অন্নদাপ্রসাদ বাগচী
চিত্রশিল্পী।
১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার শিখরবলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম চন্দ্রকান্ত বাগচী।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন কলকাতার
অ্যাসেমবলি নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। চিত্রাঙ্কনকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার
ব্যাপারে তাঁর বাবার আপত্তি ছিল। কারণ সে সময় চিত্রাঙ্কনকে অশিক্ষিত পটুয়াদের
নিম্নমানের পেশা মনে করা হতো। তিনি তাঁর কিশোর বয়সে জোড়াসাঁকোর একটি ওয়ার্কশপে
নীলমণি মুখার্জির কাছ থেকে তামার প্লেটে খোদাই কাজে শেখেন।
১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত স্কুল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস-এ এনগ্রেভিং
ক্লাসে ভর্তি হন। এখানে তিনি এইচ.এইচ লক-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এই স্কুলে
থাকাকালীন সময়ে তিনি কাঠখোদাই, লিথোগ্রাফী ও তৈলচিত্রে শিক্ষা লাভ করেন। কিন্তু
আর্থিক সমস্যার কারণেই তিনি তামা খোদাই কারখানায় কাজ অব্যাহত রাখেন। এর পাশাপাশি
পুস্তক অলঙ্করণের কাজও করেন।
১৮৬৮-৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজেন্দ্রলাল মিত্র ও অন্যান্যদের সাথে তিনি উড়িষ্যা ভ্রমণ
করেন। এই সময় তিনি উড়িষ্যার প্রাচীন সৌধ ও মন্দিরের ছবি আঁকেন। রাজেন্দ্রলাল
মিত্রের অ্যান্টিকুইটিজ অব উড়িষ্যা গ্রন্থের উভয় খণ্ডের অধিকাংশ চিত্রই তিনি
এঁকেছিলেন।
১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নিউ ইমেপরিয়াল মিউজিয়ামে আয়োজিত
প্রদর্শনীতে বাগচীর অঙ্কিত চিত্রকর্ম ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।
১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজেন্দ্রলাল মিত্রের বৌদ্ধগয়া ভ্রমণে সময় তাঁর সঙ্গী হন। এই
সময় বৌদ্ধগয়ার উপর রাজেন্দ্রলালের গবেষণাকর্মে জন্য চিত্রাঙ্কন করেন।
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে নবকুমার বিশবাস, ফণিভৃষণ সেন, যোগেন্দ্রনাথ মুখার্জি ও কৃ্পচন্দ্র পাল-এর সহযোগিতায় তিনি ক্যালকাটা আর্ট স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়ে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ই. হ্যাভেলের উপস্থাপিত ইন্ডিয়ান স্কুলে, শিল্প সৃষ্টিতে আধুনিক পশ্চিমা কৌশল প্রয়োগ করা হতো। অন্নদাপ্রসাদ ও তাঁর সমসাময়িক আরও কয়েকজন এ ধারার মধ্যে থেকেই আরও কিছু নতুন কৌশল সাফল্যজনকভাবে সূচনা করেন। এরমধ্যে ধাতু খোদাই শিল্প, লিথোগ্রাফি অন্তর্ভুক্ত ছিল। সে সময় ক্যালকাটা আর্ট স্টুডিও-র লক্ষ্য ছিল ধর্মীয় ও পৌরাণিক চিত্রের জনপ্রিয়তা সৃষ্টি এবং গ্রন্থ ও জার্নালের জন্য চিত্রাঙ্কন। প্রতিকৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি, তৈলচিত্র, জল রং, সর্বপ্রকার নকশা ও লিথোগ্রাফীর ওপরও এ স্টুডিও দক্ষ হয়ে উঠেছিল। সে সময় এই স্টুডিও-র বাংলা ও ইংরেজি বর্ণমালা বোর্ড, কপিবুক এবং ধর্মীয় ও পৌরাণিক লিথোগ্রাফী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।
তিনি কিছুদিন সরকারি আর্ট স্কুলের প্রশিক্ষক
হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই স্কুলের অধ্যক্ষ হন।
১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই জাতীয় কাজের একটি প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর সফলতা
স্টুডিও-র সঙ্গে জড়িত শিল্পীদের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়।
১৮৮৫-৮৬ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষায় প্রথম শিল্পবিষয়ক পত্র 'শিল্প পুষ্পাঞ্জলি
প্রকাশে অন্নদাপ্রসাদ বাগচী অসামান্য অবদান রাখেন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় বঙ্গীয় কলাসংসদ স্থাপিত হলে, তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হন।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ৩ অক্টোবরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র :
বাংলাপিডিয়া প্রথম খণ্ড। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। চৈত্র ১৪০৯/মার্চ ২০০৩।
সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড। জানুয়ারি ২০০২।