হরলাল রায়
(১৯৩২-১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ)
 

প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ও গীতিকার।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই এপ্রিল নীলফামারী জেলার সুবর্ণখুলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম চন্দ্রমোহন রায়। মায়ের নাম অঙ্গমণি বর্মনী।

সৈয়দপুর উচ্চবিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পর, বগুড়া মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে ডাক্তার হিসেবে সনদপত্র লাভ করেন। এই বছরেই রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় তুলসীদাস লাহিড়ির
দুঃখীর ঈমান
' নামক একটি নাটক শিশিরকুমার ভাদুরী মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেন। তুলসীদাস এই নাটকের জন্য রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা শেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। এই সময়ে তিনি কানন বালা, প্রমথেশ বড়ুয়া -সহ অন্যান্য অভিনেতা অভিনেত্রীদেরকে রংপুরের আঞ্চলিক উচ্চারণের প্রশিক্ষণ দেন। পরে তুলসীদাস লাহিড়ির সহায়তায় মেগাফোন রেকর্ড কোম্পানি থেকে তাঁর দুটি ভাওয়াইয়া গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়।

 

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত বিভাজনের সময় তিনি রংপুরের নিজগ্রামে ফিরে আসেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তৎকালীন 'রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা'
কেন্দ্রে ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। এই বছর থেকেই তিনি ঢাকায় বসবাস করা শুরু করেন।

 

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে ডিসেম্বর থেকে 'পাকিস্তান পাইলট টেলিভিশন সার্ভিস' শুরু হলে, তিনি টেলিভিশনের নিজস্ব শিল্পী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তিনি চলচ্চিত্রের গান গাওয়া শুরু করেন। এর ভিতরে 'জোয়ার এলো', 'নদী ও নারী', 'কাঁচ কাটা হীরে', 'ধারাপাত' ছবিতে গান গেয়ে প্রংশসা অর্জন করেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়
, তিনি এবং তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথ রায় স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে যোগদান করেন। এই সময় তিনি বেশ কিছু গান লেখেন এবং তাতে সুরারোপ করেন। এই গানগুলো হলো- 'করবা বিচার কাঁয়বা করে রে', ফাঁন্দে পড়িয়া ইয়াহিয়া কান্দে রে', 'আজি কান্দেরে ওই পরান', 'জ্বলছে জ্বলছে দেশ আমার জ্বলছে'

স্বাধীনতার পর
, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে ডিসেম্বর তিনি সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে যোগাদান করেন। এছাড়া তিনি ভারতীয় পরিচালক রাজেন তরফদারের 'পালঙ্ক' এবং ঋত্বিক ঘটকের 'তিতাস একটি নদীর নাম'
ছবিতে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন।

 

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা নভেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।

সন্তানসন্ততি:
    তিন পুত্র: রথীন্দ্রনাথ রায়, রণজিৎ রায়, সুরজিৎ রায়
    তিন কন্যা: প্রতিমা রায়, কল্পনা রায়,
স্বপ্না রায়।



সূত্র: রথীন্দ্রনাথ রায়।