বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান, প্রধান বিচারপতি, প্রাবন্ধিক।
১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর, ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমার দয়ারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মৌলভী জহিরউদ্দিন বিশ্বাস আইনজীবী ছিলেন। মায়ের নাম গুল হাবিবা ।
প্রাথমিক পাঠ
শুরু হয় বাংলা, আরবি, উর্দু ও ইংরেজি এই চার ভাষা নিয়ে।
১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ম্যাট্রিকুলেশান পাশ করে, কলকাতার
প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে এই কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। এই বৎসরের শেষের দিকে
তিনি রাজশাহী কলেজে বিএ-তে ভর্তি হন।
১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বানে রাজশাহী
কলেজে হরতাল পালিত হয়। বন্ধুদের সঙ্গে হাবিবুর রহমানও পিকেটিংয়ে অংশ
নেন।
১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই কলেজ থেকে পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইতিহাস সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই বিভাগ থেকে পাশ করার পর তিনি
এমএ.তে ভর্তি হন।
১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। এই সময়
তিনি সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র। এই সময় তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য
হন। ফজলুল হক হল ইউনিয়নের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সলিমুল্লাহ হলের সহ-
সভাপতি নির্বাচিত হন। সে সময় জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নিখিল পাকিস্তান ছাত্রলীগ
ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের যোগসাজশে হল ইউনিয়নের বাজেট পাশ করাতে
ব্যর্থ হন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
২১শে ফেব্রুয়ারি সকালে তাঁকে আন্দোলনরত অবস্থায় গ্রেফতার করা হয়।
কারভোগের পরে, এই বৎসরের ১লা মে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন।
কিন্তু ভাষা-আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকায়, তাঁর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের
চ্যাঞ্চেলর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন তাঁকে বহিষ্কারের বাহানা খুঁজছিলেন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি পদত্যাগ করেন এবং এই পদত্যাগ পত্র সাথে সাথে
গৃহীত হয়। এই সময় তিনি সিরাজগঞ্জ কলেজে যোগ দেন। পরে সেখান থেকে আবার
ঢাকাতে চলে আসেন। এই সময় তিনি জগন্নাথ কলেজেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেন।
১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এলএলবি পাশ করেন তিনি।
১৯৫৬ সালে হাবিবুর রহমান ইতিহাস বৃত্তি নিয়ে উরস্টার কলেজ অক্সফোর্ডে
যান, 'আধুনিক-ইতিহাসে' বিষয়ে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক ইতিহাসে বি.এ.
সম্মান ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের লিঙ্কনস ইন থেকে ব্যারিস্টার-এট-ল ডিগ্রি
লাভ করে তিনি ইংলিশ বারে যোগ দিতে শুরু করেন।
১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ইতিহাস বিভাগে
অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইন বিভাগের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই
বৎসরে তিনি অধ্যাপক ইসলামা রহমান বিবাহ করেন।
১৯৬৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। এই বছরে তিনি রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে ঢাকাতে চলে আসেন এবং আইন
ব্যবসায়কে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং ঢাকা হাই কোর্ট বারে যোগ দেন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টে যোগদান করেন। এই বৎসরে
তাঠকর সহকারী এডভোকেট জেনারেল ছিলেন।
১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হাই কোর্ট বার এসোসিয়েশনের
ভাইস-প্রেসিডেন্ট-এর দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি বাংলাদেশ বার
কাউন্সিলেরও সদস্য ছিলেন।
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে তাঁকে হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি করা হয়।
তিনি বরিশাল হাইকোর্ট বেঞ্চের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিয়োগ লাভ করেন।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ৬ই ডিসেম্বর তিনি ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির দায়িত্ব পালন
