১৯০৭ থেকে ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ
পর্যন্ত তিনি কলকাতায় অবস্থান করেন। এই সময় তিনি গণপত রায়ের ঠুমরী, দাদরা ইত্যাদি
গান শুনে মুগ্ধ হন এবং এই জাতীয় আধাশাস্ত্রীয় সঙ্গীতে আগ্রহী হয়ে উঠেন।
কলকাতায় তিনি সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে এসেছিলেন আগ্রাওয়ালি মালকাজানের সাথে।
হ্যারিসন রোডে সঙ্গীতগুণী শ্যামলাল ক্ষেত্রীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে
আগ্রাওয়ালি মালকাজান ফৈয়াজ খাঁকে উপস্থাপন করেন। প্রথম আসরেই তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ
করেন। পরে কলকাতার তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কথিত আছে, মালকাজান
তাঁর চেয়ে বয়সে বড় হলেও এঁদের ভিতর প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
প্রথম দিকে কলকাতায় এলে ফৈয়াজ খাঁ মালকাজানের ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটের বাড়িতে উঠতেন। শোনা যায় এই আগ্রেওয়ালি মালকাজানকে ছাড়া বেশির ভাগ বাঈজিকে অপছন্দ করতেন ফৈয়াজ খাঁ।
১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজ শিবাজি রাও গায়কোয়াড় তাঁকে সভাগায়ক নিযুক্ত করেন।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে বরোদা রাজ্যের সঙ্গীত বিদ্যালয়ে প্রধান অধ্যাপক হিসেবে যোগদান
করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সঙ্গীত বিদ্যালয়ে শিক্ষাদান করেছেন।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মহীশূরের মহারাজা তাঁকে আফতাব-এ-মৌশিকি উপাধিতে ভূষিত করেন। কথিত
আছে রবীন্দ্রনাথ ভালবাসতেন ফৈয়াজের গান। এই কারণে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তিনি
আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার 'ব্রড-কাস্টিং কর্পোরেশন' নামে বেতার সম্প্রচারের
জন্য 'অল-ইন্ডিয়া রেডিও' স্থাপন করলে, সরকারের তরফ থেকে বোম্বাই বেতারকেন্দ্রে
সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়া আহমেদাবাদ বেতারকেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি
সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে
বোম্বাইয়ের নাগরিকবৃন্দ তাঁকে 'সঙ্গীত-সম্রাট' উপাধি প্রদান করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য শিষ্য ছিলেন আতা হুসেন খান, খাদিম হুসেন খান, লতাফৎ হুসেন খান, শরাফত হুসেন খান, এস রতনজংকার দিলীপচন্দ্র বেদী
প্রমুখ।
ফৈয়াজ খাঁ-র বেশির ভাগ রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি থেকে। এ ছাড়া গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে তাঁর কিছু রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। শোনা যায়, প্রথম দিকে গান রেকর্ড করার ব্যাপারে তিনি আগ্রহী ছিলেন না। যদিও পরবর্তী কালে তিনি গান রেকর্ড করায় সম্মত হয়েছিলেন। তাঁর রেকর্ড-কৃত রাগগুলির মধ্যে অন্যতম
ছিল দরবারি, ছায়ানট, পূরবী, জয়জয়ন্তী, তোড়ী, রামকলি উল্লেখযোগ্য।
জীবনের শেষ দিকে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন।
১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর, বরোদায় তাঁর মৃত্যু হয়।