গোবিন্দচন্দ্র দেব

শহিদ বুদ্ধিজীবী, দর্শনিক। প্রকৃত নাম  গোবিন্দচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ। সাধারণভাবে জিসি দেব নামে পরিচিত ছিলেন।

১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি তদানিন্তন ব্রিটিশ ভারতের আসাম প্রদেশের পঞ্চখান্দা পরগনার (বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা)  লাউতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বসূরীরা ছিলেন গুজরাট থেকে আগত উচ্চগোত্রীয় ব্রাহ্মণ। এঁরা কোনো এক সময় সিলেট এসে বসবাস শুরু করেন। সম্ভবত ব্রাহ্মণত্য রক্ষা করতে না পেরে সিলেটে এসে তাঁরা 'দেব পুরকায়স্থ' উপাধি গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে অবশ্য 'পুরকায়স্থ' উপাধি বর্জন করেন এই পরিবার।  পিতা ঈশ্বরচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ ছিলেন একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী। মায়ের নাম ছিল শরৎসুন্দরী দেবী। ঈশ্বরচন্দ্র দেবের ছিল দুটি পরিবার। গোবিন্দচন্দ্র ছিলেন  প্রথম পক্ষের চতুর্থ সন্তান। তাঁর পিতা প্রথম জীবনে ব্যবসায়ে প্রচুর উন্নতি করেছিলেন। পরে ব্যবসায়ে বিপর্যয় দেখা দিলে তাঁদের পরিবারে চরম সংকট নেমে আসে। এই সংকট থেকে উত্তীর্ণ হতে না পেরে, ঈশ্বরচন্দ্র দেব ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

গোবিন্দ দেব শৈশবে টোলের পণ্ডিতদের কাছে হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃত ভাষার পাঠ গ্রহণ করেছিলেন। পরে নিজ গ্রাম লাউতায় অবস্থিত তৎকালীন 'লাউতা বালক বিদ্যালয়'-এ লেখাপড়া শুরু করেন। এই সময় তিনি অত্যন্ত দুষ্টু ছিলেন। প্রায়ই বিদ্যালয়ে যাবার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্রামের জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন। লাউতা বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করার পর, তাঁকে 'মধ্য ইংরেজি স্কুল'-এ ভর্তি করা হয়। এই স্কুলে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে ভর্তি করা হয় 'পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়'-এ। এই বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে এই স্কুল থেকে তিনি সংস্কৃত ও গণিতে লেটারসহ প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এই ফলাফলের জন্য তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেন।

এরপর তিনি কলকাতায় তাঁর বড় ভাই বীরেন্দ্রচন্দ্র দেব পুরকায়স্থের কাছে চলে যান এবং কলকাতার রিপন কলেজে (বর্তমানে স্যার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) ভর্তি হন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজ থেকে তিনি যুক্তিবিদ্যায় লেটারসহ প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এবারেও তিনি সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরে তিনি ভর্তি হন কলকাতার সংস্কৃত কলেজের বিএ সম্মান শ্রেণীতে। কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ও ভারতীয় দর্শন-বিশেষজ্ঞ ড. সুরেন্দ্রনাথ তরুণ গোবিন্দ দেবের মেধা, অধ্যবসায় এবং তীক্ষ্ণ ও গভীর চিন্তাশক্তির পরিচয় পেয়ে তাঁকে বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন। সংস্কৃত কলেজ থেকেই ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দর্শনশাস্ত্রে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিএ সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি দর্শনশাস্ত্রে এমএ শ্রেণীতে ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, ড. হীরালাল হালদার, কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য (কেসি ভট্টাচার্য), ড. মহেন্দ্রনাথ সরকার প্রমুখ দার্শনিকের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দর্শনশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এই ফলাফলের জন্য তিনি 'বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক' ও 'হেমচন্দ্র মুখার্জি' রৌপ্যপদক লাভ করেন। এই বৎসরেই
তিনি কলকাতার রিপন কলেজে দর্শন ও ন্যায়শাস্ত্রের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চতর গবেষণার জন্য বৃত্তি নিয়ে তিনি ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশে অবস্থিত অমলনারের বিশ্বখ্যাত দর্শন গবেষণা কেন্দ্র
Pratap Centre of Philosophy যান। তখন এই গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ছিলেন কেসি ভট্টাচার্য। তিনি এই দার্শিনকের অধীনে বেদান্ত দর্শন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং তিনি পুনরায় রিপন কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ৷

১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে, রিপন কলেজ বর্তমান বাংলাদেশের দিনাজপুরে স্থানান্তর হয় ৷সেই সূত্রে তিনি দিনাজপুরে চলে আসেন। এখানে অবস্থানকালেই তিনি তাঁর দীর্ঘ গবেষণার ফসল
Reason, Intuition and Reality (প্রজ্ঞা, স্বজ্ঞা ও বাস্তবসত্তা) শিরোনামের অভিসন্দর্ভটি শেষ করেন। এই গবেষণা অভিসন্দর্ভের জন্য ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে দিনাজপুর থেকে রিপন কলেজ আবার কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু গোবিন্দ দেব দিনাজপুরেই থেকে যান এবং পরিত্যাক্ত রিপন কলেজকে 'সুরেন্দ্রনাথ কলেজ' নামে চালু করেন। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কলেজটির অধ্যক্ষ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই সময় তিনি কলেজেটি চালু রাখারা জন্য সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তহবিল গড়ে তোলেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় তিনি ভারতে না গিয়ে এই কলেজের উন্নয়নে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানেই থেকে যান। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা মার্চ থেকে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন পর্যন্ত সম্মিলিত ঢাকা-জগন্নাথ হলের সর্বশেষ যৌথ ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 দর্শনে বিশেষ অবদান এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য, তদানীন্তন 'পূর্ব পাকিস্তান সারস্বত সমাজ' ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে 'দর্শন সাগর' উপাধিতে ভূষিত করে।

