ইউসুফ একেএম
(১৯৫২-২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ)
যুদ্ধাপরাধী, জামায়াতে ইসলামী'র নেতা

বাগেরহাট জেলের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  পিতার নাম মুন্সি আজিম উদ্দিন। 

ছাত্র জীবনে তিনি জমিয়তে তালাব-ই-আরাবিয়ার একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে জামাতে যোগ দেন।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে খুলনা বিভাগের জামাতের আমির ছিলেন।
১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন।
১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে জামাতের প্রাদেশিক জয়েন্ট সেক্রেটারির দায়িত্ব পান।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের সহাকারী আমির নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ (এমএনএ) পদগুলো শূন্য ঘোষণা করে। এই সময় শূন্যপদ পূরণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই সূত্রে ইউসুফ শরণখোলা এলাকা থেকে এমএনএ নির্বাচিত হন।  ১২ই আগষ্ট, তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদে (মালেক মন্ত্রীসভা) রাজস্ব, পুর্ত, বিদ্যুৎ ও সেচমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে সেপ্টেম্বর আব্বাস আলী খান ও মাওলানা ইউসুফসহ মালেক মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকেরা সংবর্ধনা দেন। ১৮ অক্টোবর সংগ্রামে প্রকাশিত হয় স্বাধীনতা বিরোধী বক্তব্য। তিনি বলেন.  ‘দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর হামলার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের পেছনে আমাদের সাহসী জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকবেন।’

এই বৎসরে একই সাথে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সশস্ত্র রাজাকার  বাহিনী গঠন কারার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে,  জামায়েত ই-ইসলামী'র পূর্ব পাকিস্তান শাখার সহকারী আমির হিসেবে এর সংগঠকের দায়িত্ব পান। এই বহিনীর সদস্যদের পাকিস্তানী সেনাবহিনী প্রশিক্ষণ দেয়। এছাড়া তিনি বৃহত্তর খুলনার শান্তি কমিটির আহবায়ক ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি  মাসের শেষের দিকে, দালাল আইনে অন্যান্য প্রায় ৩৭ হাজার যুদ্ধাপরাধীর সাথে তাঁকেও গ্রেফতার করা হয়। এই সময় অনুষ্ঠিত বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড লাভ করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার সূত্রে তিনি ৫ই ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান।

এই সময়
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের শীর্ষ পঞ্চাশ জন যুদ্ধাপরাধীদের লিস্টে দ্বিতীয় নাম হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী বিরোধী গণআন্দোলনের সময়, কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে জাতীয় গণতদন্ত কমিশনে গঠিত হয়।  ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে মার্চ এই কমিশন থেকে প্রকাশিত দ্বিতীয় দফার তদন্ত প্রতিবেদনে ৮ যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে মাওলানা ইউসুফের নাম ছিল।

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের
২২ এপ্রিল জামায়াতের এই নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত চূড়ান্ত করে তদন্তকারী সংস্থা। ১২ই মে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনালের আদেশের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ধানমণ্ডির ১০/এ রোডের ৩৭/এ নম্বর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁকে র্যাব-২-এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ
ইউসুফের বিরুদ্ধে ১১১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনসহ মোট ২ হাজার ৩৪৬ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে জব্দ তালিকার ৬ জন সাক্ষীসহ ৭১ জন সাক্ষী করা হয়েছে। ইউসুফের বিরুদ্ধে ১৫টি অভিযোগে কমপক্ষে ৭০০ জনকে গণহত্যা, ৮ জনকে হত্যা, ২০০ হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত, কমপক্ষে ৭০০ বাড়ি-দোকানপাট লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এই অভিযোগের সূত্রে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জানুয়ারি তদন্ত শুরু হয় এবং ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ই এপ্রিল তদন্ত সম্পন্ন হয়।

মৃত্যু
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত রায় প্রকাশের আগেই ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারি কারগারে মৃত্যুবরণ করেন।