বুদ্ধঘোষ
থেরবাদী ভারতীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু।
বুদ্ধঘোষের বিশ্বাসযোগ্য জীবনীগ্রন্থ পাওয়া যায় না। যে দুটি সূত্রে
থেকে তাঁর জীবন সম্পর্কে জানা যায়, তা হলো শ্রীলঙ্কার রাজাবলি
মহাবংশ গ্রন্থে নথিভুক্ত বুদ্ধঘোষের বিস্তারিত জীবনী এবং
বুদ্ধঘোষুপ্পত্তি নামক রচিত অপর একটি জীবনীগ্রন্থ।
পরবর্তী সময়ে এই দুটি গ্রন্থ অবলম্বনে অন্যান্য জীবনী
রচিত হয়েছে।
খ্রিষ্টীয়
৫ম শতাব্দীতে তৎকালীন মগধ রাজ্যের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে
তাঁর জন্মস্থান ছিল বুদ্ধগয়ার কাছে। জন্মগত সূত্রে তিনি সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বী
ছিলেন। যথাযথ বেদের বাণী বুঝবার জন্য তিনি ভারতের নানা স্থানে বিভিন্ন পণ্ডিতদের কাছে
যান। এই সূত্রে তিনি বহু-ধর্মীয় পণ্ডিতদের সাথে তর্কযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সকল স্থানেই
তিনি তর্কে জয়লাভ করেন। অবশেষে রেবত নামক এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর কাছে পরাজিত হন। এরপর
তিনি 'অভিধম্ম' নামক গ্রন্থ পাঠ করে, বৌদ্ধ দর্শনের সাথে বিশেষভাবে পরিচিত হন এবং তিনি
বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে তিনি দীক্ষা নিয়ে ভিক্ষুব্রত গ্রহণ করেন।
মহাবংশ
গ্রন্থ
থেকে জানা যায়, তিনি ত্রিপিটকের যথাযথ ব্যাখ্যার সন্ধানে
নানা স্থানে বৌদ্ধ পণ্ডিতদের সাথে দেখা করেন। এই সূত্রে তিনি এমন একটি গ্রন্থের সন্ধান পান, যেটা তৎকালীন ভারতে ছিল
না। এই গ্রন্থটি শ্রীলঙ্কায় পাওয়া যাবে জেনে তিনি শ্রীলঙ্কায় যান। শ্রীলঙ্কার অনুরাধাপুর মহাবিহারে তাঁর
কাঙ্ক্ষিত গ্রন্থটি পান। এই সময় তিনি সিংহলী ভাষায় রচিত মহাবিহারে সংরক্ষিত অন্যান্য
গ্রন্থও পাঠ করেন। এরপর তিনি সিংহলী ভাষায় রচিত কাঙ্ক্ষিত গ্রন্থটি অনুসরণে একটি পালি ভাষায়
গ্রন্থ রচনার জন্য মহাবিহারের অধিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। বিহারের প্রবীণ ভিক্ষুরা প্রথমে বুদ্ধঘোষের জ্ঞান পরীক্ষা করার জন্য, তাঁকে
সুত্ত থেকে দুটি সূত্রের অর্থসহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে বলেন।
এই ব্যাখ্যার সূত্রে তিনি বিশুদ্ধমাগ্গ নামক গ্রন্থ রচনা করেন। কথিত আছে,
গ্রন্থটির প্রথমাংশ রচনা করার পর, দেবতার এই
গ্রন্থ লুকিয়ে ফেলেন। পরে বুদ্ধঘোষ আবার গ্রন্থটি রচনা করেন। দ্বিতীয়বারেও এই
গ্রন্থটি দেবতার লুকিয়ে ফেলেন। তৃতীয় বারে তিনি চূড়ান্তভাবে বই লেখেন। পরে এই
পূর্বের দুটি গ্রন্থ দেবতারা ফিরিয়ে দেন। এই তিনটি গ্রন্থ পাঠ করার পর প্রবীণ ভিক্ষুরা তাঁকে সম্পূর্ণ টীকাসংগ্রহ অধ্যায়নের অনুমতি দেন। এরপর তিনি ত্রিপিটকের প্রধান
প্রধান অংশ ব্যাখ্যা-সহ অনুবাদ করেন। এই ব্যাখ্যা অনুসারে পরব্রতী সময়ে থেরবাদী বৌদ্ধ দর্শনের
উদ্ভব হয়। মহাবংশ
গ্রন্থের এই বিবরণটি নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। অনেকে মনে করেন যে, বুদ্ধঘোষের
প্রথম দুটি রচনা দেবতারা নয়, ভিক্ষুরাই পরীক্ষার জন্য লুকিয়েছিল। সিংহল থেকে ফিরে তিনি বোধগয়ায় তীর্থযাত্রা করেন এবং বোধিবৃক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তাঁর মৃত্যুকাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
বুদ্ধঘোষের রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ
১. ত্রিপটকের সিংহলি টীকাগুলোর অনুবাদ
২.
বিশুদ্ধিমাগ্গ
৩.
অট্টকথা