অপালা ফরহত নবেদ
সঙ্গীতশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সমাজসেবক।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ওয়াহিদুল হক এবং মায়ের নাম সনজীদা খাতুন। পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বক্‌শিবাজার বদরুন্নেসা কলেজ থেকে এইচ,এসসি পাশ করেন।
এরপর তিনি নবেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ণ ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগ থেকে এমএসসি পাশ করেন। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক হিসেবে নিজ বিভাগে যোগদান করেন।
১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে স্কলারশীপ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার জন্য জাপানের কাগোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে সেখান থেকে পি,এইচ,ডি শেষ করে আবার যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। জাপান থেকে পি,এইচ,ডি শেষে ফিরে এসে অক্লান্ত চেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগে গড়ে তোলেন একটি ছোট কিন্তু তুলনামূলক স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিক গবেষণাগার। গবেষণার কাজে তিনি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত চষে বেড়িয়েছেন গোদ রোগ উপদ্রুত অঞ্চলগুলো। বিভিন্ন সময়ে তাঁর ২০টিরও বেশি গবেষণামূলক নিবন্ধ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। দেশ বিদেশের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন তিনি।

মা-বাবা দু’জনই সঙ্গীতজ্ঞ হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে পেয়েছিলেন সাংগীতিক পরিবেশ। এঁদের কাছেই তাঁর সঙ্গীতে হাতে খড়ি। পরে তিনি ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনে ভর্তি হন। এই সঙ্গীতবিদ্যায়তনের সমাপনী বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় রবীন্দ্র সঙ্গীতে প্রথম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন।

তিনি বিভিন্ন সময় তালিম নিয়েছেন দেশের গুণী সঙ্গীতজ্ঞ ও ওস্তাদদের কাছে। কন্ঠসাধন ও উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন মতি মিঞা, মিথুন দে, আজাদ রহমান, নারায়ণ চন্দ্র বসাক, রামকানাই দাস, মাশকুর আলী খান ও নীলুফার ইয়াসমিনের কাছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছেন বাবা-মা ছাড়াও খালা ফাহমিদা খাতুন, জাহিদুর রহিম, ফরিদা বারী মালিক, আব্দুল আহাদ, নীলিমা সেন, কণিকা বন্দোপাধ্যায় ও শৈলজারঞ্জন মজুমদারের কাছে। নজরুলগীতি, পল্লীগীতি ও গণসঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন সোহরাব হসেন, প্রমীলা চক্রবর্তী ও অঞ্জলী রায়ের কাছে। তাঁর তিনটি গানের অ্যালবাম “রয়েছ নয়নে নয়নে” (রবীন্দ্রসঙ্গীত), “তুমি যে ভালোবেসেছিলে” ও “মেঘলা নিশি ভোরে” (পুরনো বাংলা গান) প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশ জুডো ফেডারেশন থেকে জুডোতে তিনি ব্রাউন বেল্ট লাভ করেন। জাপানে পি, এইচ, ডি করতে যাবার জন্য শিখেছিলেন জাপানী ভাষা। এছাড়াও শিখেছিলেন এস্রাজ বাজানো। দেশে বহুবার তিনি রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যের সঙ্গীতাংশ পরিচালনা করেছেন।

সঙ্গীত, শিক্ষকতা ও গবেষণার পাশাপাশি নানারকম সমাজসেবামূলক কাজেও তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন নির্মাণে ১ লক্ষ টাকা দান করেন।

ছায়ানটের সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থেকেছেন সবসময়। কেরাণীগঞ্জে গড়ে তোলেন “কল্যাণ পরম্পরা” নামে এক বহুমুখী সমাজসেবামূলক সংগঠন। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সিডর বিধ্বস্ত এলাকায় তিন দফা ত্রাণ কার্যক্রম পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে শীতবস্ত্র বিতরণ, চক্ষুশিবির ও স্বাস্থ্যশিবির পরিচালনা, ব্রতচারী প্রশিক্ষণ, ব্যাডমিন্টন ও ফুটবল প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন কার্যক্রমে তিনি ছিলেন সক্রিয়।

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এই ব্যাধিকে সঙ্গী করেই সাধ্যমত চালিয়ে যান তাঁর গান, গবেষণা ও সমাজসেবামূলক কাজ।

২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই ফেব্রুয়ারি তিনি এই দুরারোগ্য ব্যধিতে মৃত্যুবরণ করেন।

তাঁর সিদ্ধান্ত অনুসারে, মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য দিয়ে যান বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে।

পারিবারিক জীবন:
স্বামী: নিয়াজ মোর্শেদ (প্রিন্স।
সন্তান : একমাত্র কন্যা সায়ন্তনী ত্বিষা (অনি।


সূত্র:
অপালা কল্যাণপরম্পরা প্রকাশনা
৫ই মাঘ, ১৪১৮, ১৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১২