হুমায়ূন
আহমেদ
শৈশবে তাঁর পিতার তাঁর নামের
সাথে মিল রেখে, তাঁর নাম রেখেছিলেন শামসুর রহমান, ডাক নাম ছিল বাচ্চু। পরবর্তী সময়ে
তিনি নিজের নাম পরিবর্তন
করে, হুমায়ুন আহমেদ রাখেন।
তাঁর বাবা চাকুরী সূত্রে দেশের
বিভিন্ন স্থানে বদলী হয়েছেন। এই কারণে হুমায়ূন আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্কুলে
লেখাপড়া করেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বগুড়া জেলা স্কুল থেকে এসএসি পরীক্ষা দেন এবং সে সময়ে
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সব গ্রুপের ভিতর দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি ঢাকা
কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে বিজ্ঞানে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও
এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি
প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন
বিভাগের শিক্ষক
হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ
ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন।
এরপর তিনি দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
বৈবাহিক সম্পর্ক এবং
সন্তানসন্ততি
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গুলতেকিন আহমেদ। এই স্ত্রীর গর্ভে তিনি তিনটি মেয়ে এবং দুটি
ছেলে জন্মগ্রহণ করে। তিন মেয়ের নাম—
বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, শীলা আহমেদ এবং ছেলের নাম নুহাশ আহমেদ। অপর ছেলে অকালে
মারা যায়। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যভাগ থেকে শীলার বান্ধবী এবং তার বেশ কিছু
নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে।
এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টি হয় এবং ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে গুলতেকিনের সঙ্গে
তাঁর বিচ্ছেদ হয়। এই বৎসরেই তিনি শাওনকে বিয়ে করেন। শাওনের গর্ভে তাঁর প্রথম কন্যা
সন্তান মারা যায়। শাওনের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী তাঁর অপর দুই পুত্র সন্তানের নাম
নিষাদ হুমায়ূন ও নিনিত হুমায়ূন।
স্ত্রী গুলতেকিনের সঙ্গে
আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদের পর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে তাঁকে তীব্র প্রতিক্রিয়া
হজম করতে হয়েছে। তিনি ঢাকা শহরের ধানমণ্ডির ৩/এ সড়কে নির্মিত দখিন হাওয়া
এ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্লাটে শাওনকে নিয়ে বসবাস করা শুরু করেন। তিনি ঢাকার অদূরে
গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত বাগান বাড়ী নূহাশ পল্লীতেও বেশিরর ভাগ সময় কাটান।
২০১০ খ্রিষ্টাব্দের তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর
মাসে চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর তিনি ২০১২
খ্রিষ্টাব্দে ঢাকাতে ফিরে আসেন। এরপর এই বৎসরেই তিনি আবার চিকিৎসার জন্য
নিউইয়র্কে যান। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জুলাই স্থানীয় সময় ১টা ২০
মিনিটে নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যু বরণ
করেন।
সাহিত্য ও নাটক এবং
চলচ্চিত্র
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এই সময় তিনি তাঁর
নন্দিত নরকে উপন্যাসটি রচনা করেন। ১৯৭১-খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে
উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয় নি। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার
উদ্যোগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স প্রকাশ করে। এরপর তাঁর প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয়
উপন্যাস 'শঙ্খনীল কারাগার'। এরপর তিনি দ্রুত পাঠকের কাছে উপন্যাসিক হিসাবে জনপ্রিয়
হয়ে উঠেন।
গ্রন্থতালিকা | ||
১৯৭১ অচিনপুর অদ্ভূত সব গল্প অনন্ত নক্ষত্রবিথী অনিল বাগচীর একদিন অন্ধকারের গান অন্যভূবন অপেক্ষা অপরাহ্ন অমানুষ (অনুবাদ) অয়োময় আকাশজোড়া মেঘ আগুনের পরশমণি আঙ্গুল কাটা জগলু আজ আমি কোথাও যাব না আজ চিত্রার বিয়ে আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রন আজ হিমুর বিয়ে আমাদের সাদা বাড়ি আমার আছে জল আমার প্রিয় ভৌতিক গল্প আমি এবং আমরা আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি আমিই মিসির আলী আয়নাঘর আশাবরী আসমানীরা তিন বোন ইরিনা উড়ালপঙ্খী এই আমি এই বসন্তে এই মেঘ রৌদ্র ছায়া এই শুভ্র এই! এইসব দিনরাত্রি একজন মায়াবতী একজন হিমু এবং কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা একি কাণ্ড এবং হিমু এলেবেলে ওমেগা পয়েন্ট কবি কহেন কবি কালিদাস কাঠপেন্সিল কূহক কৃষ্ণপক্ষ কিছুক্ষণ কুটু মিয়া কিছু শৈশব কে কথা কয় কোথাও কেউ নাই গৌরীপুর জংশান চক্ষে আমার তৃষ্ণা চলে যায় বসন্তের দিন চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক ছায়াবীথি ছেলেটা জন্ম জনম |
