দীনবন্ধু
মিত্র
নাট্যকার।
এঁর জন্ম তারিখ নিয়ে মতবিরোধ
আছে।
বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায়ের মতে জন্ম সাল ১২৩৮ বঙ্গাব্দ
এবং দীনবন্ধু মিত্রের পুত্র ললিতচন্দ্র
মিত্রের মতে ১২৩৬ বঙ্গাব্দের
চৈত্র মাস। নদীয়া জেলার কাঁচরাপাড়ার নিকটবর্তী চৌবেড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এঁর পিতার
নাম কালাচাঁদ মিত্র।
তাঁর পিতার দেওয়া নাম ছিল
গন্ধর্ব নারায়ণ। পরে তিনি নিজে এই নাম পরিবর্তন করে দীনবন্ধু মিত্র রাখেন।
স্ত্রীর নাম অন্নদাসুন্দরী।
পাঠশালায়
সামান্য কিছু লেখাপড়ার করার পর,
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে এঁর পিতা তাঁকে স্থানীয় জমিদারের সেরেস্তায় চাকরিতে মাসিক
আট
টাকা বেতনে নিয়োগ করেন। এখানে কিছুদিন কাজ করার ইনি তাঁর পিতার অমতে উক্ত কাজ ছেড়ে
দিয়ে লেখাপড়া শেখার জন্য কলকাতায় চলে
আসেন।
কলকাতায় এসে ইনি তাঁর পিতৃব্য নীলমণি মিত্রের বাসায়
আশ্রয়
গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি গৃহভৃত্যের কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন।
আনুমানিক
১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লঙ্ সাহেবের প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। এরপর দুই
টাকা বেতনে কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের শেষ
পরীক্ষায় ইনি বৃত্তি লাভ করেন। এরপর ইনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দের
পরীক্ষায় ইনি পুনরায় বৃত্তি পান। ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দে ইনি সিনিয়র বৃত্তি লাভ করেন।
১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে ইনি শিক্ষকতার যোগ্যতা-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। ১৮৫৪
খ্রিষ্টাব্দে ইনি তিনি
আবার
সিনিয়র বৃত্তি লাভ করেন। সকল পরীক্ষায় ভালোভাবে পাস করার পরও ইনি শেষ পরীক্ষা না
দিয়ে ১৫০ টাকা বেতনে পাটনার পোস্টমাস্টারের পদ গ্রহণ করেন। ছয়মাস পরে ইনি
ইন্সপেক্টিং পোস্টামাস্টার
পদে
উন্নীত হন এবং পাটনা থেকে উড়িষ্যায় বদলি হন। এরপর ইনি ক্রমান্বয়ে নদীয়া,
ঢাকা,
নদীয়া,
ঢাকা,
উড়িষ্যা
ও
নদীয়াতে
বদলি হন। মূলতঃ বিভিন্ন স্থানের পোস্ট-অফিসের জটিলতা নিরসনের জন্য ইনি বিভিন্ন সময়
বদলি হয়েছেন।
১৮৬৯ বা ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের সুপরনিউমররি ইনস্পেকটিং পোস্টমাস্টার হয়ে
কলকাতা
আসেন।
১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে লুসাই যুদ্ধের সময় ইনি ইংরেজদের বিপর্যস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা
পুনর্গঠিত করেন। ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সার্বিক কাজের সাফল্য বিবেচনা করে ইংরেজ
সরকার রায়বাহাদুর উপাধি প্রদান করে। এরপর ডাক বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল হগের
অপ্রীতিভাজন হওয়ায় সুপরনিউমররি ইনস্পেকটিং পদ থেকে তাঁকে অপসারিত করা হয়। ১৮৭২
খ্রিষ্টাব্দের
দিকে তাঁকে ইস্ট-ইন্ডিয়ান রেলওয়েতে ইন্সপেক্টর পদে বদলি কর হয়। এর কিছুদিন পর তাঁকে
ইন্সপেক্টিং পোস্টামাস্টার পদে অবনমিত করা হয়। এই সময় ইনি বহুমুত্ররোগে
আক্রান্ত
হন। কর্তৃপক্ষের
নিষ্ঠুর
আচরণের
কারণে ইনি
আরও
বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর
তারিখে ইনি মৃত্যুবরণ
করেন।
তাঁর রচিত রচনাসমূহের তালিকা
কাব্য
১। সুরধুনী প্রথম ভাগ (১৮৭১)। দ্বিতীয় ভাগ (১৮৭৬)
২। দ্বাদশ কবিতা (১৮৭২)
৩। নানা কবিতা
নাটক ও প্রহসন
১। নীলদর্পণ (১৮৬০)
২। নবীন তপস্বিনী (১৮৬৩)
৩। বিয়ে পাগলা বুড়ো (১৮৬৬)
৪। সধবার একাদশী (১৮৬৬)
৫। লীলাবতী (১৮৬৭)
৬। জামাই বারিক (১৮৭২)
৭। কমলে কামিনী নাটক (১৮৭৩)
৮। কুড়ে গরুর ভিন্ন গোঠ
গল্প
ও উপন্যাস
১। যমালয়ে জীবন্ত মানুষ
২। পোড়া মহেশ্বর