গোবিন্দ দাস
১৫৩৪/৩৭-১৬১৩
খ্রিষ্টাব্দ।
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্য বিখ্যাত পদকর্তা। আনুমানিক
১৫৩৪-৩৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি কাঁটোয়ার অন্তর্গত শ্রীখণ্ডে, তাঁর
মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন।
পিতার নাম চিরঞ্জীব সেন ও মাতা সুনন্দাদেবী। তাঁর বড় ভাইয়ের নাম ছিল রামচন্দ্র।
অল্প বয়সে তিনি শাক্ত ধর্মে দীক্ষিত হন। এর কিছুদিন পর তিনি গ্রহণী রোগে
(ক্ষুদ্রান্তের প্রথমাংশের আলসার জাতীয় রোগ) আক্রান্ত হন। রোগাক্রান্ত অবস্থায়,
তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে রোগমুক্তির প্রার্থনা করতে থাকেন। এরপর তিনি বৈষ্ণবগুরু শ্রীনিবাস আচার্যের
শরণাপন্ন হন। তাঁর বড় ভাই রামচন্দ্রের অনুরোধে শ্রীনিবাস আচার্য তাঁকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন।
এরপর ধীরে ধীরে গোবিন্দদাস সুস্থ হয়ে উঠেন।
কিছুদিন পরে শ্রীনিবাস আচার্যের অত্যন্ত প্রিয়জন গদাধর দাসের মৃত্যসংবাদ পেয়ে, বৈরাগী হয়ে বৃন্দাবনে চলে যান। পরে শ্রীনিবাসকে শ্রীখণ্ডে ফিরিয়ে আনার জন্য, রামচন্দ্রও বৃন্দাবনে যান। এই সময় রামচন্দ্রের আদেশে গোবিন্দদাস তেলিয়া-বুধরী গ্রামে বাস করতে থাকেন। এই গ্রামে বসবাসের সময় থেকে গোবিন্দদাস পদরচনা শুরু করেন। কিছুদিন পর শ্রীনিবাসকে সাথে নিয়ে রামচন্দ্র বৃন্দাবন থেকে ফিরে আসেন এবং গোবিন্দদাসের মুখে পদাবলী কীর্তন শুনে মুগ্ধ হন। পরে রামচন্দ্রের অনুরোধে গোবিন্দদাস গীতামৃত রচনা করেন।
এরপর তিনি গুরু শ্রীনিবাস এবং বড় ভাই রামচন্দ্রের অনুমতি নিয়ে বৃন্দাবনে যান। সে
সময়ে বৃন্দাবনে বৈষ্ণবপণ্ডিত গোপালভট্ট এবং জীবগোস্বামী বাস করতেন। তাঁর পদবলীতে
মুগ্ধ হয়ে, অন্যান্য বৈষ্ণব পণ্ডিতদের সাথে গোপালভট্ট এবং জীবগোস্বামী তাঁকে
'কবিরাজ' উপাধী দেন। বৃন্দাবন থেকে ফিরে এলে গ্রামবাসী তাঁকে নিয়ে একটি উৎসব
করেছিলেন। এরপর তিনি রাজা সন্তোষদত্তের অনুরোধে 'সঙ্গীতমাধব' নাটক রচনা করেন।
তিনি ব্রজবুলি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই পদ রচনা করেছেন। বিদ্যাপতির সাথে তাঁর আদর্শগত
এবং রচনাশৈলীর মিল পাওয়া যায়, এই কারণে তাঁকে অনেকে 'বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য' হিসেবে
বিবেচনা করে থাকেন। তিনি রাধাকৃষ্ণের লীলাভিত্তিক পদ রচনায় 'পূর্বরাগ',
'আপেক্ষানুরাগ','মাথুর' ইত্যাদি পর্যায়ে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তবে রাধার
অভিসার বিষয়ক পদ রচনায় তাঁর প্রতিভার চূড়ান্ত পরিচয় পাওয়া যায়।
ধারণা করা হয় ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র :
বিশ্বকোষ পঞ্চম খণ্ড।
নগেন্দ্রনাথ বসু কর্তৃক সঙ্কলিত। ১৩০১ বঙ্গাব্দ।