হুমায়ুন ফরীদি
১৯৫২-২০১২ খ্রিষ্টাব্দ।
অভিনেতা ও নাট্য ব্যক্তিত্ব।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ মে ঢাকায় নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম এটিএম নূরুল ইসলাম ও মায়ের নাম বেগম ফরিদা ইসলাম। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন দ্বিতীয়।

তিনি ঢাকার ইউনাইটেড ইসলামিয়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। মাধ্যমিক স্তর উত্তীর্ণের পর চাঁদপুর সরকারী কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হন। এই বিষয়ে তিনি স্নাতক (সম্মান) ও  স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আল-বেরুনী হলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
 

তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যচর্চার সাথে জড়িয়ে পড়েন। ইনি এই বিশ্ববিদ্যলায়ের পুরোধা ব্যক্তিত্ব নাট্যকার সেলিম আল দীনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই তিনি ঢাকা থিয়েটারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৭৬ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নাট্য উৎসব আয়োজনের প্রধান সংগঠক ছিলেন। এ উৎসবের সূত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অঙ্গনে তাঁর ব্যাপক পরিচিতি গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সদস্য হিসেবে তিনি গ্রাম থিয়েটারের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। এই সময়ের ভিতরে ইনি সেলিম আল দীন রচিত কেরামত মঙ্গল, কীর্তনখোলা নাটকে অভিনয়ে করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মঞ্চের পাশাপাশি টেলিভিশনে অভিনয় করে- দর্শকনন্দিত হয়ে উঠেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হলো

নীল আকাশের সন্ধানে (১৯৮২)
দূরবীন দিয়ে দেখুন
(১৯৮২)
ভাঙনের শব্দ শুনি
(১৯৮৩)
ভবের হাট
(২০০৭)
শৃঙ্খল
(২০১০)
বকুলপুর কতদূর
মহুয়ার মন
সাত আসমানের সিঁড়ি 
হঠাৎ একদিন
অযাত্রা
শীতের পাখি
কোথাও কেউ নেই
বিষকাঁটা
পাথর সময়
সমুদ্রে গাংচিল
কাছের মানুষ
মোহনা
 

 

সংশপ্তক নাটকে 'কান কাটা রমজান'

বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ধারাবাহিক সংশপ্তক নাটকে ফরীদির অনবদ্য অভিনয়ের কল্যাণে 'কান কাটা রমজান' চরিত্রটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সর্বশেষ তিনি তখন হেমন্ত  নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে নির্দেশনা দেন এবং পূর্ণ চাঁদের অপূর্ণতায় নামের একটি নাটকে অভিনয় করেন। 

চলচ্চিত্রে তাঁর আগমন ঘটে ফরীদির প্রথম অভিনয় করেন তানভীর মোকাম্মেলের হুলিয়া ছবির মাধ্যমে। চলচ্চিত্রে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করে এক নতুন মাত্রা আনেন। ফরীদি অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্যামল ছায়া, জয়যাত্রা, আহা!, হুলিয়া, একাত্তরের যিশু, দহন, সন্ত্রাস, ব্যাচেলর প্রভৃতি। আশির দশকের শুরুতে হুমায়ুন ফরীদি প্রথম বিয়ে করেন। তবে এ বিয়ে খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। হুমায়ুন ফরীদির প্রথম সংসারে 'দেবযানী' নামের এক মেয়ে রয়েছেন। এরপর তিনি অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে সংসার শুরু করেন। ২০০৮ সালে সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গেও তাঁর বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

তাঁকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ বছর পূর্তি উৎসবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালে মাতৃত্ব ছবির জন্য জাতীয় ইনি চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ ফেব্রুয়ারি (১ ফাল্গুন) সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডিতে মেয়ের বাসায় বাথরুমে পড়ে গিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর