জগদীশচন্দ্র
বসু, স্যার
জগদীশ চন্দ্র বসু (নভেম্বর ৩০, ১৮৫৮ – নভেম্বর ২৩, ১৯৩৭) বিজ্ঞানী।
তাঁর
গবেষণার প্রধান বিষয়
ছিল উদ্ভিদ ও তড়িৎ চৌম্বক।
১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর
তারিখে জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে
জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁর
পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান ছিল বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত বিক্রমপুর
পরগণার রাঢ়িখাল গ্রামে। তাঁর বাবা ভগবান চন্দ্র বসু
ছিলেন তৎকালীন ফরিদপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
ইনি তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে।
এখানকার শিক্ষা সমাপ্ত করে সেন্টজেভিয়ার্স কলেজ থেকে বিএ পাশ
করেন।
১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে ডাক্তারি পড়ার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে ডাক্তারি পড়া ছেড়ে দিয়ে তিনি কেম্ব্রিজের ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন এবং এই কলেজ থেকে প্রকৃতি বিজ্ঞানে পাশ করেন। এরপর ইনি লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাশ করেন। এরপর কলকাতায় ফিরে এসে প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অস্থায়ী শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার চাকুরিটি তিনি পেয়েছিলেন বড়লাট বাহাদুরকে ধরাধরি করে। কিন্তু একে তো এটি ছিল অস্থায়ী তার উপর ভারতীয় হওয়ায় সেখানে তার বেতন নির্ধারণ করা হল ইউরোপীয় অধ্যাপকদের বেতনের অর্ধেক। এই অন্যায় বৈষম্যের প্রতিবাদ করে, দীর্ঘকাল তিনি কোন বেতন না নিয়েই শিক্ষকতা করে যান এবং অনেক ইংরেজ অধ্যাপকদের থেকে অধিক দক্ষতা প্রদর্শনে সমর্থ হন। এতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করে। তার তিন বছরের বকেয়া মাইনে পরিশোধ করে দেয়া হয় এবং এর সাথে তার চাকুরিটিও স্থায়ী হয়ে যায়। তখন থেকেই ইউরোপীয় ও ভারতীয় অধ্যাপকদের বেতনের বৈষম্য দূরীভূত হয়। ইউরোপীয় শিক্ষকদের অনেকেই মনে করতেন ভারতীয়রা বিজ্ঞান শিক্ষাদান এবং গবেষণা কাজের উপযুক্ত নয়।
১৮৮২ সালে বঙ্গ সরকারের বৃত্তি নিয়ে অবলা
মাদ্রাজ (বর্তমান চেন্নাই) যান পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। সেখানে চিকিৎসাবিজ্ঞান অধ্যয়ন
শুরু করলেও অসুস্থতার কারণে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হন।
১৮৮৭ সালে জগদীশচন্দ্র বসুর সাথে ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের কন্যা অবলার বিয়ে হয়।
১৮৮৭ সালে বিজ্ঞানী
হের্ৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক
তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছিলেন। এ নিয়ে
আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার
আগেই তিনি মারা যান। জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫
মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরী করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার
প্রথম আঠারো মাসের এই গবেষণার বিষয়
লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়।
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের অধ্যাপক ফাদার লাফোঁ একটি
ফনোগ্রাফ কলকাতায় আনেন। এই সূত্রে ফাদার লাফোঁর
সাথে জগদীশচন্দ্র বসু এই যন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেন।
এই সময় এই বিষয়ে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা চলমান ছিল এবং একে একে এদের
উন্নয়নকৃত উন্নতর পণ্য বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসা শুরু হয়েছিল। তাই লাফোঁ
এবং জগদীশচন্দ্রের গবেষণা শেষ পর্যন্ত পরিত্যাক্ত হয়েছিল।
এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র
ধরেই লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তাকে ডিএসসি ডিগ্রী প্রদান করে। তার
এই গবেষণা কর্মগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ইংল্যান্ডের লিভারপুলে বক্তৃতা দেয়ার
জন্য ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েশন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এই বক্তৃতার সাফল্যের পর তিনি
বহু স্থান থেকে বক্তৃতার আমন্ত্রণ পান। এর মধ্যে ছিল রয়েল ইন্সটিটিউশন, ফ্রান্স
এবং জার্মানি। সফল বক্তৃতা শেষে ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে তিনি সস্ত্রীক দেশে ফিরে
এসেছিলেন।
তাঁর
অন্যান্য
আবিষ্কারের মধ্যে উদ্ভিদের বৃদ্ধিমাপক যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, উদ্ভিদের দেহের
উত্তেজনার বেগ নিরুপক সমতল তরুলিপি যন্ত্র রিজোনাষ্ট রেকর্ডার অন্যতম। জগদীশ
চন্দ্রের স্ত্রী অবলা বসু ছিলেন একজন বিদূষী ডাক্তার ও শিক্ষাবিদ। তিনি র
ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাংলা ভাষায় ছোটদের বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য
জগদীশ চন্দ্র 'অব্যক্ত' নামে একটা বই লিখেছিলেন।
১৯৩৭ সালের
২৩ শে
নভেম্বর ইনি কলকাতায়
মৃত্যুবরণ করা।
নাইটহুড, ১৯১৬
রয়েল সোসাইটির ফেলো, ১৯২০
ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য, ১৯২৮
ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস-এর ১৪তম অধিবেশনের সভাপতি, ১৯২৭
লিগ অফ ন্যাশন্স কমিটি ফর ইনটেলেকচুয়াল কো-অপারেশন -এর সদস্য
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ সাইন্সেস অফ ইন্ডিয়া-এর প্রতিষ্ঠাতা
ফেলো। এর বর্তমান নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সাইন্স একাডেমি।
রচনাবলী:
অব্যক্ত
Responses in the Living and Non-living
(১৯০২)
Plant Responses as a Means of Physiological Investigations
(১৯০৬)
Comparative Electrophysiology (১৯০৭)
Physiology of the Asent of Sap (১৯২৩)
Physiology of Photosynthesis (১৯২৪)
Nervous Mechanism of Plants (১৯২৫)
Collected Physical Papers (১৯২৭)
Motor Mechanism of Plants (১৯২৮)
Growth and Tropic Movement in Plants (১৯২৯)