অকিঞ্চন
(১৭৫০-১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
সঙ্গীতের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল পারিবারিক সূত্রে। তাঁর পিতা দেওয়ান ব্রজকিশোর কালীভক্ত ছিলেন। তিনিও সঙ্গীতশিল্পী এবং রচয়িতা ছিলেন। তাঁর ১টি গানের নমুনা পাওয়া যায়, দুর্গাদাস লাহিড়ি'র সম্পাদিত বাঙ্গালির গান গ্রন্থে। ব্রজকিশোরের বড় ছেলে দেওয়ান নন্দকুমারও সঙ্গীত রচনায় বিশেষ কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। দুর্গাদাস লাহিড়ি'র সম্পাদিত বাঙ্গালির গান গ্রন্থে ৪টি গানের নমুনা পাওয়া যায়। এই গানেগুলো ভৈরবী, বাগেশ্রী, মুলতান রাগে নিবদ্ধ। তালের উল্লেখ রয়েছে ঠেকা ও একতালা।
রঘুনাথ রায়ের সঙ্গীতের পাঠ হয়েছিল তাঁর পিতা এবং বড় ভাইয়ের কাছে। পরবর্তী সময়ে সঙ্গীতশিক্ষা হয়েছিল বর্ধমান রাজদরবারে একাধিক পশ্চিমা ওস্তাদদের কাছে। পরবর্তী সময়ে তিনি বর্ধমান রাজদরবারের দেওয়ান পদ লাভ করেন। এই কারণে তিনি দেওয়ান রঘুনাথ রায় নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি হিন্দুস্থানী ওস্তাদদের কাছে খেয়াল শিখলেও নিজে বাংলা খেয়াল রচনায় হাত দেন। এই অনুপ্রেরণা তিনি লাভ করেছিলেন তাঁর বাবা এবং বড় ভাইয়ের কাছ থেকে।
ব্রজকিশোর, নন্দকিশোর এবং রঘুনাথ এঁরা রাগাশ্রয়ী গান না খেয়ালের বন্দেশ তৈরি করেছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহ জাগে। কারণ এঁদের গানগুলো ছিল চার তুকের। কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য রঘুনাথের গানকে খেয়াল নামেই অভিহিত করেছেন। কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গীতসূত্রসার গ্রন্থে খেয়াল গানের আলোচনায় লিখেছেন‒
'...ইহাতে দুই তুকের অধিক সচরাচর ব্যবহার হয় না, অর্থাৎ ইহাতে কেবল আস্থায়ী ও অন্তরা। কখন কখন ইহাতে তিন চারি কলিও থাকে। কিন্তু তাহাদের সুর সবই অন্তরার ন্যায়। খেয়ালীর সুরের কতকগুলি বাংলা গানে ধ্রুপদের ন্যায় চারি তুক আছে, অর্থাৎ চারি কলির বিভিন্ন প্রকার সুর। নদীয়া জেলার অন্তঃপাতী চুপি গ্রাম নিবাসী মৃত দাওয়ান রঘুনাথ রায় (যিনি 'অকিঞ্চন' বলিয়া খ্যাত) খাস হিন্দুস্থানী খেয়ালে বাংলায় ঐরূপ চারি তুকের অনেক শ্যামাবিষয়ক গান রচনা করিয়াছিলেন।'
কৃষ্ণধনের বিবরণ থেকে মনে হয়ে রঘুনাথ খেয়ালের ধাঁচে শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। উল্লেখ্য রঘুনাথ পরবর্তীকালে বেশ কিছু কৃষ্ণবিষয়ক গানও রচনা করেছিলেন। দুর্গাদাস লাহিড়ি'র সম্পাদিত বাঙ্গালির গান গ্রন্থে রঘুনাথ রায়ের ৯৯টি গান সংকলিত হয়েছে।
রঘুনাথ রায়ের গানের রাগ ও তাল তালিকা নিচে দেওয়া হলো।
রাগ তালিকা: আড়ানা, আড়ানা বাহার, আলাইয়া, আলেয়া, ইমনকল্যাণ, কালাংড়া, কেদারা, গান্ধার, গৌরী, খাম্বাজ, ঝিঁঝিট, ঝিঁঝিট-খাম্বাজ, টোড়ি, টোড়ি বাগেশ্রী, দেশ, দেওগিরি, পরজ, পরজবাহার, পূরবী, বসন্ত-বাহার, বাগেশ্বরী, বাগেশ্রী, বাহার, বিভাস, বেহাগ, ভৈরবী, মালশ্রী, মুলতান, মেঘমল্লার, যোগিয়া, রামকেলি, ললিত-বিভাস, লুমঝিঁঝিট, শ্যামকল্যাণ, সারঙ্গ, সিন্ধু, সিন্ধু-ভৈরবী, সুরট, সুরটমল্লার, সোহিনী, হাম্বির।
তাল তালিকা: আড়া, আড়াঠেকা, একতালা, খয়রা, ছোট চৌতাল, ঝাঁপতাল, ঠেকা, তেওট, তেতালা, পোস্তা, মধ্যমান, যৎ।
সূত্র :
বাঙালির গান। দুর্গাদাস লাহিড়ি
সম্পাদিত। এপ্রিল ২০০১।
বাঙালির
রাগতসঙ্গীতচর্চা। দিলীপ কুমার মুখোপাধ্যায়। কলকাতা, ১৯৭৬।
বাঙালি চরিতাভিধান। প্রথম খণ্ড। সাহিত্য সংসদ। জানুয়ারি ২০০২
বাংলা বিশ্বকোষ। প্রথম খণ্ড। নওরোজ কিতাবিস্তান। ডিসেম্বর, ১৯৭২।