বনফুল
(১৮৯৯-১৯৭৯)

বাঙালি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক ও কবি। তাঁর প্রকৃত নাম বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়। ছদ্মনাম বনফুল। সাহিত্যাঙ্গনে তিনি এই ছদ্মনামেই অধিক পরিচিত।

১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই বিহারের পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বনফুলের পূর্বপুরুষদের আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার শিয়ালখালায়। পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পূর্ণিয়া জেলার মণিহারী ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড হাসপাতালের ডাক্তার। মায়ের নাম মৃণালিনী দেবী। কর্মসূত্রে বনফুলের পিতা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় থাকার সময় তাঁর জন্ম হয়।

তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রথমে মণিহারী স্কুলে। পরে সাহেবগঞ্জ উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রবেশিকা (এন্ট্রান্স) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আই,এস,সি, পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন হাজারীবাগ সেন্ট কলম্বাস কলেজ থেকে। একই বছরে তিনি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। ইতিমধ্যে বিহারের পাটনায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিহার থেকে আসা ছাত্র হিসেবে তিনি এ নব প্রতিষ্ঠিত কলেজে স্থানান্তরিত হন এবং সেখান থেকে এমবিবিএস (১৯২৮) পাস করেন।

তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল কলকাতার একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে। পরে মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের মিউনিসিপ্যালিটি হাসপাতালে মেডিক্যাল অফিসার পদে কিছুকাল দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ভাগলপুরের খলিফাবাগে নিজ উদ্যোগে
The Secro-Bactro Clinic নামে একটি ল্যাবরেটরি  প্রতিষ্ঠা করেন এবং এখানে তিনি খ্যাতিমান ডাক্তার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

বনফুলের সাহিত্য জীবন শুরু হয়েছিল, ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে সাহেবগঞ্জ স্কুল থেকে প্রকাশিত  'মালঞ্চ' পত্রিকায় একটি কবিতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এই পত্রিকাটি ছিল হাতে লেখা। এই পত্রিকাতেই তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল বনফুল ছদ্মনামে।

তিনি সহস্রাধিক কবিতা, ৫৮৬টি ছোট গল্প, ৬০টি উপন্যাস, ৫টি নাটক, জীবনী ছাড়াও অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

সাহিত্য-সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শরৎস্মৃতি পুরস্কার (১৯৫১), রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৬২), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক (১৯৬৭) লাভ করেন। ১৯৭৩ খরিষ্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারত সরকারের কাছ থেকে পদ্মভূষণ উপাধি পান।

১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 

বনফুলের সাহিত্যকর্ম
 

কাব্যগ্রন্থ

বনফুলের কবিতা (১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ)
অঙ্গারপণী (১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ)
চতুর্দশী (১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ)
আহ্বনীয় (১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দ)
করকমলেষু (১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ)
বনফুলের ব্যঙ্গ কবিতা (১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ)
নতুন বাঁকে (১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ)

উপন্যাস

তৃণখণ্ড (১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ)
জঙ্গম (তিন খন্ড, ১৯৪৩-১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দ)
অগ্নি (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ)
স্থাবর (১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দ)
অগ্নীশ্বর (১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ)
ডানা (তিনখণ্ড, যথাক্রমে ১৯৪৮, ১৯৫০ ও ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ)
হাটেবাজারে (১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ)
ত্রিবর্ণ (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ)
ভুবন সোম (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ)
প্রচ্ছন্ন মহিমা (১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ)
উদয় অস্ত (দুই খণ্ড ১৯৫৯ ও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ)
বৈতরণীর তীরে
নিরঞ্জনা
মহারাণী
মানসপুর
এরাও আছে
নবীন দত্ত
হরিশ্চন্দ্র
কিছুক্ষণ
সে ও আমি
সপ্তর্ষি
গন্ধরাজ
পীতাম্বরের পুনর্জন্ম
নঞ তৎপুরুষ
কৃষ্ণপক্ষ
সন্ধিপূজা
কন্যাসু
অধিকলাল
গোপালদেবের স্বপ্ন
স্বপ্নসম্ভব
কষ্টিপাথর
দুই পথিক
রাত্রি
পিতামহ
পক্ষীমিথুন
তীর্থের কাক
রৌরব
জলতরঙ্গ
রূপকথা এবং তারপর
প্রথম গরল
রঙ্গতুরঙ্গ
আশাবারি
সাত সমুদ্র তেরো নদী
আকাশবাসী
তুমি
অসংলগ্ন
সীমারেখা
অলংকারপুরী
দ্বৈরথ
মৃগয়া
নির্মোক
মানদন্ড
নবদিগন্ত
কষ্টিপাথর
ভীমপলশ্রী
পঞ্চপর্ব
লক্ষ্মীর আগমন

ছোট গল্প সঙ্কলন

বনফুলের গল্প (১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দ)
বিন্দু বিসর্গ (১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দ)
অদৃশ্যলোকে (১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দ)
তন্বী (১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ)
অনুগামিনী (১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ)
দূরবীণ (১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দ)
মণিহারী (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ)
বহুবর্ণ (১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)
বনফুলের নতুন গল্প (১৯৭৬)
 

নাটক

শ্রীমধুসূদন
বিদ্যাসাগর