ক্লারা জেটকিন
জার্মান মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক এবং 'নারী অধিকার' আন্দোলনের বিশিষ্ট নেত্রী।
১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুলাই তারিখে জার্মানির স্যাক্সোনি (Saxony) 
প্রদেশের ওয়াইডোরায়ু (Wiederau) 
নামক গ্রামে। এঁর পিতা গটফ্রাইড আইজেনার (Gottfried 
Eissner) ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক 
এবং ধর্মপ্রাণ প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চ সংগঠক। কিন্তু মা জোসেফিন ভিটালে আইজেনার ( 
Josephine Vitale Eissner) 
ছিলেন লেইপজিগের সম্ভ্রান্ত এবং সুশিক্ষিত বর্গেইস পরিবারের মেয়ে। 
 
|  | 
| ক্লারা জেটকিন (বামে), পোল্যান্ডের রোজা লুক্সেমবার্গ (১৯১০) | 
সে সময়ে জার্মানিতে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ 
খুব বেশি ছিল না। তারপরেও তিনি লেইপজিগের একটি কলেজে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ 
পেয়েছিলেন। আর এ বিষয়ে তিন লেইপজিগের মাতৃকুল থেকে সহায়তা পেয়েছিলেন। শৈশবে জেটকিন 
শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করলেও, অচিরেই তিনি সমাজতান্ত্রিক আদর্শে 
বিশ্বাসী হয়ে উঠেন। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তাঁর সাথে এই সময় বিশেষ যোগাযোগ গড়ে 
উঠেছিল জার্মানির নারী আন্দোলন এবং শ্রম-আন্দোলনের সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর সাথে। ১৮৭৫ 
খ্রিষ্টাব্দে Ferdinand Lassalle-এর 
গঠিত ADAV 
এবং  August Bebel 
ও Wilhelm Liebknecht 
এর গঠিত 
SDAP 
একত্রিত হয়ে গঠিত হয়েছিল সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি 
{Socialist Workers' Party (Sozialistische 
Arbeiterpartei, SAP)}। ক্লারা এই নবগঠিত দলে
যোগদান করেন 
১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। 
 
এর 
কিছুদিন পর তিনি রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা মার্ক্সবাদী বিপ্লবী এবং তাঁর অন্যতম বন্ধু 
ওসিপ জেটকিন (Ossip Zetkin)-কে 
বিবাহ করেন। ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম সন্তান ম্যাক্সিম জেটকিন জন্মগ্রহণ করেন। 
পেশায় তিনি চিকিৎসক ছিলেন। দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন কোনস্টানটিন জেটকিনের জন্ম হয় ১৮৮৫ 
খ্রিষ্টাব্দে। ক্লারার সম্পাদিত নারী বিষয়ক পত্রিকা 
Die Gleichheit (Equality) 
শেষের দিকে কোনস্টানটিন তাঁকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের 
জানুয়ারি মাসে যক্ষ্মা রোগে তাঁর স্বামী ওসিপি মৃত্যুবরণ করেন। 
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে এই দলের নাম পরিবর্তিত হয়ে নতুন নাম হয়- সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক 
পার্টি অফ জারমানি (Social 
Democratic Party of Germany (SPD) । 
এই দলে থাকাকালীন সময়ে তাঁর সাথে রোজা লুক্সেমবার্গের 
বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এবং জার্মানীর নারী আন্দোলনে ইনি এই বান্ধবীকে গভীরভাবে 
পেয়েছিলেন। ইনি নারীর অধিকার এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষে অত্যন্ত সোচ্চার ছিলেন। 
নারী সমাজকে জাগ্রত করার লক্ষ্যে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত 
দলের নারী বিষয়ক পত্রিকা Die Gleichheit 
(Equality) সম্পাদনা করেন। 
১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে দলের নারী বিষয়ক বিভাগ "Women's 
Office" প্রতিষ্ঠিত হলে, ইনি এই বিভাগের নেতৃত্ব 
গ্রহণ করেন। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দ দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কর্মজীবী নারী 
সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় কোপেনহেগেন শহরে। এই সভায় ১৭টি দেশের শতাধিক নারী-প্রতিনিধি 
যোগদান করেন। এই সম্মেলনে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক দলে নারী-কার্যালয়ের (Women's 
Office) নেত্রী হিসাবে যোগদান করেন
আন্তর্জাতিক 
নারী দিবসের একটি খসড়া প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবে তিনি বলেন, প্রতি 
বৎসরে একই দিনে প্রত্যেকটি দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করতে হবে। একই সাথে ৮ 
মার্চ 'আন্তর্জাতিক নারী দিবস' নিজে পালন করেন। 
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দল থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে 
কোনো আন্দোলন করা যাবে না। এর প্রতিবাদে ইনি, কার্ল লিয়েবক্নেচ্ট, রোজা 
লুক্সেমবার্গ এবং দলের আরও কিছু প্রাভশালী সদস্যবৃন্দ 
SPD থেকে সরে আসেন। 
যুদ্ধকালীন সময়ে  যুদ্ধ-বিরোধী কার্যক্রম ও আন্দোলন করার জন্য তিনি বেশ 
কয়েকবার গ্রেফতার হন। যুদ্ধ-বিরোধী কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য 
তিনি ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে বার্লিনে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারীদের নিয়ে 
যুদ্ধ-বিরোধী সম্মেলন করেন। ১৯১৬ সালে গঠিত  
Spartacist League and the Independent Social 
Democratic Party of Germany (USPD) 
এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে কেপিড {KPD 
(Communist Party of Germany) } প্রতিষ্ঠিত হলে 
তিনি এর সাথে সম্পৃক্ত হন এবং ১৯২০ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাইখস্ট্যগে ( 
Reichstag) এই দলের তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯২০ 
খ্রিষ্টাব্দে তিনি লেনিনের একটি সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারটির শিরোনাম ছিলো-
The Women's Question। 
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি KPD-র 
কেন্দ্রীয় অফিসের সদস্য ছিলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি দলের 
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯২১ থেকে ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক 
কমুনিষ্ট কার্যক্রমের এক্সিকিউটিভ পদে ছিলেন। এর ভিতরে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান 
বাম সংগঠন Rote Hilfe-এর 
সভাপতি হিসাবে নির্বাচিতা হন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে প্রবীন সদস্য হিসাবে রাইখস্ট্যাগের 
চেয়ার-ওম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এ্যাডলফ হিটলারের 
National Socialist German Workers Party 
ক্ষমতায় এলে রাইখস্ট্যাগের জার্মানির কমুনিষ্ট পার্টি 
নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে চলে যান। ১৯৩৩ 
খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন তারিখে মস্কোর নিকটবর্তী 
Arkhangelskoye-তে 
তিনি মৃত্য বরণ করেন। মস্কোর ক্রেমলিনে তাঁর মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়। 
তথ্য সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Clara_Zetkin
http://www.marxists.org/archive/zetkin/
http://www.spartacus.schoolnet.co.uk/GERzetkin.htm