বিদ্যাপতি
বাংলা ও মৈথিলী কবি।

বিদ্যাপতির জন্মকাল এবং জন্মস্থান নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক আছে। নানা জনের মতানুসারে ধারণা করা হয় তিনি ১৩৫০-৭৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি দ্বারভাঙা জেলার সীতামারী মহকুমার বিম্ফি নামক গ্রামের একটি বিদগ্ধ ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর কৌলিক উপাধি ঠক্কুর বা ঠাকুর। বংশপরম্পরায় তাঁদের পরিবার মিথিলার উচ্চ রাজকর্মচারী ছিলেন। ধারণা করা হয়, তিনি ১৪৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।

রাজা শিবসিংহের রাজত্ব লাভের আগে থেকেই, তাঁর সাথে বিদ্যাপতির বিশেষ সখ্য গড়ে উঠে। এই সূত্রে শিবসিংহের পত্নী মহাদেবীর সাথে তাঁর বিশেষ অন্তরঙ্গ সমপর্ক গড়ে উঠে। এই অন্তরঙ্গতা নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প প্রচলিত ছিল। এই সময় তিনি 'পুরুষ পরীক্ষা' নামক সংস্কৃত ভাষায় গল্পসংকলন শেষ করেন।

শিবসিংহ মুসলিম সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হলে, রাণী মহাদেবী নেপালের রাজবনৌলীতে আশ্রয় নেন। এই সময় বিদ্যাপতিও তাঁর সাথে ছিলেন। এখানে  তিনি 'লিখনাবলী' নামক পত্রাবলী রচনা করেন। মহাদেবীর মৃত্যুর পর তিনি, রাজ পদ্মসিংহের দরবারে যোগদান করেন। এই রাজার মৃত্যুর পর বিদ্যাপতি রানি বিশ্বাসা দেবীর অনুরোধে 'গঙ্গাবাক্যাবলী' রচনা করেন। এছাড়া এই সময় তিনি শিবপূজা সংক্রান্ত 'শৈবসর্বস্বসার' গ্রন্থ রচনা করেন।

১৩৮৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি রাজা ভোগেশ্বরের নামে পদ রচনা করেন।
১৪০২-১৪০৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে 'কীর্তিলতা' রচনা করেন।  গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন রাজা কীর্তিনারায়ণ আদেশে। গ্রন্থটি অবহট্ট ভাষায় রচিত হয়েছিল।

১৪১০-১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে কীর্তিপতাকা, পুরুষপরীক্ষা রচনা করেন।  গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন রাজা রূপনারায়ণের আদেশে। উল্লেখ্য কীর্তিপতাকা রচিত হয়েছিল অবহট্ট ভাষায়
৪১০-১৪১৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে রচনা করেন 'গোরক্ষ বিজয়' নাটক। নাটকটি রচনা শুরু করেছিলেন রূপনারায়ণের আদেশ ও শেষ করেছিলেন শিবসিংহের শাসনামলে।  এর সংলাপ-অংশ রচিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায় আর, গানগুলো রচনা করেছিলেন মৈথিলি ভাষায়।

১৪১৬-১৪১৭  খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে রচনা করেন ভূরিপরিক্রমা। গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন গরুড়নারায়ণ দেবসিংহের আদেশে।

১৪১৮-১৪২৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে রচনা করেন শৈবসর্বস্ব ও গঙ্গাবাক্যাবলী। গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন পদ্মসিংহ এবং তাঁর পত্নী বিশ্বাসদেবীর আদেশে।

১৪২৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রচনা করেন লিখনাবলী। গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন দ্রোণবারের রাজা পুরাদিত্যের আদেশে।

১৪৩০-১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তিনি রচনা করেন দানবাক্যাবলী বিভাগসার (দর্পনারায়ণ নরসিংহের আদেশে), (নরসিংহপত্নী ধীরমতির আদেশে) ও দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী (কংসনারায়ণ ধীরসিংহ, ভৈরবসিংহের আদেশে)। 

এর পরে তিনি রচনা করেছিলেন ব্যাড়ীভক্তিতরঙ্গিণী রচনা করেছিলেন দর্পনারায়ণ নরসিহের আদেশে। এটি হলো স্মৃতিগ্রন্থ। এছাড়া তাঁর অন্যান্য রচনাবলির মধ্যে রয়েছে কীর্তিলতা ভূপরিক্রমা, কীর্তিপতাকা।

বাংলা বহুপদ বিদ্যাপতির নামে প্রচলিত রয়েছে। এই সকল কবিতার ভণিতায় বিদ্যাপতির নাম পাওয়া যায়। সেই কারণে বিদ্যাপতিকে বাঙালি কবি হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। বহুপরে তাঁর এবং গোবিন্দদাসের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ রচনা করেছিলেন ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলি।

বাংলা সাহিত্যের কালানুক্রমিক সূচির বিচারে, বিদ্যাপতির রচনা এবং বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনকে চর্যাপদের পরবর্তীয় অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।


সূত্র: