ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী
(১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৭- ৬ মার্চ, ২০১৮)
বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ভাস্কর ও মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে ফেব্রুয়ারি, (৬ ফাল্গুন, রবিবার ) ৯.১৫ মিনিটে খুলনায় নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর বাবার নাম সৈয়দ মাহবুবুল হক এবং মায়ের নাম রওশন হাসিনা হাসি। বাবা-মায়ের ১১ সন্তানের মধ্যে ছিলেন সবার বড়। তাঁর নানা নানা আব্দুল হাকিম আদর করে তাঁর নাম রেখেছিলেন দেবযানী প্রিয়ভাষিণী।

তাঁর নানা আব্দুল হাকিম ছিলেনঅ্যাডভোকেট। উল্লেখ্য, ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যুক্তফ্রন্টের শাসনকালে স্পিকার হয়েছিলেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সুপ্রিম কোর্টে কাজ করার জন্য ঢাকা চলে আসেন। এই সময় প্রিয়ভাষিণীও নানার পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় আসেন এবং টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি হন। এরপর তাঁর নানা মিন্টু রোডের বাসায় চলে এলে, প্রিয়ভাষিণী সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। তবে শেষ পর্যন্ত খুলনা চলে যান এবং খুলনার পাইওনিয়ার গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং খুলনা গার্লস স্কুল থেকে এইচএসসি ও ডিগ্রি পাস করেন।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিয়ে করেন। স্বামীর নাম ছিল কিউ এস. ইসলাম (সিরাজ)। এটা ছিল তাঁর প্রেমের বিয়ে এবং কোর্ট ম্যারেজ। তবে এই বিয়ে তাঁর সুখের হয়ে উঠে নি। কারণ, সিরাজ তাঁকে নানা ভাবে প্রতারণা করেছিলেন। তারপরেও তিনি নিজে স্কুলের শিক্ষকতা করে, স্বামীকে খুলনার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করে দেন। এর কিছুদিন পর তিনি খুলনা লায়ন্স ইংরেজি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। কিন্তু সন্তান সম্ভবার কারণে এখান থেকে চাকরি চলে যায়। এই সময় তাঁর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়। এরপর তিনি খুলনার পিপলস জুট মিলে কাজ করেন। এরপর তিনি কিছুদিন কাজ করেন খুলনা টেলিফোন এক্সেঞ্জে।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে এই বছরের স্বামীর সাথে তাঁর বিচ্ছেদ হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাঁর সন্তানদের একলাই সামলেছেন। এই বছরের অক্টোবর মাসের শেষে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সদস্য ও তাদের দোসররা ধর্ষণ-সহ তাঁর উপর নানাভাবে দৈহিক অত্যাচার করেছে।

১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ আহমেদের সাথে বিবাহ হয়।  তাঁর ছয় সন্তান। এঁরা হলেন- পুত্র: কারু তিতাস, কাজী মহম্মদ নাসের, কাজী মহম্মদ শাকের (তূর্য্য), কন্যা: রাজেশ্বরী প্রিয়রঞ্জিনী, রত্নেশ্বরী প্রিয়দর্শিনী ও ফুলেশ্বরী প্রিয়নন্দিনী।

১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। মাঝে কিছুদিন স্কুলে শিক্ষকতাও করেছেন। তিনি ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।

২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে হিরো বাই দ্যা রিডার ডাইজেস্ট ম্যাগাজিন (ডিসেম্বর ) পুরস্কার পান।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পান।  
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমি'র 'সম্মানসূচক ফেলোশিপ' পুরস্কার পান।  
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে একুশের বইমেলায় ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘নিন্দিত নন্দন’ প্রকাশিত হয়।
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই আগষ্ট তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার।

তিনি দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৬ মার্চ, দুপুর একটায় ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় মৃত্যুবরণ করেন।