু', 'দুঃখে যাদের জীবন গড়া', 'বাংলার বধূ' গানগুলি
লোকের মুখে মুখে ফিরত। অজয় ভট্টাচার্যের জীবিত কালে তাঁর গানের তিনটি সংকলন
প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলো হলো 'আজি আমারি কথা', 'মিলন-বিরহ-গীতি' ও 'শুক-সারী'।
মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় 'আজও ওঠে চাঁদ'। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর স্ত্রী রেণুকা
ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় 'অজয় ভট্টাচার্যের গান'।
১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
[অজয় ভট্টাচার্যের রচিত সঙ্গীত সংগ্রহ]