জয়জয়ন্তী জলকন্যা জলজোছনা জলপদ্ম জলিল সাহেবের পিটিশন জীবনকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হাই স্কুল জোছনা ও জোনাকীর গল্প তন্দ্রাবিলাস তারা তিন জন তিথির নীল তোয়ালে তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে তেঁতুল বনে জোছনা তোমাকে তোমাদের এই নগরে তোমাদের জন্য ভালবাসা দরজার ওপাশে দাঁড়কাকের সংসার কিংবা মাঝে মাঝে তব দেখা পাই দারুচিনি দ্বীপ দি একসরসিষ্ট [অনুবাদ] দিনের শেষ দুই দুয়ারী দূরে কোথাও দেখা না দেখা দ্বিতীয় মানব দেবী দ্বৈরথ নক্ষত্রের রাত নন্দিত নরকে নবনী নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ নিষাদ নির্বাচিত ভূতের গল্প নির্বাসন নিশিথীনি নীল অপরাজিতা নীল হাতি নুহাশ এবং আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ পাখি আমার একলা পাখি পাপ পারাপার পারুল ও তিনটি কুকুর পিপলী বেগম পিলখানা হত্যাকাণ্ড পুতুল পুত্র নিষাদ পোকা প্রথম প্রহর প্রিয়তমেষু ফাউন্টেইন পেন ফীহা সমীকরণ ফেরা বলপয়েন্ট বহুব্রীহি বাঘবন্দী মিসির আলী বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল বাসর বিপদ |
বৃষ্টি ও মেঘমালা বৃষ্টিবিলাস বৃহন্নলা বোতল ভূত ভয় ভয়ংকর ভুতুরে মজার ভূত মধ্যাহ্ন মন্দ্রসপ্তক ময়ুরাক্ষী ময়ূরাক্ষীর তীরে প্রথম হিমু মানবী মিসির আলীর অমীমাংসিত রহস্য মিসির আলী আপনি কোথায় মিসির আলীর চশমা মৃন্ময়ী মৃন্ময়ীর মন ভালো নেই মেঘ বলে চৈত্রে যাব মেঘের ছায়া যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ যখন নামিবে আঁধার যদিও সন্ধ্যা রংপেনসিল রজনী রুপার পালঙ্ক রূপালী দ্বীপে লিলুয়া বাতাস লীলাবতী শঙ্খনীল কারাগার শীত ও অন্যান্য গল্প শুভ্র শূন্য শ্যামল ছায়া শ্রাবণ মেঘের দিন সকল কাঁটা ধন্য করে সবাই গেছে বনে সমুদ্র বিলাস সম্রাট সাজঘর সূর্যের দিন সে আসে ধীরে সে ও নর্তকী সেদিন চৈত্রমাস সৌরভ হরতন-ইস্কাপন হলুদ হিমু কালো র্যাব হিমু হিমু এবং হার্ভার্ড Ph.D.বল্টুভাই হিমু মামা হিমুর একান্ত সাক্ষাৎকার ও অন্যান্য হিমুর দ্বিতীয় প্রহর হিমুর মধ্যদুপুর হিমু রিমান্ডে হিমুর রুপালী রাত্রি হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম |
টিভি নাটক
১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। এটি তাকে
রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে।
তার অন্যতম ধারাবাহিক নাটকগুলো ছিল—
এইসব দিন রাত্রি বহুব্রীহি কোথাও কেউ নেই |
নক্ষত্রের রাত অয়োময় আজ রবিবার |
১৯৮০-এর দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য নাটক রচনা শুরু করেন তিনি। এই মাধ্যমেই তিনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৯০-এর শুরুতে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র 'আগুনের পরশমণি' মুক্তি পায়। এবং মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই চলচ্চিত্রটিও জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর তিনি আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন।
আগুনের
পরশমণি (১৯৯৪) শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০) দুই দুয়ারী (২০০১) চন্দ্রকথা (২০০৩) |
শ্যামল ছায়া
(২০০৪) আমার আছে জল (২০০৮) ঘেঁটুপুত্র কমলা (২০১২) |
এখন পর্যন্ত তাঁর রচিত গল্প অনুসারে যে সকল
চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে, তার তালিকা।
দূরত্ব [পরিচালক : মোরশেদুল ইসলাম]
নন্দিত নরকে [পরিচালক : বেলাল আহমেদ]
নিরন্তর [পরিচালক : আবু সাইদ]
সাজঘর [পরিচালক : শাহ আলম কিরণ]
দারুচিনি দ্বীপ [পরিচালক : তৌকির
আহমেদ]
পুরস্কার লাভ
বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৮১
শিশু একাডেমী পুরস্কার
একুশে পদক ১৯৯৪
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৩, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ
সংলাপ ১৯৯৪)
লেখক শিবির পুরস্কার ১৯৭৩)
মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭)
বাকশাস পুরস্কার (১৯৮৮)
হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০)
জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক
সূত্র: