কছিম উদ্দিন
লোকসঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার ও সুরকার।

১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ, (কড়িগ্রামের এ্যাডভোকেট এ, জেড, এম আছাদ সাহেবের মতে) বাংলাদেশের বর্তমান লালমনির হাট জেলার তিস্তা নামক রেলওয়ে ষ্টেশনের নিকটবর্তী তিস্তা নদীর পাড়ের রতিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ছমির উদ্দিন। মায়ের নাম কছিরন নেছা (ছমির উদ্দিনের দ্বিতীয় স্ত্রী)। উল্লেখ্য, তাঁর একমাত্র আপন বড় বোনের নাম ছিল ছবিরন নেছা। ছোট বেলায় কেউ কেউ তাঁকে 'ভাকা' নামে ডাকতো। রংপুরের স্থানীয় ভাষায় ভাবা পিঠাকে 'ভাকা' বলা হয় হয়। এই পিঠা তাঁর অত্যন্ত প্রিয় ছিল। এই কারণে, ছোটো বেলায় তাঁর জন্মস্থানের মানুষ তাঁকে 'ভাকা' বলে ডাকতো। তাঁর গায়ের রঙ কালো ছিল বলে কেউ কেউ তাঁকে 'কালু' বলেও ডাকতো। পরে ডা. মতিয়ার রহমানের (জনৈক স্থানীয় চিকিৎসক) স্ত্রী জহুরা খাতুন তাঁর (কছিম উদ্দীনের মায়ের নামানুসারে) নাম রাখেন কছিম উদ্দিন।
 
ছোট বেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত ডানপিটে স্বভাবের ছিলেন। বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে সাঁতার কাটা, ঝাঁপ দিয়ে উঁচু পাড় হতে নিচে নামা, গাছে গাছে পাখির ছানা খুঁজে বেড়ানো অথবা গাছের ছায়ায় বা নদীর ধারে গলা ছেড়ে গান গাওয়া ছিল তার নিয়মিত কাজ। শৈশবে তাঁর পিতা মারা যাওয়ার পর, বৈমাত্রেয় ভাইদের সাথে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠে। সাংসারিক কাজকর্মের প্রতি তার উদাসীনতা এবং সঙ্গীতের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসাই তাঁকে তাঁর পরিবারের কাছে অপ্রিয় করে তোলে। ভাইয়েরা তাঁকে 'গিদাল' (ব্যাঙ্গার্থে গায়ক) বলে কটাক্ষ করতো। সে সময়ে বৈমাত্রেয় বড় ভাইদের কাছে থেকে গালি-গালাজ খাওয়া বা  মারধর ছিল তাঁর কাছে নিয়মিত ব্যাপার। সে সময় তাঁর গানের প্রতিভা ও অন্যদিকে তার দুঃখ দেখে ডা. মতিয়ার রহমান তাঁকে নিজের বাড়ীতে নিয়ে আসেন। এই বাড়িতে তিনি গরু ছাগল দেখাশুনা করেতন। এই বাড়িতে তাঁর প্রথম কলের গান শোনার অভিজ্ঞতা হয়। তিনি কলের গান শুনে সেকালের জনপ্রিয় গানগুলো শিখেছিলেন। ডা. মতিয়ার রহমান তাঁকে স্কুলে ভর্তি করে দিলেও, তিনি বেশিদিন পড়াশুনা করতে পারেন নি। তাঁর গান শুনে স্কুলের উপরের ক্লাসের ছাত্র এবং শিক্ষকরা প্রশংসা করতেন। স্কুলের ছাত্র-শিক্ষরা ছাড়াও স্থানীয় লোকেরা তাঁকে গান করার উৎসাহ দিতেন। অনেক সময় গ্রামের বধূরাও গান শোনার জন্য তাঁকে ডেকে নিতেন।

স্কুলে পাঠ শেষ না করেই তিনি গ্রাম্য পালা গানের দল
'আজো গীদালের দল'-এ দোয়ারি (কৌতুক অভিনেতা) হিসেবে যোগ দেন এবং অতি অল্প সময়ের ভিতর তিনি সুনাম অর্জন করেন। এই দলে দোয়ারিপনার ভিতর দিয়ে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি লাভ করেন। এই সূত্রে সে সময়ের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী নগেনচন্দ্র কুশানী তাঁকে তাঁর দলে যোগ দেয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। এই দলে থাকার সময় তিনি নগেনচন্দ্রের ভাই-ঝি শ্যামলিনী দেবী'র (বিমলা) প্রেমে পড়েন। পরে এই কারণেই তাঁকে ঐ দল ত্যাগ করতে হয়। এরপর তিনি স্থানীয়ভাবে সুপরিচিত রজনীকান্তের দলে যোগ দেন।

রেকর্ডের গানের সূত্রে তিনি আববাস উদ্দিনের ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন আগেই। অনেকের পরামর্শে আব্বাস উদ্দীনের সাথে দেখা করার জন্য তিনি জলপাইগুড়ি যান। এই সময় আববাস উদ্দীন কোলকাতায় থাকার কারণে তাঁর সাথে দেখা হয় নি। আর্থিক সংকটের কারণে তিনি কিছুদিন জলপাইগুড়ির টুকরী বাগান নামক স্থানে চা বাগানের শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। পরে তিনি আবার নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। বাড়িতে ফিরে আবার সেই অনাদর, অবহেলা, নির্যাতন, ঘৃণায় তাঁর মন বিষিয়ে উঠলো। ওই সময় সেনাবাহিনীতে লোক নেয়ার খবর প্রকাশিত হয়। বাড়ি ছেড়ে তিনি সেনাবহিনীতে যোগদান করেন। কিন্তু বেশিদিন সেখানে মন বসাতে পারলেন না। ফলে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে কিছুদিন বেকার থাকেন।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে তিনি রংপুরে আনসার বাহিনীতে যোগদান করে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুড়িগ্রাম শহরে এসে কিছুদিন আনসার প্রশিক্ষক ও সঙ্গীত শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন তিস্তায় আসেন। এই উপলক্ষে আববাস উদ্দিনও গান গাওয়ার জন্য তিস্তায় আসেন। এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অনুরোধে যুবক কছিম উদ্দিন গান গাওয়ার অনুমতি পান। এই অনুষ্ঠানে তিনি আববাস উদ্দিনের গাওয়া কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। সে সময়ে তিনি হারমোনিয়াম বাজাতে জানতেন না বলে
আববাস উদ্দিনই তাঁর সাথে হারমোনিয়াম বাজিয়েছিলেন। গান শুনে আববাস উদ্দিন মুগ্ধ হন এবং তিনি তাঁর ঢাকার বাসার ঠিকানা দিয়ে কসিম উদ্দিনকে ঢাকায় আসতে বলেন। সে সময় আববাস উদ্দিন ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান পাবলিসিটি মিউজিক ডাইরেক্টর। কছিম উদ্দিন ঢাকা এসে আববাস উদ্দীনের কাছে কিছুদিন গানের তালিম নেন এবং ঢাকা রেডিওতে সঙ্গীত শিল্পীর পরীক্ষায় দিয়ে পাশ করেন।

১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে জুলাই তিনি প্রথম রেডিওতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। উল্লেখ্য, এই সময় ঢাকা বেতার কেন্দ্র ছিল নাজিম উদ্দিন রোডে। এরপর থেকে ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বেতারে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সে সময় বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে শিল্পী সাহিত্যিক সমাবেশে তিনি নিয়মিত যোগদান করতেন।

১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি গান লিখতে শুরু করেন। এই বৎসরের নির্বাচনে মুসলিম লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় গান গেয়ে 'কোকিল কণ্ঠী' নামে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯৫৭/৫৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হোলখানা ইউনিয়নের ধরলার ওপারে অবস্থিত বড়াইবাড়ী চড়ের আছমত উল্লাহ ব্যাপরির জ্যেষ্ঠ কন্যা গোলাফুন নেছা'র সাথে তাঁর বিয়ে হয়।

১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে পরপর দুটি সাইক্লোন হয়। এই ঝড়ে  ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যের জন্য তিনি হারমোনিয়াম
নিয়ে 'ভিক্ষে দাও হে পুরবাসী' গানটি গেয়ে দোকানে দোকানে অর্থ সংগ্রহ করেছেন।

১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে পাক-ভারত যুদ্ধে মুজাহিদ বাহিনীর উদ্দেশ্যে নিজের লেখা 'সাবাস মুজাহিদ ভাইয়ারে' এবং 'আমরা আজাদ আমরা বীর, জিন্দা মোদের উচ্চ শির, কাজ করে যাই জেন্দেগীর, মানি না ভাই ঝড় তুফান' গানগুলি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেয়েছেন। পাকিস্তান আমলের ২৩শে মার্চ বা ১৪ই আগষ্ট ভোর ৪টায় ট্রাকে করে মাইকে কবি গোলাম মোস্তফার রচিত সে আমলের বিখ্যাত গান 'পাকিস্তান সে পাকিস্তান, সে পাকিস্তান' গেয়ে কুড়িগ্রাম শহরে প্রদক্ষিণ করেন।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি নিজের লেখা গান গাইতে শুরু করেন। উল্লেখ্য, ওই বৎসরেই তিনি বেতারকেন্দ্রের গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।

১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে 'হিজ মাষ্টারস ভয়েজ' কোম্পানীতে প্রথম নিজের লেখা গান তাঁর কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়। এ ব্যাপারে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন তাঁকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। পরবর্তীতে রূপবান খ্যাত সিনেমা পরিচালক সালাউদ্দিন সাহেবের গ্রামোফোন কোম্পানীতে তাঁর অনেকগুলো গান রেকর্ড করা হয়। এই সময় তিনি ২৪টি নিজের লেখা গান রেকর্ড করেন। তাঁর সাথে সহযোগী শিল্পীরা ছিলেন দোতরা-বাদক নমরুদ্দিন, রওনোক আরা রাসেল। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি টেলিভিশনে ভাওয়াইয়া গান নিয়মিতভাবে পরিবেশন করেছেন।

১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে, রাজশাহী বেতার কেন্দ্র থেকে রংপুর বেতার কেন্দ্রে আসেন এবং এই বেতারকেন্দ্রে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গান পরিবেশন করেছেন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকের অসহযোগ আন্দোলনের সময় রংপুর শহরে অসহযোগ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়
রংপুর বেতার কেন্দ্রে সংগ্রামী গান পরিবেশনের কারণে, তিনি তৎকালীন সরকারের রোসানলে পড়েন। ২৫শে মার্চের পরে রংপুর বেতার থেকে জনৈক শুভাকাঙ্ক্ষী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁকে আত্মগোপন করতে বলেন। প্রথমে তাঁর পরিবার আশ্রয় নেন হোলখানা ইউনিয়নের নয়ারহাটের অক্ষয় বাবুর বাড়িতে। এই সময় তাঁর সাথে ছিল অন্ধ দোতরা বাদক ও গায়ক নমুরুদ্দিন। সেখানে নিরাপদ মনে না করায়, কয়েকদিন পর তিনি সপরিবারে ধরলা নদীর ওপাড়ে (বড়াইবাড়ির চর) মল্লিক মণ্ডলের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর এখানে থেকে তিনি ফুলবাড়ি থানার দারোগার কোয়াটারে আশ্রয় নেন। এই সময় থেকে তিনি সক্রিয় মুক্তিযুদ্ধের সামিল হন। এই সময় ফুলবাড়ি থানাতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল এবং তিনি ওই ক্যাম্পেই সপরিবারে থাকতেন। এই সময় তিনি মুক্তিবাহিনীর সাথে থেকে নানারকম দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর পরিবারকে ফুলবাড়ি মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে রেখে ১৮ই এপ্রিল ভারতে চলে যান। সেখানে সংগ্রামী জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধের অনুপ্রেরণার জন্য নিজে গান রচনা করে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ও উদ্বাস্তু শিবিরে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

এর কিছুদিন পর তিনি কুচবিহার জেলা শহরে যান এবং সেখানে কুড়িগ্রাম শহরের স্নেহভাজন দুই শিল্পী বলাই পাল ও নাট্যকার দেবব্রত বকসীর সাথে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল সাংস্কৃতিক মুক্তি পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন। হিজ মাস্টার ভয়েজ-এর শ্রী হরিষচন্দ্র পাল
কছিম উদ্দিনের গান শুনে অভিভূত হন এবং এ কোম্পানিতে গান রেকর্ড করার জন্য সুপারিশসহ সনদপত্র প্রদান করেন। মে মাসের প্রথম দিকে কোলকাতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য আয়োজিত সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর ৭ই মে হিজ মাস্টার ভয়েজ কোম্পানিতে ২টি গান রেকর্ড করান। গান দুটি হলো'সোনার বাংলার মানুষগুলি' ও 'জাগরে বাংলাবাসী ভাই'। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কুচবিহার জেলার দীনহাটায় এক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে কছিম উদ্দিন তাঁর সম্মানার্থে একটি স্বরচিত গান পরিবেশন করেন। এই গানটি ছিল 'আমার ভারতবাসী ভাই/তোমার গুণের সীমা নাই'। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর এই গান শুনে আনন্দে অভিভূত হয়ে তাঁর নিজের গলার ফুলের মালা খুলে কছিম উদ্দিনের গলায় পরিয়ে দিয়ে সম্মানিত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষে তিনি দেশে ফিরে আবার আগের মতোই গান লেখা এবং গাওয়া অব্যাহত রাখেন।

যুদ্ধের সময় কছিম উদ্দিনের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সৈন্যরা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। ফলে যুদ্ধের পর পরই দেশে তাঁর পরিবরের জন্য কোনো আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা ছিল না। এই সময় ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙা ইউনিয়নের বালারহাট গ্রামের মোঃ দেলওয়ার হোসেন তাঁদের আশ্রয় দেন। দেলওয়ার হোসেন-এর আশ্রয়ে তাঁর পরিবার প্রায় দুই মাস অতিবাহিত করেন। এই সময় দেলওয়ার হোসেন তাঁর পরিবারের সকল খরচ নির্বাহ করেন।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভবনে জাতীয় লোকসঙ্গীত সম্মেলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্যে লেখা 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর ভাই'- গানটি পড়ে বঙ্গবন্ধু কছিম উদ্দীনের ডায়রীতে অটোগ্রাফ দেন।

১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক কছিম উদ্দিনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন এবং একই সাথে তিনি তাঁর ৫টি ভাওয়াইয়া গান রেকর্ড করে নিয়ে যান। একই বৎসরে 'একেতো গরমের দিন, কাটুয়া মশার প্যানপ্যানী' এই গানটিসহ ১৭ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার বিবিসি থেকে প্রচারিত হয়।

১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে কছিম উদ্দিনের স্বকণ্ঠ গীত. স্বরচিত এবং স্বসুরারোপিত ১২টি গানের প্রথম অডিও ক্যাসেট বের হয়।  ১৩ মে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করা এবং দ্বিতীয় ক্যাসেটে গান গাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা রওনা হন। কিন্তু পথে বগুড়াতে বাস দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। অচৈতন্য অবস্থায় স্থানীয় লোকজন তাঁকে বগুড়া মোহম্মদ আলী হাসপিটাল ভর্তি করেন। স্বাস্থ্যের কিছুটা উন্নতি হলে, তাঁকে কুড়িগ্রাম সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এখান থেকে তিনি শারীরীকভাবে কিছুটা সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরেন। কিন্তু তিনি তাঁর সুমধুর কণ্ঠ চিরকালের মতো হারিয়ে ফেলেন। তারপরেও তিনি বিভিন্ন আসর ও বেতার টেলিভিশনে গান পরিবেশন করতে থাকেন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বিশেষ শ্রেণীর তালিকাভুক্ত শিল্পী হন।

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ আগষ্ট ভোরে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে, তাঁর নিজ বাড়ীতে মৃত্যবরণ করেন।

২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ এপ্রিল তাঁর গুণগ্রাহীরা কুড়িগ্রামের খলিলগঞ্জে ''কছিম উদ্দিন সঙ্গীত নিকেতন' নামে একটি গানের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

কছিম উদ্দিন-এর সন্তান

  • প্রথম সন্তান : মোঃ গুলজার হোসেন নৌবাহিনীতে চাকুরী করতেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। তিনি ভাল তবলাবাদক।
  • দ্বিতীয় সন্তান : কোহিনুর বেগম খুব ভাল ভাওয়াইয়া ও নজরুল সঙ্গীত গাইতেন।
  • তৃতীয় সন্তান : উম্মে কুলছুম বিউটি। প্রথম জীবনে সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। পরে সঙ্গীত জগত থেকে সরে আসেন।
  • চতুর্থ সন্তান : মোঃ গোলাম মোস্তফা বাবলু। উঁচুমানের ভাওয়াইয়া শিল্পী। তিনি বাংলাদেশ বেতার, রংপুর ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী।
  • পঞ্চম সন্তান : নাসিমা বেগম লাকি। রংপুর বেতারের ভাওয়াইয়া শিল্পী।
  • ষষ্ঠ সন্তান : নাছরিন নাহার লাভলি। বাংলাদেশ বেতার, রংপুর-এর শিল্পী।
  • সপ্তম সন্তান : মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জেহাদ। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের একজন নিয়মিত শিল্পী। পিতার অনুকরণে ভাওয়াইয়া গানে তার পারদর্শিতা সর্বজনগ্রাহ্য।
  • অষ্টম সন্তান : মোঃ গোলাম রব্বানী আজাদ। সঙ্গীতের সাথে যুক্ত নন।
  • নবম সন্তান : কামরুন নাহার কলি রংপুর বেতারের ভাওয়াইয়া শিল্পী।

তথ্য :
মোঃ গুলজার হোসেন
জেসমিন বুলি