করেন।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ৯ অক্টোবর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অষ্ট্রেলিয়ার পার্থে অনুষ্ঠিত এশিয়া
প্যাসিফিক দেশসমূহের প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে যোগদান করেন।
১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে নাইজেরিয়ার আবুজাতে চতুর্থ কমনওয়েলথ প্রধান
বিচারপতিদের সম্মেলনে যোগদান করেন।
১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১লা ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রধান বিচারপতি হন। ৩০শে
মার্চ তিনি এই পদ ছেড়ে দিয়ে পর্যন্ত তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।
২৩শে জুন পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পরে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি
পদে যোগদান করেন এবং এই পদে থেকেই অবসর গ্রহণ করেন। এই বৎসরে
নেপালের কাঠমান্ডুতে প্রথম সার্ক প্রধান
বিচাপতিদের সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন।
১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তথা দেশের
অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তাঁর
শাসনাধীনে বাংলাদেশের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই জানুয়ারি তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে
মৃত্যুবরণ করেন।
পরিবার :
স্ত্রী : ইসলামা রহমান
সন্তানাদি:
পুত্র : শাকিল (জন্মের ৬ মাস পরে মারা যায়।)
কন্যা : বড় মেয়ে রুবাবা রহমান
মধ্যমা মেয়ে নুসরাত হাবিব
ছোট মেয়ে রওনক শিরীন।
প্রকাশনা :
প্রবন্ধ :
ল' অফ রিকুইজিশন (১৯৬৬)
রবীন্দ্র প্রবন্ধে সঞ্জনা ও পার্থক্য বিচার (১৯৬৮)
যথা-শব্দ (১৯৭৪)
মাতৃভাষার স্বপক্ষে রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩)
কোরআন সূত্র (১৯৮৪)
বচন ও প্রবচন (১৯৮৫)
গঙ্গাঋধি থেকে বাংলাদেশ (১৯৮৫)
রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্র ব্যাখ্যা (১৯৮৬)
রবীন্দ্র কাব্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য (১৯৮৬)
অন রাইট্স আন্ড রিমেডিস্
আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬)
কাব্যগ্রন্থ:
নাগালের বাইরে (১৯৯৭)
মনের আগাছা পুড়িয়ে (১৯৯৮)
সাফ দেলের মহড়া (২০০৪)
মানুষের জন্য খাঁচা বানিও না (২০০৭)।
প্রবন্ধসমূহ
রবীন্দ্রনাথ (১৯৮৩)
রবীন্দ্র প্রবন্ধে সংজ্ঞা ও পার্থক্য বিচার (১৯৮৩)
কোরান সূত্র (১৯৮৪)
রবীন্দ্র রচনার রবীন্দ্রব্যাখ্যা (১৯৮৬)
রবীন্দ্রবাক্যে আর্ট, সঙ্গীত ও সাহিত্য (১৯৮৬)
বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক (১৯৯৬)
তেরই ভাদ্র শীতের জন্ম (১৯৯৬)
কলম এখন নাগালের বাইরে (১৯৯৬)
আমরা কি যাব না তাদের কাছে যারা শুধু বাংলায় কথা বলে (১৯৯৬)
বাংলাদেশের সংবিধানের শব্দ ও খণ্ডবাক্য (১৯৯৭)
বাংলাদেশের তারিখ (১৯৯৮)
বং বঙ্গ বাঙ্গালা বাংলাদেশ (১৯৯৯)
সরকার সংবিধান ও অধিকার (১৯৯৯)
মৌসুমী ভাবনা (১৯৯৯)
মিত্রাক্ষর (২০০০)
কোরান শরিফ সরল বঙ্গানুবাদ (২০০০)
চাওয়া-পাওয়া ও না- পাওয়ার হিসেব (২০০১)
স্বপ্ন, দুঃস্বপ্ন ও বোবার স্বপ্ন (২০০২)
রবীন্দ্র রচনায় আইনি ভাবনা (২০০২)
বিষন্ন বিষয় ও বাংলাদেশ (২০০৩)
প্রথমে মাতৃভাষা পরভাষা পরে (২০০৪)
রবীন্দ্রনাথ ও সভ্যতার সংকট (২০০৪)
সাফদেলের মহড়া (২০০৪)
দায়মুক্তি (২০০৫)
উন্নত মম শির (২০০৫)
এক ভারতীয় বাঙালির আত্মসমালোচনা (২০০৫)
কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ (২০০৬)
শিক্ষাথী ও শিক্ষাদাতাদের জয় হোক (২০০৭)
বাংলার সূর্য আজ আর অস্ত যায় না (২০০৭)
উদয়ের পথে আমাদের ভাবনা (২০০৭)
যার যা ধর্ম (২০০৭)
বাংলাদেশের তারিখ ২য় খণ্ড (২০০৭)
রাজার চিঠির প্রতীক্ষায় (২০০৭)
জাতি ধর্মবর্ণনারীপুরুষ নির্বিশেষে (২০০৭)
শিক্ষাথী ও শিক্ষাদাতাদের জয় হোক (২০০৭)
বাংলার সূর্য আজ আর অস্ত যায় না (২০০৭) ও স্বাধীনতার দায়ভার (২০০৭)৷
পুরস্কার
বাংলা একাডেমী পুরস্কার, (১৯৮৪)
একুশে পদক, (২০০৭)
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস গবেষণা পরিষদ পুরস্কার
দক্ষ প্রশাসক পুরস্কার, (১৯৯৬)
ইব্রাহিম মেমোরিয়াল পুরস্কার
অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার
হিউম্যান ডিগনিটি সোসাইটি থেকে সরোজিনী নাইডু পুরস্কার
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার, (২০০৫)
স্পেশাল কনট্রিবিউশন টু হিউম্যান রাইটস পুরস্কার
তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির একজন ফেলো ও লিঙ্ক'স ইন এর বেঞ্চার।