লিনিয়াস, কার্ল
সুইডিশ
উদ্ভিদবিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও প্রাণীবিজ্ঞানী। প্রাণিকুলের
দ্বিপদী নামকরণের জনক।
আধুনিক শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যা ও
বাস্তুবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।
সুয়েডিস
ভাষায়:
Carl Linnaeus,
লাতিন ভাষায়:
Carolus Linnaeus
১৭০৭
খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মে
দক্ষিণ সুইডেনের স্মালান্দের
(Småland)
নামক
গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতার নাম―
Nils Ingemarsson Linnaeus)।
মায়ের নাম Christina
Brodersonia। ইনি ছিলেন
পিতামাতার প্রথম সন্তান।
তাঁর সময়ে পারবারিক রীতি
অনুসারে, সন্তানের
শেষ নাম ব্যবহার করা হতো
না। তাঁদের নাম রাখা হতো
স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশের প্যাট্রোনিমিক (পিতার নামের সাথে সংযুক্ত) নিয়মে।
তাঁর পিতা
প্রথম শেষ নামের প্রচলন করেন। কথিত আছে তাঁদের
বাড়ির সামনের এক বিশাল লিন্ডেন গাছের (linden
tree)
নামানুসারে লিনিয়াস নাম রাখা হয়েছিল।
লিনিয়াস শৈশবে তাঁর পিতার কাছে লাতিন ভাষা, ভূগোল এবং
ধর্মশাস্ত্র শেখেন। ১৭১৭
খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে শিক্ষার জন্য ভ্যাক্সজো-এর গ্রামার স্কুলে ভর্তি করা হয়। এই সময়
স্কুলের পড়া বাদ দিয়ে প্রায়ই গ্রামাঞ্চলের গাছ দেখে বেড়াতেন। ১৫ বৎসর বয়সে তিনি এই
স্কুলের শেষ বর্ষে উন্নীত হন। এই সময় উদ্ভিদ প্রেমিক প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে
উদ্ভিদ বিষয়ক নানাবিধ জ্ঞান আহরণ করেন। এই সময় অপর উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জন রথম্যানের
সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দেন এই শিক্ষক। ১৭ বৎসর বয়সে তিনি মোটামুটিভাবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানের
উপর লেখালেখি শুরু করেন।
১৭২৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
ভ্যাক্সি জিমনেশিয়াম-এ ভর্তি হন। এখানে তিনি গ্রিক, হিব্রু, অধ্যাত্মবাদ, গণিত নিয়ে
লেখাপড়া করেন। এই শিক্ষার পিছনে তাঁর পিতার ভূমিকা ছিল। তাঁর পিতা তাঁকে ধর্মযাজক
বানানোর ইচ্ছায় এই শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রথম্যান চেয়েছিলেন যে,
সে ডাক্তার হোক। এবং তিনি ডাক্তারি বিদ্যার পাশাপাশি দর্শন ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান
শেখানোর কথাও তাঁর পিতাকে জানান। তাঁর পিতা নিল্স সম্মতি দিলে, রথম্যানের অধীনে
তিনি উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। ক্রমে ক্রমে তিনি উদ্ভিদ বিজ্ঞান পণ্ডিত হয়ে
উঠেন। এই সময় তিনি Tournefort
শ্রেণিবিভাজন এবং সেবাস্টিয়ান ভ্যালিয়ান্ট-এর
যৌন-প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের প্রজনন বিষয়ক শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে পড়ালেখা করেন। পরে ১৭২৭
খ্রিষ্টাব্দে তিনি লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (Lund
University) গবেষণার
জন্য মনোনীত হন। এই সময় প্রকৃতি বিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং ইতিহাসবিদ
Kilian Stobæus।
তাঁর থাকা-খাওয়া, গবেষণার জন্য ভ্রমণ
করার আর্থিক সুবিধা প্রদান করেন। তিনি লিনিয়াসকে তাঁর গ্রন্থাগার
ব্যবহারের সুযোগ করে দেন।
১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে রথম্যানের পরামর্শে
উপ্প্সালা
বিশ্ববিদ্যালয়ে (Uppsala
University)
যোগদেন।
রথম্যানের অনুরোধে দুইজন অধ্যাপক তাঁকে ঔষধ এবং উদ্ভিদ
বিজ্ঞানের গবেষণায় সাহায্য করেন। কিন্তু তিনি দীর্ঘ দিন এই
অধ্যাপকদের কাছে শিক্ষালাভ করতে পারেন নি। এর ভিতরে
Olof Celsius
তাঁর ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ব্যবহারের অনুমতি
দেন। উল্লেখ্য এই সময় এই অধ্যাপকের এই গ্রন্থাগারটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ছিল। ১৭২৯
খ্রিষ্টাব্দে তিনি উদ্ভিদের যৌন-প্রজনন বিষয়ক প্রবন্ধ লেখেন। এই প্রবন্ধটির নাম ছিল
Praeludia Sponsaliorum
Plantarum।
এই সূত্রে তিনি
১৭৩০ খ্রিষ্টাব্দে
তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই
প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান।
প্রভাষক হিসাবে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়তা
লাভ করেন।
১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি
তিন মাসের অভিযানে যান ল্যাপল্যান্ডে। এ সময়
তিনি যা কিছু জেনেছেন সবকিছুর রেকর্ড রেখেছেন। পরে তা বই আকারে প্রকাশও করেছেন।
বইটির নাম 'ফ্লোরা ল্যাপোনিকা' বা 'দ্য প্ল্যান্টস অফ ল্যাপল্যান্ড'।
১৭৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর লেখা 'সিস্টেমা নেচারি' বইয়ের প্রথম সংস্করণ বের হয়। এই
বৎসরের প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'স্পিসিজ প্লান্টেরাম' নামক গ্রন্থ।
১৭৩৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় 'জেনেরা প্লান্টেরাম' গ্রন্থ।
এরপর
তিনি
সুইডেনে ফিরে এসে উপ্প্সালা
বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
১৭৪০-এর দশকে উদ্ভিদ ও প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস
করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে
সুইডেনের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। ১৭৫০ ও ৬০-এর দশকে তিনি এই শ্রেণিবিন্যাসের
কার্যক্রম চালিয়ে যান। এই সময়
এই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত তাঁর বহু বই প্রকাশিত
হয়। এই সূত্রে
অনেক প্রাণী বা উদ্ভিদের দ্বিপদী নামের শেষে
তাঁর নামের সংক্ষিপ্ত রূপ
হিসাবে "L"
অক্ষরটি পাওয়া যায়।
১৭৭৭ খ্রিষ্টব্দের ১০ জানুয়ারিতে তিনি
মৃত্যুবরণ করেন। কবরের নামফলকে শেষ ইচ্ছানুসারে লিনিয়াসের নামের পাশে হোমো
স্যাপিয়েন্স শব্দটি যুক্ত হয়েছে।
সূত্র :
১. বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান বিশ্বকোষ। প্রথম খণ্ড।
২.
http://en.wikipedia.org/wiki/Carl_Linnaeus