একজন
প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাঁতারু। তিনিই প্রথম দক্ষিণ এশীয়
ব্যক্তি যিনি সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন।
১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার কুচিয়ামোড়া
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে, ইনি
ঢাকার কে এল জুবিলি হাই স্কুল থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিক পাস করেন।
এরপর
ইনি কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ
পাস করেন।
১৯৪৮-৪৯ খ্রিষ্টাব্দে আন্তকলেজ প্রতিযোগিতায় প্রথম বড় ধরনের জয়ের আস্বাদ পান। এরপর ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গে ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর ভারত থেকে নিজের দেশের মাটিতে ফিরে আসেন।
১৯৫৩
খ্রিষ্টাব্দে তাঁর উদ্যোগে বাৎসরিক সাঁতার প্রতিযোগিতার কার্যক্রম শুরু হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১০০, ২০০, ৪০০, ও ১৫০০ মিটার
ফ্রিস্টাইল সাঁতারে তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি পর পর ৪ বছর চ্যাম্পিয়ন হন।
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান অলিম্পিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় সর্বমোট
চারটি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে
মেলবার্নের অলিম্পিকে পাকিস্তান দল থেকে তাঁকে বাদ দিয়, পাকিস্তানি সাঁতারুদের
নেওয়া হয়েছিল। চরম হাতশা কাটিয়ে এরপর ইনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দীর্ঘপথ
সাঁতারের
অনুশীলন করা শুরু করেন।
[সূত্র : আমার
কথা। ব্রজেন দাস। ক্রীড়াজগত।
http://brojendas.com/amarkatha.pdf]
যে স্থান দিয়ে ইংলিশ প্রণালী পাড়ি দিয়েছিলেন। |
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত সাঁতারে যান। এরপর ইংলিশ প্রণালী অতিক্রমের জন্য ইনি আমন্ত্রিত হন। এই উদ্দেশ্য ইনি ইংল্যান্ডে পৌঁছান জুন মাসের শেষের দিকে। ইংলিশ প্রণালী অতিক্রমের প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই আরও একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। ইনি এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। এটি ছিল ইতালির কাপ্রি দ্বীপ থেকে নাপোলি পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দূর পাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় ইনি তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।
১৯৫৮
খ্রিষ্টাব্দে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমের সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল আগষ্ট
মাসে। এই প্রতিযোগিতায়
মোট ২৩টি দেশের ৩৯ জন সাঁতারু অংশ নিয়েছিল। সেখানে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব
করেছিলেন ব্রজেন দাস। ইনি ছিলেন ১৯ সংখ্যক প্রতিযোগী। ১৮ই আগষ্ট
মাসে প্রায় মধ্যরাতে ফ্রন্সের
তীর থেকে ইংলিস চ্যানেল পাড়ি দেবার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
এই সময় ইংলিশ প্রণালী ছিল তরঙ্গ-বিক্ষুব্ধ এবং পানির উপরিভাগ ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন।
বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ থেকে চাঁদপুর সাঁতরে যাওয়ার পরিবেশ থেকে, এটি ছিল সম্পূর্ণ
বিপরীত পরিবেশ। তবে জুলাই মাসের সাঁতারে তিনি সাগরে সাঁতার কাটায় অনেকটাই অভ্যস্থ
হয়ে গিয়েছিলেন। মধ্যরাতে সাঁতার শুরু করে পরদিন বিকেলবেলায় প্রথম সাঁতারু হিসেবে
ইংল্যান্ডের তীরে এসে পৌছান তিনি।
ইনি সর্বমোট
ছয় বার ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন। ১৯৫৮
খ্রিষ্টাব্দের
আগষ্টের পরে সেপ্টেম্বর
মাসে ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্সে সাঁতার কেটে পার হন। ১৯৫৯, ১৯৬০,
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের তিনি এই সাঁতার সম্পন্ন করেছিলেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ১০ ঘন্টা ৩৫ মিনিটে
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেয়ে তিনি বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এঁর ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসার জন্য তিনি কলকাতা যান। এই
রোগে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুন এই কৃতী সাঁতারু মৃত্যুবরণ করেন।
আন্তর্জাতিক দীর্ঘপথ সাঁতারে অংশগ্রহণ এবং কৃতিত্বের তালিকা
ইতালি |
কাপ্রি দ্বীপ থেকে নাপোলি পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার দূর পাল্লার সাঁতার। তৃতীয় স্থান |
ইংল্যান্ড |
২৩টি দেশের ৩৯ জন সাঁতারুর মধ্যে প্রথম। ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স। ইংলিশ প্রণালী। |
ইতালি |
কাপ্রি দ্বীপ থেকে নাপোলি পর্যন্ত (ভূমধ্যসাগরে) |
ইংল্যান্ড |
ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড। ইংলিশ প্রণালী। |
ইংল্যান্ড |
ইংল্যান্ড থেকে ফ্রান্স। ইংলিশ প্রণালী। |
ইংল্যান্ড |
ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড। ইংলিশ প্রণালী। |
ইংল্যান্ড |
ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড। ইংলিশ প্রণালী। |
ইংল্যান্ড |
ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ড। ইংলিশ প্রণালী। বিশ্বরেকর্ড স্থাপন। |
পুরস্কার : সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পাওয়া ছাড়া যে সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পান, তা হলো-
১৯৫৯: প্রাইড অফ পারফরমেন্স,
পাকিস্তান সরকার
১৯৭৬: জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার, বাংলাদেশ
১৯৮৬ : "KING
OF CHANNEL।
Channel Swimming Association of the United Kingdom
১৯৯৯: স্বাধীনতা দিবস
পুরস্কার, বাংলাদেশ (মরণোত্তর)
তথ্যসূত্র :
http://www.brojendas.com/
শিশু বিশ্বকোষ (চতুর্থ খণ্ড)।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী। আশ্বিন ১৪০৪। সেপ্টেম্বর ১৯৯৭।