ইতিমধ্যে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ১লা আগষ্ট তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়্যায়ম্যানের দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন। 

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় 'দর্শন ভবন' নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। এই ভবনের দর্শন-বিষয়ক অনুষ্ঠানগুলোতে নিয়মিতভাবে যোগদান করতেন।

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত একটানা জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। কিছুদিন বিরতির পর তিনি ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ এপ্রিল থেকে ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ এপ্রিল  পর্যন্ত পুনরায় জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং অধ্যাপক ও মৃত্যু পর্যন্ত তিনি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি 'পাকিস্তান ফিলসফিক্যাল কংগ্রেস' ও 'ইন্ডিয়ান ফিলসফিক্যাল কংগ্রেস'-এর সভাপতি ও শাখা সভাপতি হিসেবে এবং যুক্তরাজ্যের 'দি ইউনিয়ন অব দ্য স্টাডি অব জেনারেল রিলিজিয়ন্স'-এর এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ফিলসফি অব সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন'-এর সদস্য নির্বাচিত হন। সে কারণে মাঝেমধ্যে দু-এক বছরের বিরতিসহ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন 'পাকিস্তান ফিলসফিক্যাল কংগ্রেস' পূর্ব পাকিস্তান শাখার সম্পাদক হিসেবে। '৬৬-৬৭ এবং '৭০-৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দুইবার ভিজিটিং ফুল ব্রাইট অধ্যাপক ও বক্তারূপে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়া প্রদেশের Wilkes College বক্তৃতা করেন। তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং মানবতাবাদী দর্শন প্রচারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৬শে মে স্থাপিত হয় 'দি গোবিন্দ দেব ফাউন্ডেশন ফর ওয়ার্ল্ড ব্রাদারহুড' প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতির আমন্ত্রণক্রমেই ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে উইল্কিস কলেজে ভিজিটিং প্রফেসর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপকের পূর্বপদে যোগদান করেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে মার্চ, ভোর রাতে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাঁর ঘরে প্রবেশ করে। এই সময় তাঁর পালিতা কন্যা রোকেয়া বেগম ও তাঁর স্বামী নিজেদের মুসলমান বলে বাঁচার চেষ্টা করেন। সৈন্যরা প্রথমে গোবিন্দদেব এবং পরে রোকেয়া বেগমের স্বামীকে হত্যা করে। এই সময় রোকেয়া বেগম সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে, তাঁকে হত্যা না করেই সৈন্যরা চলে যায়। ২৬শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত জগন্নাথ হলের পশ্চিম পাশে তাঁর এবং রোকেয়া বেগমের স্বামীর লাশ পড়ে থাকে। এরপর অন্যান্য লাশের সাথে গোবিন্দ দেবের লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়।

গোবিন্দদেব ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে আমৃত্যু পাকিস্তান দর্শন সমিতির নির্বাচিত সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করে গেছেন। তাঁর মৃত্যুর পূর্বে দর্শন গবেষণা, মানব কল্যাণ, সামাজিক প্রগতি, বিশ্বভ্রাতৃত্ব ও বিশ্বশান্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের অনুকূলে তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির ৫০% উইল করে দিয়ে যান। তাঁর উইলকৃত অর্থে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দর্শন বিভাগে প্রতিষ্ঠিত হয় 'দেব সেন্টার ফর ফিলসফিক্যাল স্টাডিজ'। এই কেন্দ্রের উদ্যোগে নিয়মিত ভাবে 'দর্শন ও প্রগতি' নামে একটি বাংলা এবং
Phylosophy and Progress নামে একটি ইংরেজি জার্নাল প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রের উদ্যোগে মাসিক সেমিনার এবং প্রতি বছর দেব স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। ইউনেস্কো ঘোষিত ২১শে নভেম্বর প্রথম দর্শন দিবস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ ও গোবিন্দ দেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্রের উদ্যোগে পালন করা হয়৷

গোবিন্দদেব চিরকুমার ছিলেন। তবে তিনি দু’টি ছেলে-মেয়ে কে দত্তক নিয়েছিলেন। এঁরা ছিলেন  জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও রোকেয়া সুলতানা। তিনি তাঁর পালিত পুত্র-কন্যাদের নিজের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির একটি অংশ উইল করে দিয়ে যান।

গ্রন্থাবলী
১.
Idealism and Progress' (ভাববাদ ও প্রগতি) [১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দ]
২.
Idealism: A New Defence and a New Application  [১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ]
৩.
Aspirations of the Common Man [১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ]
৪.
The Philosophy of Vivekananda and the Future of Man [১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ]
৫. তত্ত্ববিদ্যা-সার [১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ]
৬. আমার জীবন দর্শন [১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ]   
৭.
Buddha, the Humanist [১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ]   
৮.
Parables of the East

স্বীকৃতি
১. ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে মরণোত্তর 'একুশে পদক'।
২. ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা পুরস্কার।


সূত্র :
১. আমিনুল ইসলাম; গোবিন্দচন্দ্র দেব: জীবন ও দর্শন
২. গোবিন্দচন্দ্র দেব, মোঃ কুতুব উদ্দিন সজীব
৩. http://hinduismsite.ucoz.com/blog/2011-09-20-248